|
|
|
|
‘দুঃখিত, ৪-০ হচ্ছে’ |
গৌতম ভট্টাচার্য • লন্ডন |
বক্তার নাম মাইক গ্যাটিং। প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ককে তাঁর বোর্ড এখন রেখেছে জুনিয়র পর্যায় থেকে প্রতিভাদের
সিনিয়র টিমের জন্য তুলে আনতে। বকলমে একসঙ্গে কাজ না করলেও তিনি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সহকারী।
বুধবার একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি আনন্দবাজার-কে। |
প্রশ্ন: প্লেয়ার হিসেবে বরাবর আপনি ছিলেন সংগঠন বিরোধী। আজ আপনিই সেই সংগঠনের একটা মুখ। বিচিত্র নয়?
গ্যাটিং: আমি বিদ্রোহী হব বলে তো বিদ্রোহী ছিলাম না। স্ট্রং ছিলাম কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে ছিলাম। ইসিবি তখন তরুণ ক্রিকেটারদের তুলে আনার জন্য এই অফারটা দিল, আমি লুফে নিই। দারুণ লাগছে এই অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার-স্ট্রস জুড়ির সঙ্গে কাজ করতে। টিমের জন্য ওরা যে ওয়ার্ক এথিক-টা তৈরি করেছে সেটা দারুণ। আমার কাজ হচ্ছে এদের জুড়ির সাপ্লাই লাইন ঠিক রেখে দেওয়া। ওদের দেখে আমার নিজের সময়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি আর মিকি স্টুয়ার্টও এ রকমই এক ভাবে ভাবতাম। বলে না, কোচ আর ক্যাপ্টেন হল স্বামী-স্ত্রীর মতো। সংসারটা দু’জনকে একসঙ্গে গড়তে হবে।
প্র: নতুন ইংল্যান্ড টিমের নতুন দর্শন কী?
গ্যাটিং: নতুন দর্শন হল কখনও ইগো ব্যাপারটা মাথাচাড়া দিতে না দেওয়া। কখনও দলগত গর্বকে ধুলোয় মিশিয়ে না দেওয়া। ছোট ছোট জিনিস ঠিকঠাক করা। বেসিক জিনিসগুলো মন দিয়ে করা। এই ব্যাপারটার সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারা যে, আমার টিমে কোনও গ্যারি সোবার্স নেই যে একা জেতাতে পারে। আমাদের যা করতে হবে দলগত ভাবে করতে হবে। পার্টনারশিপে চাপ তৈরি করতে হবে। কী বোলিং, কী ব্যাটিংয়ে। বাইরের যে জিনিসগুলো তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, সেগুলো নিয়ে খামোকা ভাবতে বোসো না। ব্যাটসম্যান হিসেবে তুমি যদি সেঞ্চুরিও পাও, সেখানেই থেমে যেও না। বড় সেঞ্চুরি করে এসো। দলের সেটাই চাই। এজবাস্টনে কুক যা করল। দারুণ ওয়ার্ক এথিক ওদের। আমি মুগ্ধ!
প্র: আপনি বারবার ‘ওদের’, ‘ওরা’ বলছেন। ইয়ান বোথামের মতো কোচের ভূমিকা সম্পর্কে চিরকালীন অনাস্থা প্রকাশকারী কিন্তু বলছেন একবচন। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। বোথাম তো লিখেওছেন, ফ্লাওয়ারের পরিকল্পনায় শুধু নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটা করছে স্ট্রস।
গ্যাটিং: আমি মনে করি না। স্ট্রসেরও যথেষ্ট কৃতিত্ব রয়েছে।
প্র: ভারতীয়দের এমন হাল কেন? ওরা কি ইংল্যান্ডকে যথেষ্ট পাত্তা দেয়নি? বোঝেনি ইংল্যান্ড এত তৈরি হয়ে রয়েছে?
গ্যাটিং: প্লেয়ারদের দোষ দেবেন না। ওরা চেষ্টা করে যাচ্ছে। কে শখ করে অসম্মানিত হতে চায়। কিন্তু ওরা প্রস্তুতির সময়ই পায়নি। ইংল্যান্ড আলাদা দেশ। সড়গড় হতে তিন/চারটে প্র্যাক্টিস ম্যাচ দরকার। সেটা পেল কোথায়? নেটে হয় না এগুলো। আমার তো মনে হয় এ বারের ইংল্যান্ড-গ্রীষ্ম প্রমাণ করে দিয়েছে, এমনকী গ্রেট তেন্ডুলকরেরও ম্যাচ প্র্যাক্টিস দরকার।
প্র: বিশেষজ্ঞরা উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ছেন এ বারের ইংল্যান্ড নাকি সর্বকালের সেরা দল।
গ্যাটিং: হুঁ। দেখলাম শেন ওয়ার্ন লিখেছে, আর একটু উন্নতি করলে এই টিম ওদের অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়ে দিত। জানি না বাবা। তুলনাটা ঠিক হয় না। নিয়ম কত বদলে গেছে। এখন আম্পায়াররা অফস্পিনারের বলে ফ্রন্টফুটে এলবিডব্লিউ দেয়। প্রযুক্তি এসে গিয়েছে। আম্পায়াররা অনেক সাহসী। এই সুবিধে ফ্রেড টিটমাস বা জন এমবুরি পায়নি। তা হলে কে বড় স্পিনার? গ্রেম সোয়ান, না ওরা?
