|
|
|
|
ডিভিসি ফের জল ছাড়ায় আতঙ্ক |
হাওড়ায় বিপন্ন চাষবাস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বন্যায় হাওড়া জেলার তিনটি ব্লকে চাষের বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষক মহল এবং জেলা কৃষি দফতরের আশঙ্কা। ধান তো বটেই, ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা আছে সব্জি চাষেও। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা হতে পারে পর্যালোচনা করতে আজ, বৃহস্পতিবার জেলা কৃষি দফতরে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
ডিভিসি দফায় দফায় জল ছাড়ার ফলে দামোদরের বাঁধ ভেঙে গিয়ে উদয়নারায়ণপুরের ১১টি এবং আমতা ২ ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া, আমতা ১ ব্লকের ৪টি পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছুটা অংশ দামোদরের জলে প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় জমিতে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ার ফলেই চাষের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। এ দিকে, বুধবার রাতে ডিভিসি ফের জল ছাড়বে বলে জানিয়েছেন উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক দেবকুমার নন্দন। ফলে, তিনটি ব্লকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, উদয়নারায়ণপুর, আমতা ১ এবং ২ এই তিনটি ব্লক মিলিয়ে আউশ ধান চাষ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১০০ হেক্টর জমিতে। এই ধানের ফসল ওঠার কথা অক্টোবর মাসে। এই ধানের চারা আগে রোপণ করার ফলে সেগুলি বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। পুরোপুরি ডুবে না-যাওয়ায় আউশ চাষের ক্ষতি কিছুটা কম হবে বলে জেলা কৃষি দফতরের ধারণা।
|
|
উদয়নারায়ণপুরের কাছে খড়িবান এলাকা। বুধবার ছবি তুলেছেন হিলটন ঘোষ। |
কিন্তু অনেকটা ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে আমন চাষের। আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে অনেক বেশি জমিতে। ফলে হাজার হাজার চাষি ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা। জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে আমতা ১ ব্লকের সাড়ে প্রায় ৫০০০ হাজার হেক্টর, আমতা ২ ব্লকের প্রায় ৫০০০ হাজার হেক্টর এবং উদয়নারায়ণপুরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। অনেক জমিতে চারা রোপন করা হয়েছে সবে সবে। এগুলির বেশিরভাগই প্লাবিত হওয়ায় ধান উৎপাদন হবে না বললেই চলে। উলুবেড়িয়া মহকুমা কৃষি আধিকারিক তীর্থঙ্কর মণ্ডল বলেন, “চারার উপরের কিছুটা অংশ কিছুটাও যদি জেগে থাকে তা হলে সেই সেগুলিকে বাঁচানো সম্ভব।” উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকের বিভিন্ন অংশে অবশ্য ঘুরে দেখা গিয়েছে, এতটাই জল উঠেছে যে চারাগুলি আর জেগে নেই। চাষিদের বক্তব্য, তাঁদের সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।
যে সব চারা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে তাদের ক্ষেত্রেও একটা সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। দফতরের এক কর্তা জানান, চারাগুলি জেগে থাকলেও নদীর পলি এসে ধান গাছের গোড়ায় জমে যায়। কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে যদি চাষিরা পলি পরিষ্কার করতে পারেন তা-হলে কিছু চারা বাঁচানো সম্ভব।
সব্জির ক্ষতিও ভাল মতোই হবে বলে জেলা কৃষি দফতরের আশঙ্কা। তিনটি ব্লকে প্রায় ১৩০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে বলে জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পটল, ঢেঁঢ়শ প্রভৃতি। সব্জি চাষ হয় মূলত হয় দামোদরের পাড়ে বেলে মাটিতে। কিন্তু পাড় ভেসে যাওয়ায় দফারফা হয়ে গিয়েছে চাষেরও। প্রশাসন জানায়, ইতিমধ্যেই প্রাথমিক ভাবে বন্যা দুর্গত এলাকায় গিয়ে কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা পরিদর্শন করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা তা জানা যাবে বন্যার জল সরে যাওয়ার পরে। জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই বিপর্যয়ের মধ্যেও ধান-সহ যে সব চারা বাঁচানো সম্ভব সেগুলি বাঁচাতে চাষিদের সঙ্গে পরামর্শ করে কোন প্রক্রিয়া অনুরসণ হবে সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে আজকের বৈঠকে। |
|
|
|
|
|