একুশ বছর পরে সেল টাকা চাইতেই সামনে এল ‘গলদ’
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সেল) যদি রিসিভারের কাছে জমা থাকা তাদের টাকা ফেরত চেয়ে হাইকোর্টের কাছে আবেদন না করত, তবে বিচারপতি সৌমিত্র সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগটাই প্রকাশ্যে আসত না।
সেল কেন শরণাপন্ন হল কলকাতা হাইকোর্টের?
ঘটনার সূত্রপাত ২৮ বছর আগে। ১৯৮৩ সালে। শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে জাহাজে করে ২৫০৪ টন মাল আমদানি করেছিল সেল। কিন্তু মাল খারাপ থাকায় তা নিতে অস্বীকার করে শিপিং কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করে তারা। শিপিং কর্পোরেশন আদালতকে তখন জানায়, ওই মাল তাদের গুদামে রয়েছে, তা বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হোক।
১৯৮৪ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি আর এন পাইন তৎকালীন আইনজীবী সৌমিত্র সেনকে রিসিভার নিয়োগ করেন। হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, যে সংস্থা বেশি দর দেবে তাকেই বেচতে হবে ওই মাল। তা তদারকি করবেন রিসিভার। মাল বিক্রির টাকা রাখতে হবে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের হাইকোর্ট শাখায়। হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া রিসিভার ওই টাকায় হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার সময়ে সৌমিত্র সেন। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পি টি আই
ঘটনার পরে ২১ বছর নিঃশব্দে কেটে গিয়েছে। শিপিং কর্পোরেশনের গুদামে থাকা মাল বিক্রি করে কত টাকা জমা পড়েছে, সে ব্যাপারে কেউ খোঁজ করেনি। সৌমিত্র সেনও ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করেছেন। ২০০৫ সালে রিসিভারের কাছে রাখা টাকা ফেরত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করে সেল। বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত রিসিভারের কাছে নোটিস পাঠান। কিন্তু কোনও জবাব না পেয়ে যে সংস্থা শিপিং কর্পোরেশনের কাছ থেকে গুদামে পড়ে থাকা মাল কিনেছিল, তাদের ডেকে পাঠান বিচারপতি সেনগুপ্ত। ডেকে পাঠানো হয় ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষকেও। দেখা যায়, বিক্রির টাকা ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার হাইকোর্ট শাখায় জমাই পড়েনি।
২০০৬ সালের ১০ অগস্ট বিচারপতি সেনগুপ্ত তাঁর রায়ে বিচারপতি সৌমিত্র সেনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। তাঁর অভিযোগ, বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার পরেও বিচারপতি সেন রিসিভারের পদ থেকে অব্যাহতি চাননি। বিচারপতি সেনগুপ্ত তাঁর নির্দেশে লিখেছিলেন, প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকায় ওই মাল বিক্রি হয়। যে টাকা ২২টি ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে মেটানো হয়। রিসিভার প্রতিটি ড্রাফট সই করে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দু’টি ব্যাঙ্কের দু’টি অ্যাকাউন্টে সেই ড্রাফটগুলি ভাঙিয়েছেন। তার পরে সব টাকা তুলে নিয়ে ২০০০ সালের ২২ মার্চ দু’টি অ্যাকাউন্টই বন্ধ করে দেন।
বিচারপতি সেনগুপ্ত রায়ে লেখেন, রিসিভার যা করেছেন, তা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৫ ধারা অনুযায়ী তছরুপের অভিযোগ থেকে কোনও অংশে কম নয়। নিজের লাভের জন্য তিনি অন্যের টাকা ব্যবহার করেছেন এবং নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কে টাকা না রেখে আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন।
এর পরে সুপ্রিম কোর্ট ওই রায়ের ব্যাখা চেয়ে ডেকে পাঠায় বিচারপতি সেনগুপ্তকে। কাগজপত্র দেখতে চায় তারা। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট। ওই কমিটি সব খতিয়ে দেখে বিচারপতি সেনকে ইমপিচ করার পরামর্শ দেয়। এর পরে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পাঠিয়ে দেয় লোকসভার স্পিকারের কাছে। স্পিকার ফের তা সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠান চূড়ান্ত মতামতের জন্য। কোর্ট বিচারপতি সেনকে ইমপিচ করার পক্ষেই ফের মত দেয়। এর পরেই সংসদে ওই বিচারপতিকে ইমপিচ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.