|
|
|
|
কোথাওই নয়, ঘোষণা মন্ত্রীর |
হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প রদই করল রাজ্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল। তার পরেও প্রস্তাবিত হরিপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘খারিজ’ করে দিল পশ্চিমবঙ্গে সদ্য ক্ষমতাসীন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকার।
একই সঙ্গে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রসঙ্গে নতুন সরকার তাদের নীতিও স্পষ্ট করে দিয়েছে। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বুধবার বিধানসভায় জানিয়েছেন, তাঁরা রাজ্যের কোথাও, কোনও পরমাণু-বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করতে দেবেন না। এ প্রসঙ্গে এক বাম-বিধায়কের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মণীশবাবু পূর্বতন বাম-সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “আপনারা (বামফ্রন্ট সরকার) মানুষকে ভুল বুঝিয়ে হরিপুরে পরমাণু-বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির চেষ্টা করেছিলেন।”
ক্ষমতায় এলে হরিপুর প্রকল্প খারিজ করা হবে, এমন কোনও প্রতিশ্রুতি অবশ্য ভোটের আগে তৃণমূল দেয়নি। তবে দলীয় নির্বাচনী ইস্তেহারে রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণবৃদ্ধির জন্য যে যে ক্ষেত্র বাছাই করে রূপরেখা তৈরির কথা বলা হয়েছিল, তার মধ্যে জল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লাজাত মিথেন, বায়ু (উইন্ড), ঢেউ (টাইডাল) ও সৌর বিদ্যুৎ থাকলেও পরমাণু-বিদ্যুতের কথা ছিল না। অর্থাৎ রাজ্যের নতুন সরকার যে এটিকে অগ্রাধিকার অন্তত দেবে না, তেমন একটা ইঙ্গিত ছিলই। এ দিন তা নিশ্চিত আকার পেল। |
বস্তুত প্রকল্পটি গোড়া থেকেই বিতর্কের আবর্তে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের হরিপুরে পরমাণু-বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার কথা যখন প্রথম ভাবা হয়, তখন থেকেই এলাকার মানুষ মূলত জমির প্রশ্নে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে, যার অভিমুখ ছিল কেন্দ্রের ইউপিএ এবং রাজ্যের তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার। এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া-র (এনপিসিআই) প্রস্তাবিত ১০০ ভাগ কেন্দ্রীয় প্রকল্পটিকে বামফ্রন্ট সরকার প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেওয়ায় রাজনৈতিক কারণে তৃণমূলও সেই আন্দোলনে সামিল হয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, গত লোকসভা নির্বাচনের পরে রাজ্য কংগ্রেসও বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হরিপুর |
বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত |
|
নিয়ে ‘ধীরে চলতে’ অনুরোধ করে। যদিও স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী তখন বলেছিলেন, তাঁরা প্রকল্পটির সম্পূর্ণ বিরোধী নন। ক্ষমতায় এলে বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত হরিপুর নিয়ে রাজ্য সরকার যে একেবারে বেঁকে বসবে, কেন্দ্রীয় পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্তারা বোধহয় তা আন্দাজ করেননি। বরং গত জুনের শেষে কলকাতায় এসে কমিশনের চেয়ারম্যান শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে গিয়েছিলেন, প্রকল্পের জন্য জমি চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। ভূ-প্রযুক্তিগত সমীক্ষাও অনেকটা এগিয়েছে। শাসকদলের ‘আপত্তি’ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে শ্রীকুমারবাবু তখন বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা খুব শিগগিরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন। খোদ সরকারই প্রকল্প নাকচ করে দেবে, এমন সম্ভাবনাকে কার্যত আমলই দেননি তাঁরা। শ্রীকুমারবাবুর বক্তব্য ছিল: সরকার কী ভাবছে না-ভাবছে, তার চেয়েও বেশি জরুরি হল, সাধারণ মানুষ প্রকল্পটিকে গ্রহণ করছেন কি না।
২০০৯-এর শেষে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের রাশিয়া সফরকালে হরিপুরের প্রস্তাবিত পরমাণু-বিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকারি ছাপ্পা পড়ে। রাশিয়ার সঙ্গে যে পাঁচটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে ভারতের চুক্তি হয়, তার অন্যতম ছিল হরিপুর। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট যে ছ’টি পরমাণু চুল্লি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়, তার মধ্যে ছিল হরিপুরের প্রথম পর্বের দু’টি এবং তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামে চারটি। ‘রশঅ্যাটম’ নামে এক রুশ সংস্থাকে হরিপুরে হাজার মেগাওয়াটের ইউনিট-সহ একটি নিউক্লিয়ার পার্ক তৈরির বরাতও কেন্দ্র দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু দিল্লি যেটা বুঝতে দেরি করেছে, রাশিয়া বোধহয় তা অনেক আগেই ধরে ফেলেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জায়গায় পরমাণুকেন্দ্রের জন্য বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করাটা রাজনৈতিক ভাবে যে এ রাজ্যে সবচেয়ে ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় হয়ে উঠতে পারে, তা আগাম আঁচ করেই ‘রশঅ্যাটম’ প্রকল্প সরাতে বিভিন্ন মহলে দরবার শুরু করে। তারা চাইছিল, এটি ওড়িশায় সরিয়ে নেওয়া হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে আরম্ভ করে পরমাণু শক্তি কমিশন সকলেই এ প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। সংসদের গত বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী এ-ও বলেন, এমন সম্ভাবনার কথা তাঁরা ভাবছেনই না! সন্দেহ নেই, এ বার জোট শরিক তৃণমূলের সিদ্ধান্ত মনমোহন সরকারকে নতুন করেই ভাবাবে। |
|
|
|
|
|