প্র: ‘স্পিনার’ কথাটা শুনে আপনাকে করা ওয়ার্নের ডেলিভারিটা মনে পড়ে গেল। যাকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি। আপনি বোল্ড হন। ভারতীয় দলের দুই ক্রিকেটার হরভজন-সহবাগ মনে করেন ডেলিভারিটা অত্যাধিক হাইপ পেয়েছে। ওটা সচিনকে করা হলে প্যাডল সুইপে পরিষ্কার চার ছিল!
গ্যাটিং: স্বাভাবিক সময়ে সুইপ হয়তো আমিও করতাম। কিন্তু তখন সদ্য ওয়ার্ন আক্রমণে এল। নতুন বোলার। প্রথম বল। কতটা ঘোরাবে, কতটা বল বাঁকবে কিছুই জানতাম না। দু’তিন ওভার পরে একই ডেলিভারি নির্ঘাৎ সুইপ করতাম। কিন্তু ওটা প্রথম বল। লেগস্টাম্পের বাইরে পিচ করে এতটা স্পিন করবে ভাবতেই পারিনি।
প্র: ৭৯ টেস্টে আপনি অধিনায়কত্ব করেছেন মাত্র ২৩ টেস্টে। অথচ ভীষণ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘটনাবহুল গ্যাটিংরাজ। কেন?
গ্যাটিং: আমি স্ট্রং ক্যাপ্টেন ছিলাম বলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওই দুর্ধর্ষ টিমকে আমরা ওয়ান ডে-তে ৩-০ হারিয়েছিলাম। একটা টেস্ট ড্র করি। অথচ টিসিসিবি-র লোকেদের কাছে সাহায্য চেয়ে আমি কখনও পাইনি। আমার আজও ভাবলে দুঃখ লাগে নিজের বোর্ড, যাদের জন্য এত করেছিলাম তারা পাশে দাঁড়ায়নি।
প্র: ইডেনে রিভার্স সুইপ মেরে বিশ্বকাপ ফাইনালে আউটের পর সমালোচনাও করেছিল।
গ্যাটিং: হ্যাঁ, কেউ ভাবেনি সেমিফাইনালে রিভার্স সুইপে রান করেছি। ফাইনালে তার আগে এই শটটা কয়েক বার খেলেছি। এমন সমালোচনা যা আজও চলছে।
প্র: আজও চলছে!
গ্যাটিং: হ্যাঁ, চব্বিশ বছর পরেও কথা শুনতে হয়, স্ট্রোকটা কেন খেলতে গেলে মাইক!
প্র: আর শকুর রানা। এটাও তো তখনকার দিনের বিশাল বিতর্ক। রানা মারা যাওয়ার পর কী মনে হয়েছিল?
গ্যাটিং: খুব খারাপ লেগেছিল। মারা যাওয়ার মতো বয়স হয়নি শকুর রানার। তবে ধুন্ধুমার ওই বিতর্কের পর কথা হয়েছিল উনি ক্ষমা চেয়ে একটা চিঠি দেবেন। এটাই রফা হয় দু’দেশের বোর্ডে। সেই চিঠি আর দেওয়া হয়নি। তবে একটা মস্ত উপকার হয়েছিল সেই ঝগড়ায়। নিরপেক্ষ আম্পায়ার চালু হয়ে গেল শিগগিরই।
প্র: শেষ প্রশ্ন। ওভালে সাধারণত প্রো-ব্যাটিং ট্র্যাক। ঘাসও তো কম মনে হচ্ছে। আপনার পূর্বাভাস?
গ্যাটিং: সাধারণত এত ঘাসও থাকে না। নাহ, মনে হয় না ভারতের কিছু করার আছে বলে। বোলার নেই ওদের। জাহির থাকলে বলতাম না। এখন দুঃখিত ভাবে বলছি, ৪-০ হচ্ছে। |
|
|
|
|
|