সংসদ নয়, অণ্ণার নিশানা কেন্দ্র, বোঝাচ্ছে বিজেপি
ণ্ণা বনাম সংসদ নয়। বরং লড়াইটা অণ্ণা বনাম সরকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গত কাল সংসদে বলার সুযোগ না পেয়ে বিজেপি গোটা বিরোধী পক্ষকে কার্যত ঐক্যবদ্ধ করে। একজোট বিরোধী এবং জনমতের চাপে কাল রাতেই অণ্ণাকে তড়িঘড়ি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও সংসদে বিবৃতি দেন। বিরোধী পক্ষের সকলকেই বলার সুযোগও দেওয়া হয়। বিজেপি নেতৃত্ব এটিকে জয় হিসাবে দেখলেও আজ প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরম থেকে শুরু করে শাসক দলের একাধিক সাংসদ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, সমাজকর্মী অণ্ণা হজারের লড়াই এখন গোটা সংসদের সঙ্গে। লোকপাল বিল এখন সংসদের জিম্মায়। আইন প্রণয়নের অধিকার সংসদেরই। তাই অণ্ণার সাম্প্রতিকতম আন্দোলন আসলে সংসদের সঙ্গেই।
কংগ্রেস এবং সরকার সুকৌশলে আক্রমণের অভিমুখ নিজেদের দিক থেকে ঘুরিয়ে গোটা সংসদের ঘাড়ে ঠেলতে চাইছে। সেই কৌশল সফল হলে বিজেপির রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণ হয় না। তাই সংসদের মর্যাদার কথা তুলে ধরলেও সেই মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ বিজেপি চাপাতে চেয়েছে কংগ্রেস তথা সরকারেরই উপরে। এবং অন্না প্রসঙ্গে আক্রমণের যুক্তি এমন ভাবে সাজিয়েছে, যাতে দুর্নীতি-বিরোধী আক্রমণের নিশানা শুধু কংগ্রেস এবং সরকারই হয়।
তাই সরকারি লোকপাল বিল বা অণ্ণার জনলোকপাল বিলের কিছু ধারা নিয়ে বিজেপি ভিন্নমত হলেও তা নিয়ে এখন উচ্চবাচ্য করছে না। বদলে দলের নেতারা শুধু অণ্ণা ও তার সমর্থকদের প্রতিবাদের অধিকার রক্ষার পক্ষে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধেই সরব হন। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব এবং দুর্নীতি রোধে তাঁর ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কটাক্ষ করেন। পাশাপাশি নাম না করে সনিয়া-রাহুল গাঁধী, চিদম্বরম ও কপিল সিব্বলকেও আক্রমণ করেন।
লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ মনমোহন সিংহের সামনেই অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদের মর্যাদাকে সবার উপরে রাখার কথা বললেও সংসদে বিরোধীদের উপেক্ষা করার রীতি তাঁর সরকারই শুরু করেছে। বিরোধীদের সঙ্গে কথা না বলেই অণ্ণা হজারেদের নিয়ে যৌথ খসড়া কমিটি গঠন করেছে সরকার। আবার সেই অণ্ণাকেই দলের নেতা-মন্ত্রীরা পরে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিহিত করেছেন। সুষমার বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী নিজে মানবাধিকার রক্ষা করার বড়াই করছেন, অথচ বাবা রামদেবের শান্তিপূর্ণ সভায় মাঝরাতে পুলিশি নির্যাতন থেকে শুরু করে বিজেপির যুবমোর্চার উপরে লাঠিচার্জ এবং এখন অণ্ণাকে অনশনে বসতে না দেওয়া সব ক্ষেত্রেই নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।”
গতকাল স্পিকার মীরা কুমার বিরোধীদের বলার অনুমতি দিলেও সংসদীয় মন্ত্রী পবন বনশল তাতে বাদ সাধেন। সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে প্রথম বার স্পিকারের কাছে গিয়ে নালিশ জানান বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। তিনি আজ বলেন, “জরুরি অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইছে সরকার। যারাই সরকারের বিরুদ্ধে সরব হবেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন, তাঁদের উপরেই নির্যাতন হবে। বিরোধী, নাগরিক সমাজের মুখ বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। সিএজি, পিএসির মতো সাংবিধানিক সংস্থার পর এ বার স্পিকারের রায়ের বিরোধিতাও করছে খোদ শাসক দল।” রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির মতে, “সমাজকর্মীরা কখনওই বলেননি, তাঁরা সংসদের বিকল্প হতে চান। তা হলে তাঁদের অভিব্যক্তি প্রকাশের অধিকার কেন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে?” সনিয়া গাঁধীর জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের (এনএসি) সমালোচনা করে জেটলি বলেন, “এনএসি-তে সমাজকর্মীদের তৈরি করা বিলকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে, অথচ সমাজের অন্য অংশ ভিন্ন মত রাখতে চাইলে জেলে পাঠানো হচ্ছে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কংগ্রেসেরই নেতারা (রাহুল গাঁধী) উত্তরপ্রদেশে গিয়ে ধর্না করেন, অথচ সেই ধারা ভাঙার আগেই অণ্ণাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।”
আজ সংসদে সব দল বলার সুযোগ পাওয়ায় লালু প্রসাদের আরজেডিকেও পাশে পেয়েছে সরকার। কালই তারা বাম-বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারকে কোণঠাসা করার কৌশল নিয়েছিল। মায়াবতীর দলকেও পাশে টেনেছে কংগ্রেস। আর অণ্ণাকে ঘিরে কংগ্রেস তথা সরকারের যে দোটানা প্রকট হয়েছে, সেটাকেই খোঁচাতে চেয়েছে বিজেপি। চিদম্বরম ও সিব্বলের মতো আইনজীবী মন্ত্রীদের সমালোচনা করে বিজেপির কটাক্ষ, এই আইনজীবীদের পরামর্শেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বদলে আইন প্রয়োগ করে সঙ্কট মেটাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.