সম্পাদকীয় ১...
লড়াই ও যুদ্ধ
শ্রীকিসন বাবুরাও হজারে যে দাবিটি ছাড়িতে নারাজ, তাঁহার সেই দাবির গোড়ায় গলদ। ভারতীয় গণতন্ত্রে লোকপাল নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজন নাই। বস্তুত, তাহা ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ধারণার বিপ্রতীপ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এক কথা, জনলোকপাল গঠনের দাবি আর এক। শ্রীহজারে দুইটি প্রশ্নকে এক করিয়া ফেলিয়াছেন। তিনি গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষায় অগণতান্ত্রিক ঔষধ ব্যবহারের পক্ষপাতী। তাঁহার সেই দাবিটি, আংশিক ভাবেও, মানিবার কারণ নাই। কারণ, তাহা বিপজ্জনক। তিনি যে পথে সেই দাবি আদায় করিতে চাহেন, সেই পথটি গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনকতর। তিনি সরকারের উপর অনশনের অগণতান্ত্রিক চাপ সৃষ্টি করিয়া তাঁহার দাবি আদায় করিতে চাহেন। ভারতে ঐতিহাসিক কারণে অনশনের রাজনীতির খানিক গৌরব আছে। শ্রীহজারে নিঃসন্দেহে সেই গৌরব সম্বন্ধে সচেতন। কিন্তু তিনি স্মরণে রাখিতে পারেন, বর্তমানে গণতন্ত্রের পরিসরে অনশনের রাজনীতি ভ্রান্ত। গণতন্ত্র তাঁহাকে আলোচনার পরিসর দিয়াছে। তিনি সেই পরিসর ব্যবহার করিতে অস্বীকার করিয়াছেন। যিনি গণতন্ত্রের পরিসরেই বিশ্বাসী নহেন, তিনি কি গণতন্ত্রের পবিত্রতা রক্ষার লড়াইয়ে সেনাপতির ভূমিকার অধিকারী?
শ্রীহজারে নিজেকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিস্পর্ধী করিয়া তুলিয়াছেন। বস্তুত, কেন্দ্রীয় সরকার তাঁহাকে সেই সুযোগ করিয়া দিয়াছে। গত এপ্রিলে তিনি যখন দিল্লির রামলীলা ময়দানে অনশনে বসিয়াছিলেন, তখন তিনি বড় জোর মহারাষ্ট্র হইতে আসা এক রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার অবাক হইয়া দেখিয়াছিল, কী ভাবে তাঁহার সেই অনশন মঞ্চে ক্রমে ভিড় বাড়িল, কী ভাবে শ্রীহজারের উপর প্রচারের আলো আসিয়া পড়িল। সেই অনশনের প্রথম পর্বে নিষ্ক্রিয় থাকা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথম ভুল। শ্রীহজারেকে তখন প্রথমেই অনশন তুলিয়া লইতে বাধ্য করিলে তাঁহার আর দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের এমন প্রতীক হইয়া ওঠা হইত না। সরকারের কর্তব্যবোধের অভাবে শ্রীহজারে সেই সুযোগ পাইয়াছেন। এপ্রিলের অনশনকারী এবং অগস্টের অনশনকারী হজারে, অতএব, দুই ভিন্ন ব্যক্তি প্রথম জন নবাগত, দ্বিতীয় জন ‘জাতীয় নায়ক’। কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম বারের ভুল হইতে শিক্ষা লইয়া দ্বিতীয় বারে অনশনের পূর্বেই শ্রীহজারেকে গ্রেফতার করিল। তাহা সরকারের দ্বিতীয় ভুল। এক জন অকিঞ্চিৎকর রাজনৈতিক কর্মীকে যে ভাবে সামলানো যায়, এক জন ‘জাতীয় নায়ক’-এর ক্ষেত্রে সেই চেষ্টা করা রাজনৈতিক আত্মহত্যার শামিল। ফলে, সরকার এখন অগাধ জলে পড়িয়াছে। নাটকের নিয়ন্ত্রণ, স্পষ্টতই, শ্রীহজারের হাতে।
তবু, কিসন বাবুরাও হজারের সহিত দ্বৈরথটি সাময়িক লড়াইমাত্র। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকৃত যুদ্ধ একটি ধারণার বিরুদ্ধে। ‘এই সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, এবং দুর্নীতির পোষক’ এই ক্রমে সর্বজনীন হইয়া ওঠা ধারণাটির বিরুদ্ধে। এবং, সেই যুদ্ধেও সরকার আপাতত স্বখাতসলিলে। ধারণাটি নিছক দুর্জনের প্রচার, এমন কথা বলা মুশকিল। কমনওয়েলথ্ গেমস হইতে টু জি স্পেকট্রাম, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী বার বার বিপুল আর্থিক দুর্নীতিতে জড়াইয়া পড়িয়াছেন। বিশেষত, সুরেশ কলমডীর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ভূমিকা লইয়া যে প্রশ্ন উঠিয়াছে, তাহাকে উড়াইয়া দিবার উপায় নাই। কাজেই, সরকারকে এই যুদ্ধে নামিতেই হইবে। সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, এই ধারণাটির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হইবার একটিই পথ আছে। তাহার নাম সুশাসন। সেই শাসনের সূচনা প্রধানমন্ত্রীকেই করিতে হইবে। তাঁহাকে কঠোর হইতে হইবে। তাঁহার ব্যক্তিগত সততা এখনও প্রশ্নাতীত, কিন্তু সেইটুকু যথেষ্ট নহে। সরকারের কোনও স্তরেই দুর্নীতি থাকিতে পারিবে না এই কথাটি আপসহীন ভাবে প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। যে কোনও অন্যায়ের প্রতি সম্পূর্ণ অ-সহিষ্ণু হওয়াই তাঁহার কর্তব্য। জোটধর্ম বা অন্য কোনও অজুহাতে তিনি এই ধর্ম হইতে চ্যুত হইতে পারেন না। তাঁহার কোনও চ্যুতি, কোনও দুর্বলতা আরও অনেক কিসন বাবুরাও হজারের জন্ম দিতে পারে। তাহা ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ নহে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.