ডিভিসি ফের জল ছাড়ায় আতঙ্ক
হুগলিতে ত্রাণ নিয়ে সমস্যা
খানাকুলের দু’টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলমগ্ন। ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টিপাতের পরে ডিভিসি এখনও জল ছাড়তে থাকায় আশঙ্কায় আছেন পুড়শুড়া ও আরামবাগ ব্লকের বাসিন্দারা। টানা ন’দিন ধরে জলমগ্ন পরিস্থিতিতে এবং বন্যার আশঙ্কায় মহকুমা প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলিও তটস্থ। মাঝে গত রবিবার এক দিন মাত্র রোদের মুখ দেখা গিয়েছিল। বুধবারও দিনভর বৃষ্টি পিছু ছাড়েনি। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ত্রাণ নিয়ে বানভাসি মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রতিদিন বাড়ছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানীয় জলের সংকট। ডিভিসি-র ছাড়া জলে ডাকাতিয়া খাল উপছে হুগলির হরিপাল এবং জাঙ্গিপাড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে।
খানাকুল ১ এবং ২ ব্লকের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গত ন’দিন ধরে জলবন্দি খানাকুল ২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের ৬৮টি গ্রামের মানুষ। তিনটি নদীর জলের তোড়ে ছন্নছাড়া দশা বহু পরিবারের। কৃষি ক্ষেত্রেও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলে ডুবে আছে চিংড়া, মাড়োখানা, নতিবপুর ১ ও ২, পলাইশপাই ১ ও ২ এবং শাবলসিংহপুর পঞ্চায়েত এলাকা।
শিলাবতী ও দ্বারকেশ্বর ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েতের বন্দর এলাকায় রূপনারায়ণ নদীতে মিশেছে। তার ফলে ওই এলাকায় জলের চাপ রয়েছে প্রবল। দ্বারকেশ্বরের জলে প্লাবিত হয়েছে ধান্যগোড়ি এবং রাজহাটি ১ পঞ্চায়েতের গ্রামগুলি। বাকি অংশ ভাসিয়েছে রূপনারায়ণ।
জলেই জীবন। খানাকুলের রাজহাটি গ্রাম। বুধবার ছবি তুলেছেন মোহন দাস।
গবাদি পশুর খাদ্য ও চিকিৎসা নিয়ে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। মহকুমা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু গবাদি পশুর চিকিৎসা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। খানাকুল ২ ব্লকে ত্রাণশিবিরের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত ১৪টি ত্রাণ শিবিরে হাজার দেড়েক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
ত্রাণ ও স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে। ত্রাণসামগ্রী নিতান্তই অপ্রতুল বলে ক্ষোভ আছে মানুষের। রয়েছে তীব্র জলসঙ্কট। খানাকুলের রাজহাটি পঞ্চায়েতে নৌকো ভাড়া দিয়ে দু’তিন কিলোমিটার দূরে টিউবওয়েল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে বানভাসিদের। প্রশাসনের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে পাউচ প্যাকেটে পানীয় জল বিলি করা হয়েছে। কিন্তু রাজহাটির রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা বাদল বিশ্বাস এবং শুকদেব দলুইয়ের অভিযোগ, “বন্যায় মহকুমার সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ খানাকুলের দু’টি ব্লকে সরকারি বিলি করা পানীয় জল আমরা পাইনি।”
ত্রাণ বণ্টনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। মাড়োখানা, নতিবপুর কাগনান-সহ কয়েকটি জায়গায় দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতিও হয়েছে। ত্রাণ ও স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘খবরদারির’ অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। বুধবার এমনই ঘটনা ঘটেছে খানাকুল ২ ব্লকের রাজহাটি ১ পঞ্চায়েতের রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এখানে এক স্বাস্থ্যকর্মীকে নিগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নারায়ণচন্দ্র দাস নামে ওই ব্যক্তির বক্তব্য, পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের জিতেন সর্দার তাঁর কলার ধরে হেনস্থা করেন। নারায়ণবাবুর কথায়, “উনি ব্লিচিং চেয়েছিলেন। আমরা এক বস্তা মাত্র পেয়েছি। আমাদের বলা হয়েছে, এক বস্তা ব্লিচিংয়ের সঙ্গে চার বস্তা চুন মিশিয়ে বিলি করতে। কিন্তু চুন পাওয়া গিয়েছে দু’বস্তা।” স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা বলে গিয়েছেন, তাঁদের উপস্থিতি ছাড়া যেন ত্রাণসামগ্রী বিলি করা না হয়। জিতেনবাবু বলেন,“হেনস্থা করা হয়নি। আমি বলেছিলাম, গ্রামে বিভিন্ন জায়গায় দূষণ হচ্ছে। ব্লিচিং প্রয়োজন। ওই স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, তৃণমূল নেতার অবর্তমানে তিনি তা দিতে পারবেন না। পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে আমি ওঁকে বলি, বন্যার সময় রাজনীতি করবেন না।” তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ‘খবরদারির’ অভিযোগ অস্বীকার করেন। খানাকুলের রাজহাটিতে ত্রাণের চাল খারাপ, এই অভিযোগে বুধবার অশান্তি হয়েছে। মহকুমাশাসক ওই চাল পাল্টে দেওয়ার আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ত্রাণ প্রসঙ্গে এ দিন আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “খানাকুলের দু’টি ব্লকে বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী দফায় দফায় পাঠানো হচ্ছে। ১২৫ মেট্রিক টন চাল, ৮০ কুইন্ট্যাল চিঁড়ে, ২০ কুইন্ট্যাল গুড়, ৭৫ কেজি বেবিফুড পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া, ত্রিপল তো পাঠানো হচ্ছেই।” মহকুমাশাসক জানান, পুড়শুড়া, আরামবাগ এবং গোঘাটের ২টি ব্লকে প্রয়োজন খতিয়ে দেখে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। গোঘাটে চিঁড়ে-গুড় পাঠানো হয়েছে।” উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুর রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে খানাকুলে বন্যার্তদের মধ্যে শুকনো খাবার বিলি করা হয়েছে।
এ দিকে, ডাকাতিয়া খালের জলে হুগলির হরিপাল এবং জাঙ্গিপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলমগ্ন রয়েছে। হরিপালের দিকনগর, ঝিঙড়েপোতা, খাজুরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। ডাকাতিয়া খাল সংস্কার না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে জাঙ্গিপাড়া এবং হরিপালের বন্যা পরিস্থিতি। জাঙ্গিপাড়ার বহু এলাকায় খালের বুকেই ভেড়ি করে গতিমুখ আটকে মাছ চাষ হচ্ছে। বানভাসি গ্রামবাসীরা বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনেন। এরপরই জাঙ্গিপাড়ার ধনপোতার গ্রামে স্থানীয় বিডিও ও পুলিশ গ্রামবাসীদের সঙ্গে গিয়ে ভেড়ি কেটে খালের গতিমুখ সংস্কারের ব্যবস্থা করেন। হরিপালে মোট ছ’টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে বন্যার্তদের জন্য।
সেখানকার একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে দু’টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। রাজ্য তৃণমূল যুবার সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার হরিপালে বানভাসি মানুষদের মধ্যে শুকনো খাবার বিলি করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.