|
|
|
|
হাওড়ায় নিকাশির হাল ফেরাতে কোর্ট সময় দিল ১০ দিন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মহানগরী কলকাতার অন্যতম মূল প্রবেশপথ হাওড়া। অথচ বর্ষা এলেই সেই হাওড়ায় জল জমে অচল হয়ে যায় রেল ব্যবস্থাও। চলতি মরসুমেও অতিবর্ষণে রেললাইন ডুবে যাওয়ায় একাধিক দিন ট্রেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল হাওড়ায়। এই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্ট বুধবার নির্দেশ দিয়েছে, ১০ দিনের মধ্যে হাওড়া শহরে নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরাতে হবে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ, গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের এলাকায় জল জমার সমস্যা মেটাতে হাওড়ার নিকাশি ব্যবস্থাপনায় যুক্ত সব সংস্থাকে কাজ করতে হবে একসঙ্গে। ১০ দিনের মধ্যে নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কারে প্রয়োজনীয় সব কাজ করে ২৯ অগস্ট আদালতকে জানাতে হবে। হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ এবং বিচারপতি সোমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশের পাশাপাশি পূর্ব রেলকে বলেছে, রেল ইয়ার্ড এবং লাগোয়া রেল আবাসনে জল জমার জন্য দায়ী বামনগাছির রানিঝিল যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করতে হবে।
হাওড়ার নিকাশির মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা (নোডাল এজেন্সি) কেএমডিএ। এ ছাড়া হাওড়া পুরসভা, কেএমডব্লিউএসএ, হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট, সেচ বিভাগ, পূর্ব রেল এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলও শহরের নিকাশি নিয়ে কোনও না কোনও দায়িত্ব পালন করে থাকে। আদালত এ দিন কেএমডিএ-র সিইও বিবেক ভরদ্বাজকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই ছ’টি সংস্থাকে নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবারেই বৈঠক করতে হবে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে হাওড়া শহরের নিকাশির হাল ফেরাতে ওই সাতটি সংস্থাই একযোগে আপৎকালীন ভিত্তিতে কাজ করবে।
হাওড়া শহরের নিকাশি সমস্যার সমাধানের আর্জি জানিয়ে ২০০৫ সালে মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। |
|
সেই মামলার রায়েই এ দিন এই নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। হাওড়া শহরে সম্প্রতি জল জমে মানুষের ভোগান্তি এবং রেললাইনে জল জমে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সুভাষবাবু এ দিন আদালতে নতুন একটি আবেদন পেশ করেন। সেই আবেদনে তিনি জানান, দীর্ঘদিন সংস্কার না-হওয়ায় গভীরতা কমে বর্ষার জল টানার ক্ষমতা হারিয়েছে রানিঝিল। অথচ ওই ঝিলটিই পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের নিকাশির যাবতীয় চাপ সামলায়।
রানিঝিল ঠিকমতো জল টানতে না-পারায় এখন অল্প বৃষ্টিতেই রেল ইয়ার্ড ও লাইনে জল জমে যায়। ডুবে যায় সংলগ্ন রেল আবাসন এলাকাও। চলতি বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে দু’টি শাখারই ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। হাওড়া রেল ইয়ার্ড এবং টিকিয়াপাড়া কারশেডের কাছে লাইনের উপরে হাঁটুজল দাঁড়িয়ে যায়। ফলে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। সুভাষবাবু জানান, রানিঝিল কার্যত পরিত্যক্ত জলাভূমির চেহারা নিয়েছে। নিকটবর্তী লোকো শেডের বর্জ্য মোবিল, ডিজেল এবং অন্যান্য জঞ্জাল ওই ঝিলেই ফেলা হয়। তিনি ছবি তুলে আদালতকে দেখান, ঝিলে কচুরিপানার ফাঁকে যেটুকু জল দেখা যাচ্ছে, সেখানে পোড়া ডিজেল ও মোবিল ভাসছে। তিনি আদালতে জানান, গত শনিবার যখন গোটা হাওড়া শহর বৃষ্টির জলে ডুবে রয়েছে, তখন তিনি গিয়ে দেখেন, নাজিরগঞ্জ খালের লকগেট বন্ধ এবং গেটের উপর দিকের জলস্তর গঙ্গার তুলনায় অন্তত তিন ফুট উঁচুতে। ওই সময় লকগেট খুলে দিলে গোটা হাওড়া পুর এলাকা এবং হুগলি জেলারও কিছু অংশের জল নেমে যেত। লকগেট খোলার জন্য সেখানে সেচ বিভাগের কোনও কর্মীকে খুঁজে না-পেয়ে সুভাষবাবু থানায় এফআইআর দায়ের করেন। আদালতে সেই এফআইআরের প্রতিলিপিও পেশ করেন তিনি।
হাওড়ায় জমা জল বার করে দেওয়ার জন্য কোনার পাম্পিং স্টেশনে যে-ছ’টি পাম্প রয়েছে, তার চারটিই তখন অচল ছিল বলেও আদালতে অভিযোগ করেন সুভাষবাবু। তিনি এ দিন বলেন, “হাওড়ায় জল জমার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এমন একটা সমস্যার সমাধানে কোনও সংস্থাই দায়িত্ব নেয় না। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরে আশা করা যায়, এর সমাধান হবে।” |
|
|
|
|
|