|
|
|
|
ঘাটাল প্লাবিতই, অন্যত্র অবস্থার উন্নতি পশ্চিমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কোনও লক্ষণ নেই বুধবারেও। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের অন্যত্র--কেশপুর ও সবংয়ে পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। আবার পিংলার কিছু গ্রামে নতুন করে জল ঢুকেছে। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের বক্তব্য, “ঘাটাল বাদে অন্য এলাকাগুলিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ঘাটালেও পরিস্থিতি মোকাবিলার বাইরে নয়। নতুন করে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে না। জলাধার থেকেও বিপুল হারে জল ছাড়ার কোনও খবর নেই। ফলে সামগ্রিক ভাবে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।”
এরই মধ্যে ভেঙে যাওয়া কংসাবতী নদীবাঁধের অবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে সেচ দফতরের আধিকারিকরা মঙ্গলবার বিকেলে দাসপুরের বিহারিচকে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান প্লাবিত এলাকার মানুষ। ঘণ্টা দু’য়েক তাঁদের ঘেরাও করে রাখা হয়। শারীরিক নিগ্রহেরও চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত দাসপুর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে সেচ-আধিকারিকদের উদ্ধার করে। মহকুমা সেচ-আধিকারিক নমিতা সরকার জানিয়েছেন, দফতরের কর্মীদের হেনস্থার বিষয়টি নিয়ে থানায় জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, দাসপুর-১ ব্লকের এই বিহারিচকেই কংসাবতী নদীবাঁধ ভাঙার ফলে বুধবারেও সড়বেড়িয়া ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকার কুড়ি-বাইশটি গ্রামে নতুন করে জল ঢুকেছে। ব্লকের নাড়াজোল ও রাজনগর পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ গ্রামও জলমগ্ন। জলমগ্ন নন্দনপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতের সবক’টি গ্রামও। বুধবার সড়বেড়িয়ার দু’টি পঞ্চায়েত নতুন করে প্লাবিত হওয়ার দরুণ সামগ্রিক ভাবেই ঘাটাল মহকুমায় বন্যা-পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঘাটাল ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েত এলাকায়। প্রায় আড়াইশো গ্রাম পুরোপুরি জলের তলায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। শুধু ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু দশ দিন ধরে ঘাটালের সঙ্গে মেদিনীপুর, চন্দ্রকোনা ও আরামবাগের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। এ দিকে দীর্ঘ দিন গ্রামে জল জমে থাকায় পানীয় জলের সঙ্কট চলছে। দূষিত জলপানের ফলে জলবাহিত নানা রোগও ছড়াচ্ছে। গ্রামে বিষধর সাপের উপদ্রবও বাড়ছে। প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন মুখে ত্রাণ-বিলির কথা বললেও জলমগ্ন অনেক গ্রামেই ত্রাণ পৌঁছয়নি। ক্ষোভে ফুঁসছেন মানুষ। বাঁধ ভাঙার ফলে প্লাবিত এলাকার অবস্থা খুবই শোচনীয়। কারণ, আচমকা গ্রামে জল ঢোকার ফলে দাসপুর-১ ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েতের শতাধিক গ্রামের মানুষ জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু জায়গায় আগেভাগে চলে যাওয়ার সুযোগ পাননি। পর্যাপ্ত নৌকাও মিলছে না বলে প্লাবিত এলাকা থেকে অভিযোগ আসছে। জলমগ্ন বাসিন্দাদের বক্তব্য, জুনে প্রথম বার বন্যার সময়েই ঘাটাল মহকুমার শিলাবতী, কংসাবতী, ঝুমি নদীর বাঁধে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছিল। প্রশাসনের গড়িমসিতেই বাঁধ মেরামতি হয়নি। ফলে এই অগস্টে নদীতে ফের জল বাড়তেই নদীবাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে। একের পর এক এলাকা প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে।
বুধবারেও বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়েছে জেলা জুড়েই। কেলেঘাই, শিলাবতী, কংসাবতী, ঝুমি নদীর জলও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে। পিংলা ব্লকের নারাথা-সহ কয়েকটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ বার বন্যায় ৪টি পুরসভা ও ১৭টি ব্লকের দেড়শোরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতের সতেরোশো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অংশত ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ছাব্বিশ হাজারেরও বেশি। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি। ধান, পাট ও সব্জি চাষেরও ক্ষতি হয়েছে। দেবগ্রামে নতুন প্রধান। শালবনির দেবগ্রাম পঞ্চায়েত এ বার তৃণমূলের দখলে এল। আগেই তৃণমূলের আনা অনাস্থায় হেরে গিয়েছিলেন সিপিএমের প্রধান। বুধবার ছিল নতুন প্রধান নির্বাচন। প্রধান নির্বাচিত হন তৃণমূলের অবনী দেবসিংহ। রাজ্যে পরিবর্তন আসার পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে এই নিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে পালাবদল হল। |
|
|
|
|
|