|
|
|
|
ডোমকলে ‘অস্ত্র কারখানা’ থেকে মিলল গুলি, পিস্তল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ডোমকল ও বহরমপুর |
রীতিমতো আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা খুলে ব্যবসা শুরু করেছিল ডোমকল থানার মোরারিপুরের ইব্রাহিম মণ্ডল। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে মোরারিপুরের ওই বাড়িতে হানা দিয়ে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রের দুই কারিগরকেও গ্রেফতার করেছে। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে দু’টি পিস্তল, ৫টি ম্যাগজিন, ১২৫ রাউন্ড গুলি-সহ আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির বেশ কিছু সরঞ্জাম। ধৃত তিন জনের মধ্যে ইব্রাহিম মণ্ডল ছাড়াও রয়েছে বিহারের মুঙ্গের জেলার মফ্ফসল থানার মহম্মদ ফৈয়ম আলম ও মহম্মদ সাকিল আলম। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুর্শিদাবাদ-লালবাগ) মৃণাল মজুমদার বলেন, “ইব্রাহিম বাড়িতে কারখানা খুলে অস্ত্র ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। ওই কাজের জন্য বিহার থেকে কারিগর নিয়েও আসা হয়েছে জানতে পেরে পুলিশ মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ইব্রাহিম-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে। তল্লাশি চালিয়ে প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। পরে বাড়ির উঠোনের মাটি খুঁড়ে অস্ত্র ভাণ্ডার উদ্ধার হয়।”
ওই অস্ত্র সম্ভার উদ্ধারে ইব্রাহিমের সাড়ে তিন বছরের মেয়ের সাহায্য নেয় পুলিশ। গোটা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছাড়া কিছুই পায়নি, তখন চকোলেট দিয়ে ইব্রাহিমের মেয়ের কাছ থেকে উঠোনে মাটির নিচে অস্ত্র লুকিয়ে রাখার কথা পুলিশ জানতে পারে। ওই রাতেই মাটি খুঁড়ে ১২ বোর মাসকেটের গুলি-সহ বিভিন্ন বোরের ১২৫ রাউন্ড গুলি, ৫টি ম্যাগজিন, দুটি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। এএসপি মৃণাল মজুমদারের নেতৃত্বে ডোমকল মহকুমা পুলিশ অফিসার-সহ ৫০ জনের পুলিশ বাহিনী মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ওই তল্লাশি চালায়। |
|
অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম। নিজস্ব চিত্র। |
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, অস্ত্র কারিগর হিসেবে ফৈয়ম ও সাকিলকে ভাড়া করে নিয়ে আসে ইব্রাহিম। ওই কাজের জন্য পাঁচ দিন আগে তারা ডোমকলে ইব্রাহিমের বাড়িতে এসে ওঠে। তার ১৫ দিন আগে ইব্রাহিম মুঙ্গের গিয়েছিল। ওই অস্ত্র-কারিগরদের সঙ্গে গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্র পিছু ৪০০ টাকা চুক্তি হয়েছিল। এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে দৌলতাবাদ থানা এলাকায় স্টেইনগান বিক্রি করতে এসে পুলিশের জালে ধরা পড়ে ইব্রাহিম। পরে তার জেল হেফাজত হয়। মাস তিনেক আগে জামিনে মুক্তি পেয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ইব্রাহিম নতুন করে অস্ত্র-কারবার শুরু করে।
অস্ত্র-কারখানা খুলে ইব্রাহিম দীর্ঘ দিন ধরে বেআইনি অস্ত্রের কারবার করলেও প্রাণের ভয়ে প্রতিবেশীরা কেউই মুখ খুলতে সাহস পেত না। তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসার বলেন, “গত ১০ অগস্ট ইসলামপুরের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন মৌলবী নামে এক অস্ত্র-কারবারিকে গ্রেফতার করে রানিতলা থানার পুলিশ। সেই সময়ে ধৃত সাইফুদ্দিনের কাছ থেকে অনেক কার্তুজ উদ্ধার হয়। ধৃত সাইফুদ্দিনকে জেরা করেই পুলিশ ইব্রাহিমের খোঁজ পায়।” পুলিশ ওই রাতে বাড়িতে হানা দিলে অভিযুক্তরা বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সফল হয়নি। পুলিশ তাদের ধরে।
তবে অস্ত্রের কারবার ডোমকল মহকুমা এলাকায় কোনও নতুন ঘটনা নয়। প্রায় প্রতি বাড়িতেই অস্ত্র থাকাটাই এই এলাকার রেওয়াজ। রাজনৈতিক বা পারিবারিক যে কোনও বিবাদে ওই আগ্নেয়াস্ত্র বেরিয়ে পড়ে। মৃণালবাবু বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের দু-মাস আগে থেকেই ডোমকলের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩০টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। এছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে ২০০টি বোমা। বেশ কিছু বোমার মশলা ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামও মিলেছে।” ডোমকলে পুলিশ সক্রিয় হলেই আরও বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হলেই ডোমকলের বাসিন্দারা জানান। |
|
|
|
|
|