|
|
|
|
মারা গেল অসুস্থ কালু, ক্ষোভ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ফালাকাটা |
ঘুমপাড়ানি গুলি করে চিতাবাঘের নখ কেটে দেওয়া হয়েছিল। তার জেরে টানা কুড়ি দিন অসুস্থ থাকার পরে মৃত্যু হল ডুয়ার্সের খয়েরবাড়ি রেসকিউ সেন্টারের চিতাবাঘ কালুর। বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ কালুর মৃত্যু হয়। রাজ্যের বন মন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “বয়সজনিত কারণে চিতাবাঘটি মারা গিয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে। কালুর নখ কাটার ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বন কর্তাদের কাছে আগেই রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। তাঁরা জানিয়েছিলেন কালুর নখ কাটার প্রয়োজন ছিল।” বনকর্তাদের ওই যুক্তিতে দফতরের মন্ত্রী যত সহজে সন্তুষ্ট হয়েছেন কালুর মৃত্যুর খবর পেয়ে ততটাই ক্ষিপ্ত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পরিবেশ প্রেমীরা। বন দফতরের যে সমস্ত আধিকারিকের নির্দেশে চিতাবাঘগুলিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে নখ কেটে দেওয়া হয়, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন তাঁরা। |
|
ছবি: রাজকুমার মোদক। |
এই ঘটনায় কাউকে আড়াল করা হলে বনমন্ত্রীর অপসরণের দাবিতে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত। তিনি বলেন, “যে জন্তু নখ দিয়ে হাড় থেকে মাংস সরিয়ে খায় তার নখ কাটার মত জঘণ্য কাজ করার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না। এখন আমলাদের কথায় মন্ত্রীও গলা মেলাচ্ছেন। এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলে বনমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হব।” শিলিগুড়ির হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “বাঘটি ঘুমপাড়ানি গুলির ধকল সহ্য করতে পারেনি। ঘুমপাড়ানি গুলি প্রয়োগের আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল।” খয়েরবাড়ি রেসকিউ সেন্টারের চিতাবাঘেদের নখ বড় হয়ে যাচ্ছে যুক্তি দেখিয়ে গত ২৮ জুলাই সেখানকার ৮ টি বাঘের মধ্যে ৩টি বাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে নখ ছেঁটে ফেলা হয়। তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে কালু নামে ১৯ বছরের ওই চিতাবাঘ। কালুর স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে পড়ে। হাড় বিহীন মুরগির মাংস দিতে শুরু করেন বনকর্মীরা। কিন্তু কালু তাও খেতে পারছিল না বলে অভিযোগ। নখ ছাটার পাশাপাশি অতিমাত্রায় ঘুমপাড়ানি ওষুধ প্রয়োগ করার জন্য কালু অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে পশু প্রেমী থেকে বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন। খয়েরবাড়িতে জঙ্গলের পরিবেশেই চিতাবাঘগুলিকে রাখা হয়। তা ছাড়া চিতাবাঘেরা নিজেরাই নখ বড় হলে পাথর অথবা গাছের গুঁড়িতে ঘষে নখ ছেটে নেয়। তা-হলে বন দফতরকে চিতাবাঘের নখ কাটার জন্য কেন ঘুমপাড়ানি গুলি করতে হল সেই প্রশ্ন ওঠে। কোচবিহারের ডিএফও ওমপ্রকাশের দাবি, “চিতাবাঘটি নখ কাটার এক মাস আগে থেকে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিল। কালুর বয়সও হয়ে গিয়েছিল। এই মৃত্যুর সঙ্গে নখ ছাটা বা ঘুমপাড়ানি ওষুধ প্রয়োগের কোনও সম্পর্ক নেই।” বন দফতরের চিকিৎসক অশোক কুমার সিংহ বলেন, “বয়সজনিত কারণে চিতাবাঘটির শরীরের বিভিন্ন অংশ কাজ না করার ফলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।” যে চিতাবাঘ ঘুমপাড়ানি গুলি করার আগে থেকেই অসুস্থ ছিল তার নখ কাটার এত প্রয়োজন হয়ে পড়ল কেন হয়ে পড়ল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন সংগঠন। এই ব্যাপারে বন্যপ্রাণী দফতরের আধিকারিকদের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল অতনু রাহা। তাঁর কথায়, “ওই ঘটনা শোনার পর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে কি কারণে বাঘটি মারা গিয়েছে।” সরকারি কর্মচারী সংগঠন স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের (ইউনিফায়েড) জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টপাধ্যায় বলেন, “বন্যপ্রাণি মৃত্যুর রেকর্ড তৈরি করেছেন কোচবিহারের ডিএফও। এই ধরনের ঘটনা আর মানা যায় না। আগামী ২৩ অগষ্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পুরো বিষয় জানিয়ে ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলব।” |
|
|
|
|
|