বেনজির গণ-উন্মাদনার সাক্ষী হল তিহাড়-ফটক
‘রঘুপতি রাঘব রাজা রাম, পতিতপাবন সীতারাম’। তিহাড় জেলের ডিজি অফিসের গেটের সামনে গাইছেন কিরণ বেদী! আর তালে তালে নেচে প্রতিধ্বনি করছে হাজারো উন্মত্ত জনতা।
উন্মত্ত?
কিছুটা তো বটেই। না হলে এমন চাঁদি-ফাটা রোদ অগ্রাহ্য করে, স্কুল-কলেজ-অফিস কামাই করে, কোলের বাচ্চাকে সামলাতে সামলাতে হরিয়ানা, পঞ্জাব এমনকী উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে নাগাড়ে গলা ফাটিয়ে যাবেন কেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ? এমন বিপুল সমাবেশ তিহাড় জেল এর আগে কবেই বা দেখেছে? সদ্য এক বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি পাওয়া রবি রাঠৌর জীবিকার তোয়াক্কা না করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ‘ইন্ডিয়ানস কাম আউট’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে। আগত সাংবাদিককে দৃঢ়তার সঙ্গে যিনি বললেন, “আপনি তো নিজের কাজে এসেছেন। আমি দেশের কাজে এসেছি। দু’টোর মধ্যে তফাৎ আছে।”
দেশের কাজ? শ’য়ে শ’য়ে উড়ছে জাতীয় পতাকা। সঙ্গে যৎপরোনাস্তি ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি। জেলের বন্ধ গেটের সামনে অস্থায়ী ধর্না। আর সেখানে প্ল্যাকার্ড থেকে টি শার্ট সর্বত্র একটাই বার্তা। গাঁধীর নতুন অবতার এসেছেন অণ্ণা হজারের রূপে! বিভিন্ন পোস্টারে এক দিকে গাঁধী, অন্য দিকে অণ্ণা।
জৈল সিংহ থেকে কে আর নারায়ণন এই দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রপতি ভবনের নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে ছিলেন সৎবীর সিংহ। এখন অবসর নিয়েছেন। বুকের সাদা জামায় লেখা ‘ম্যায় অণ্ণা হু।’ সরকারি চাকরি করার সময় মুখ ফুটে বোধহয় কিছু বলতে পারেননি। এখন ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে গিয়েছে!
সৎবীর বললেন, “নেতাদের এ বার ঝুঁকতে হবে সাধারণ মানুষের সামনে। আমরাই নেতাদের বেছেছি, তাঁদের তৈরি করেছি। আজ তারাই আমাদের পয়সা চুরি করছে?”
তিহাড় জেলের সামনে বিক্ষোভে সামিল অণ্ণার সমর্থকেরা। ছবি: পিটিআই
ছাত্র থেকে সমাজকর্মী, বেকার থেকে চাকুরে, গৃহবধূ থেকে ধর্মীয় সংগঠনের সদস্য ‘দেশের কাজে’ অসংখ্য মানুষের তীর্থক্ষেত্র তিহাড়। আবার অণ্ণা-ঢেউ থেকে ফায়দা তুলতে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলও নিঃশব্দে তাদের কর্মীদের পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন অনেকেই। ‘অণ্ণা তুম সংঘর্ষ করো হাম তুমহারে সাথ হ্যায়।’ রাস্তা বন্ধ করে ক্ষিপ্র হাতে পোস্টার আকঁতে ব্যস্ত উত্তমনগর গভর্নমেন্ট স্কুলের বারো ক্লাসের ছাত্ররা। এই প্রথম ওদের স্কুলের জনা চল্লিশ ছাত্র ‘স্কুল পালিয়েছে’ এবং পালিয়ে সটান তিহাড়ে। ক্লাস ছেড়ে আসার জন্য কোনও আফশোস তো নেই-ই বরং বুক ফুলিয়ে বলছে, “দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করাটা আমাদের লক্ষ্য। অণ্ণাজি চেষ্টা করছেন, আমরা তাঁকে সমর্থন করছি। কাল থেকে স্কুলে গিয়ে বাকি ক্লাসগুলিকেও বলব, অণ্ণার আন্দোলনে সামিল হতে।”
সকাল থেকে স্বামী অগ্নিবেশ, কিরণ বেদী অথবা মেধা পাটকর জেল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ধারাবাহিক ভাবে বক্তৃতা দিয়ে গিয়েছেন, গান গেয়েছেন, যথাসাধ্য উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে গিয়েছেন জনতাকে। কিন্তু ঢেউয়ের মতো মানুষ আছড়ে পড়ল তখনই, যখন গেরুয়া-পরিহিত বাবা রামদেবের স্টিল গ্রে রঙের ইনোভা ধীরে ধীরে এগিয়ে এল গেটের দিকে। তাঁর আগে-পিছে ভ্যানের মাথায় ছবি ‘বাবা কালো সাপকে (ব্র্যাকেটে লেখা কালো টাকা!) দমন করছেন।’ অন্তত মিনিট কুড়ির উন্মত্ততা সামাল দিতে একটি ভ্যানের মাথায় চড়ে খানিক ক্ষণ রাজনৈতিক নেতার ঢঙে হাতও নাড়লেন তিনি। তার পর অগ্নিবেশ প্রমুখের সঙ্গে ঢুকে গেলেন গেটের ভিতরে। অণ্ণা-আন্দোলনের পরবর্তী নকশা তৈরি করতে।
দিনের শেষে যখন সমর্থকরা বুঝলেন যে, আজ আর জেল থেকে বেরোচ্ছেন না তাঁদের প্রিয় নেতা, তখন তাঁরা জমায়েত হতে শুরু করলেন যন্তরমন্তর এবং ইন্ডিয়া গেটের কাছে। তার পর ‘দুর্নীতি বিরোধী’ স্লোগান দিতে দিতে সংসদের দিকে যাত্রা। যতক্ষণ না পুলিশের বাধা আসে।
এর পর সরকারের রণকৌশল কী হবে, অথবা বিরোধী রাজনৈতিক দল পরিস্থিতির কতটা ফায়দা তুলতে পারবে সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় দু’দিন ধরে তিহাড় জেল যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেল, সেটা বোধহয় এখনই বলে দেওয়া যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.