সম্পাদকীয় ২...
অপরিবর্তন
রুদ্ধশ্বাস গতিতে মোটরবাইক চালাইবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার খেসারত দিয়াছে কলিকাতার দ্বাদশ শ্রেণির এক স্কুল-পড়ুয়া। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের উড়াল পুলে দুর্ঘটনার পরেও বেশ কিছু ক্ষণ আহত ছাত্র সুপ্রিয় রায় জীবিত ছিল। কিন্তু তাহাকে ওই অবস্থায় নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পৌঁছাইয়া দেওয়া যায় নাই। উড়াল পুল দিয়া যাতায়াতকারী কোনও গাড়ির চালক বা আরোহী তাহাতে সম্মত হন নাই। এই ঘটনায় দুর্গত, বিপন্ন মানুষের পাশে না-দাঁড়াইবার নাগরিক অমানবিকতাই স্পষ্ট হয়। কলিকাতার নাগরিকদের স্বার্থপরতা ও বিবেকহীনতার প্রশ্নটি তাই এই প্রসঙ্গে আলোচিত হইতেছে। সেই সূত্রে উচ্চারিত হইতেছে ধিক্কার এবং আত্মগ্লানির বয়ানও।
সহনাগরিকদের এই অমানবিকতাকে ধিক্কার জানানোই কিন্তু এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। প্রধান প্রশ্নটি উচ্ছৃঙ্খলতা ও বিধিহীনতার। উড়াল পুল বা বাইপাসের মতো সড়কগুলিতে এই ধরনের মোটরবাইক রেস যাহাতে না ঘটে, তাহা নিশ্চিত করা ট্রাফিক পুলিশের অবশ্যকর্তব্য। এই উড়াল পুলটির উপর প্রায় কখনওই কোনও পুলিশি টহল থাকে না। এমনকী পুলের উপর ওঠার স্থানেও দ্রুত ধাবমান মোটরবাইক নিয়ন্ত্রণ করার কোনও প্রচেষ্টা নাই। বাইক-আরোহীদের মাথায় হেলমেট আছে কি না, তাহাও পুলিশ দেখে না। পুলিশ অবশ্য নিজেই প্রায়শ হেলমেটহীন বাইক-আরোহী! পুলিশের তরফে শিরোস্ত্রাণ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হইলে দুর্ঘটনা হইলেও মৃত্যু হয়তো এড়ানো যাইত। হেলমেট না পরিয়া দ্বিচক্রযান চালানোয় এক ধরনের সস্তা বাহাদুরি আছে, যাহা সদ্য যুবাদের আকৃষ্ট করিতে পারে। কিন্তু বয়স্ক ট্রাফিক সার্জেন্টরাও যখন শিরোস্ত্রাণহীন বাইক-আরোহী হন, তখন বুঝা যায় শৃঙ্খলাহীনতাই ইহার কারণ। এই শৃঙ্খলাহীনতা সমাজের এত গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা যাহাদের কাজ, সেই পুলিশও অবলীলায় তাহা ভঙ্গ করে। স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে নিয়ম না-মানার বাহাদুরি তো আকর্ষণীয় হইবেই। জীবন দিয়া মূল্য চুকাইতে হইতেছে, এই যাহা।
অন্য প্রশ্নটি বিপর্যয় মোকাবিলার। দুর্ঘটনাগ্রস্তকে কত দ্রুত চিকিৎসাস্থলে লইয়া যাওয়া যায়, তাহার বন্দোবস্ত সব সভ্য দেশেই রহিয়াছে। এ ধরনের বিপন্নতায় যে বাইক-আরোহীর মানবিকতা তাঁহাকে দুর্গতের সাহায্যে প্রাণিত করিল, তিনি বারংবার পুলিশেরই প্রচারিত ‘হেল্পলাইন’-এর নম্বর ১০০ ডায়াল করিয়াও কোনও সদুত্তর পান নাই। অন্য প্রান্তে কেহ সেই লাইন তোলেও নাই, কেবল টেপ-করা বার্তা শুনানো হইয়াছে। ইহার জবাবদিহি কে করিবে? সাহায্যকারী যখন তাঁহার নিজের বাইক দিয়া উড়াল পুলের রাস্তা আটকাইয়া আহত দুই ছাত্রকে লইয়া হাসপাতালের কাছে, তখন পার্ক সার্কাসের কাছে ধীর গতিতে আসা একটি ট্রমা-অ্যাম্বুলেন্সকে দেখা যায়, এ ধরনের দুর্ঘটনায় পতিতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্যই যাহার প্রবর্তন। ঘটনার চল্লিশ মিনিট পরেও কেন অ্যাম্বুলেন্স অকুস্থলে পৌঁছায় নাই, তাহার জবাবও প্রশাসনকে দিতে হইবে, কেননা ওই মূল্যবান সময়টা আহত সুপ্রিয়ের প্রাণরক্ষার জন্য অপরিহার্য ছিল। সব মিলাইয়া গোটা ঘটনাটি এক উদাসীন দায়মুক্ত প্রশাসনের চেহারা প্রকট করিয়া তোলে, কলিকাতা যাহার সহিত দীর্ঘ কাল অভ্যস্ত। বুঝা যায়, সব কিছুই অপরিবর্তিত আছে, কোনও কিছুরই কোনও পরিবর্তন হয় নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.