বিতর্কে প্রধান শিক্ষিকা
বেলপাহাড়ির সেই স্কুলে ফের ঝঞ্ঝাট
বার খবরে বেলপাহাড়ির ‘রাষ্ট্রীয় আদিবাসী আবাসিক উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’। এবং এ বারও খবরে আসার পিছনে সেই প্রধান শিক্ষিকাকে ঘিরে বিতর্কই। প্রধান শিক্ষিকা তপর্ণা বিশ্বাসকে ‘বরখাস্ত’ করার দাবি উঠেছে ফের। বুধবার থেকে স্কুলের সামনে অনির্দিষ্টকাল অবস্থান-বিক্ষোভও শুরু করেছেন পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকেরা। বিক্ষোভের জেরে এ দিন স্কুলের পঠন-পাঠনও বন্ধ হয়েছে। তপর্ণাদেবী নিজে অবশ্য সোমবার স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরেই সেই যে কলকাতায় গিয়েছেন, এখনও ফেরেননি॥
আদিবাসী মেয়েদের জন্য রাজ্যের একমাত্র সরকারি আবাসিক স্কুল এটি। স্কুলটির যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর। আদিবাসী মেয়েরা এখানে নিখরচায় হস্টেলে থেকে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে। তাদের বইপত্র, পোশাক-আশাকের খরচও দেয় রাজ্য সরকার। বর্তমানে আবাসিক ছাত্রী-সংখ্যা ৩৭৫।
২০০৬-এর মার্চে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বে আসেন তপর্ণাদেবী। তার পর থেকেই স্কুল পরিচালনায় ‘তুঘলকি আচরণে’র ধারাবাহিক অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। বুধবার থেকে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করা পড়ুয়া-অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষিকার জন্যই স্কুলটি সার্বিক সঙ্কটে। বস্তুত, তপর্ণাদেবীর বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে বারে বারেই প্রশাসনিক মহলেও অভিযোগ জানিয়েছেন পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা। ২০০৭-এ তপর্ণাদেবীর হাত থেকে স্কুলের প্রশাসনিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বেলপাহাড়ির বিডিওকে সেই দায়িত্ব অর্পণও করেছিল প্রশাসন। তবে স্কুল-পরিচালনার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষিকার হাতেই থেকে যায়। চলতি বছরের গোড়ায় তপর্ণাদেবী দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত থাকায় স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশ এবং নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। সেই অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান তথা ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক সি মুরুগানের উপস্থিতিতে কমিটির এক সভায় সহশিক্ষিকা মিতা বিশ্বাসকে ‘টিচার ইন চার্জ’ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ফিরে এসে তপর্ণাদেবী টিচার-ইন-চার্জকে কোনও কাজই করতে দেননি বলে অভিযোগ। তাঁর সব কাজে তপর্ণাদেবী বাধা দিচ্ছেন বলে প্রশাসনিক মহলেও অভিযোগ করেন মিতাদেবী। স্কুলে ডামাডোলও ক্রমশ বেড়ে চলে।
এই ডামাডোল অবস্থা থেকে মুক্তির লক্ষ্যেই কয়েক বছর আগে অভিভাবকরা ‘শিক্ষা বাঁচাও অভিভাবক কমিটি’ গঠন করেছিলেন। সেই কমিটির সম্পাদক সুবল সোরেন বুধবার বলেন, “প্রধান শিক্ষিকা তপর্ণাদেবীর খামখেয়ালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য পড়ুয়াদের চরম মাশুল দিতে হচ্ছে। বেশির ভাগ দিনই বাইরে ‘অন ডিউটি’ দেখিয়ে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন প্রধান শিক্ষিকা। হস্টেল ও স্কুলটির বেহাল অবস্থা। সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করছে, অথচ চরম অব্যবস্থার মধ্যে আদিবাসী মেয়েদের এখানে রাখা হয়েছে।” ১৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও স্কুল ও হস্টেলের পরিকাঠামো উন্নয়নের কোনও কাজ হয়নি, শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীর বহু পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও নতুন নিয়োগে প্রধান শিক্ষিকা উদ্যোগী হননি বলেও অভিযোগ অভিভাবকদের। এ সব নিয়ে কথা বলতে গেলে অভিভাবকদের সঙ্গে তর্পণাদেবী একাধিক বার দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ। এ সমস্ত কারণেই বুধবার থেকে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুবলবাবু।
বস্তুত, প্রধান শিক্ষিকার ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদেরও অভিজ্ঞতা ‘নিদারুণ’। মহকুমাশাসক সি মুরুগানের বক্তব্য, “তপর্ণাদেবীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে তাঁর সুস্থতা পরীক্ষার জন্য পাঁচ মাস আগেই সংশ্লিষ্ট দফতরে সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু জবাব আসেনি।” অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রকল্প আধিকারিক জ্যোর্তিময় তাঁতিও অবশ্য মেনে নিয়েছেন, “প্রধান শিক্ষিকার অপদার্থতা ও অসহযোগিতার জন্যই স্কুলটিতে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরাও বিষয়টি জানিয়েছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.