|
|
|
|
সিআইডি দফতরে হাজির হলেন সেই ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ |
দিবাকর রায় • কলকাতা |
‘গোপন ডেরা’ থেকে সরাসরি সিআইডি-র প্রধান দফতরে সশরীরে হাজির হলেন মদন সাঁতরা।
বুধবার দিনভর তাঁকে নিয়ে বিস্তর নাটক হল ভবানী ভবনে। সিআইডি-র দাবি, এ দিন ভোরে তাদের দফতরে সশরীরে এসে হাজির হয়েছেন মদনবাবু। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানা এলাকায়। দাসেরবাঁধে কোথায় কঙ্কাল পোঁতা রয়েছে, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে মদনবাবুই তা গ্রামবাসীদের জানিয়েছিলেন। দাসেরবাঁধে কবর দেওয়ার আগে মৃতদেহ একটি আমবাগানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে সিআইডি সূত্রের খবর। ২০০২ সালে ওই আমবাগানটি দেখভালের দায়িত্ব ছিল ওই ব্যক্তির উপরে। তাই মদনবাবুর বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন সিআইডি কর্তারা।
মদন সাঁতরাকে অবশ্য সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি সিআইডি। সন্ধ্যায় তদন্তকারী সংস্থার ডিআইজি (অপারেশনস) কারিয়াপ্পান জয়রামন বলেন, “মদনবাবুর বক্তব্য আমরা শুনছি। ওই ঘটনার তাঁর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার পরে তাঁকে গ্রেফতার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” তবে দিনভর মদনবাবু সিআইডি-কে গণহত্যার দিনের অনেক তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। গত ৪ জুন কঙ্কাল পোঁতার স্থানটি দেখিয়ে দেওয়ার পর থেকেই মদনবাবু ‘নিখোঁজ’ ছিলেন। তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু করে সিআইডি। তবে তদন্তকারী সংস্থার দাবি, বুধবার মদনবাবু নিজেই ভবানী ভবনে হাজির হন। |
মদনবাবুর দেওয়া তথ্যগুলি খতিয়ে দেখে তদন্তের পরবর্তী পর্যায়ে এগোতে চাইছে সিআইডি। তদন্তকারীদের দাবি, সুশান্তবাবু যে ওই ‘গণহত্যা’-র ঘটনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন মদনবাবুর দেওয়া তথ্য থেকে তা ক্রমশই পরিষ্কার হচ্ছে। সিআইডি মদনবাবুর জবানবন্দি রেকর্ড করেছে। সিআইডি-র একটি অংশ মদনবাবুকে রাজসাক্ষী করার পক্ষে। কেননা, মদনবাবু সে দিনের ঘটনার অন্যতম সাক্ষী। তা ছাড়া, তিনি ঘটনায় অভিযুক্তও। তবে অন্য একটি অংশ বলছে, মদনবাবু আদালতে গিয়ে যদি বিগড়ে যান তা হলে মামলার পরিণতি করুণ হবে। গোটা বিষয়টি নিয়ে সাবধানে এগোতে চাইছে সিআইডি। |
মদন সাঁতরা |
|
রাজনৈতিক কারণেই পিয়াশালা গ্রামে ‘গণহত্যা’ হয়েছিল বলে মনে করছে সিআইডি। গত কয়েক দিন ধরে অভিযান চালিয়ে যে তথ্য সিআইডি-র হাতে এসেছে তাতে এমন প্রমাণ মিলেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। জয়রামন বলেন, “আমাদের হাতে নির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলা সম্ভব নয়।” তিনি জানিয়েছেন, ধৃত বিমান ঘোষ ও কালীদাস চৌধুরীর সঙ্গে সুশান্তবাবুর রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে। বিমানবাবুকে সাত দিন ও কালীদাসবাবুকে তিন দিনের হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে সিআইডি। সুশান্ত ঘোষের ভাই প্রশান্ত ঘোষের মোবাইল নম্বর পেলেও তা ‘সুইচ্ড অফ’ রয়েছে। সিআইডি-র অনুমান, নিয়মিত মোবাইল নম্বর বদলে ফেলছেন প্রশান্ত। বিভিন্ন নম্বর থেকে প্রশান্ত আত্মীয়দের ফোন করেছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর। সেই নম্বরগুলি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি সুশান্তবাবুর চন্দ্রকোনা রোডের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অয়্যারলেস সেট দু’টির ‘ম্যানুয়াল লগ’ খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই সেট দু’টি নেপাল থেকে কেনা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। আমেরিকার একটি নামি কোম্পানি-র তৈরি ওই অয়্যারলেস সেট দু’টি যথেষ্ট শক্তিশালী। সেট দু’টি ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরে তৈরি হয়েছিল। প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ওই সেট ব্যবহার করে কথাবার্তা বলা সম্ভব বলে জানিয়েছেন জয়রামন। তাঁর মতে, এ ধরনের সেট কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যায় না। কী জন্য ওই সেটগুলি প্রয়োজন হল, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের সন্দেহে ২০১০ সালে ওই সেটগুলি কেনা হয়েছিল। তারপর থেকে নিয়মিত তা ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিক কী উদ্দেশ্যে ওই সেটগুলি ব্যবহার করা হয়েছে, তা-ও দেখা হচ্ছে। সে বিষয়ে সুশান্তবাবুকে জেরা করা হবে। সেট দু’টি পরীক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ‘চার্জ’ করার পরে ওই সেটগুলির ‘ডেটা’ পাওয়া সম্ভব। কোন ফ্রিকোয়েন্সি-তে তা ব্যবহার করা হত, তা জানা গিয়েছে বলেও সিআইডি সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই বিনা অনুমতিতে ওই সেট দু’টি রাখার অভিযোগে সুশান্তবাবুর বিরুদ্ধে অয়্যারলেস টেলিগ্রাফ আইনের ৬ ধারায় মামলা করেছে সিআইডি। সেই মামলায় বুধবার তাঁকে নিজেদের হেফাজতেও নিয়েছে সিআইডি। অন্য দিকে, বুধবার মহাকরণে গিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের তদন্ত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান ডিজি (সিআইডি) ভি ভি থাম্বি। |
|
|
|
|
|