|
|
|
|
গাড়ি-বাসে পৃথক ফল, বিক্ষোভ বিধায়কদেরই |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বিধায়কদের মধ্যে ‘শ্রেণি বিভাজনে’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সরব হলেন বিধায়কেরাই। জনপ্রতিনিধিদের জন্য কেন এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে, এই প্রশ্ন তুলে বিক্ষুব্ধ বিধায়কেরা গাড়ি আটকে দিলেন বিধানসভার গেটে।
বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিলেন সিপিএমের বিধায়কেরা। তবে শাসকজোটের তৃণমূল ও কংগ্রেসের সদস্যদেরও দেখা গিয়েছে। আর সহকর্মীদের বিক্ষোভের জেরে গাড়িতে যাঁরা আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সব শিবিরের বিধায়কেরাই আছেন। বুধবার সন্ধ্যায় বিধানসভার সাউথ গেটে এই ঘটনার সাক্ষী থাকল অফিস-ফেরত জনতা। শেষ পর্যন্ত বিধানসভার মার্শাল ও পুলিশের অনুরোধে বিক্ষুব্ধেরা এ দিনের মতো ফিরে গেলেও সুরাহা না-হলে ফের বিধানসভার দরজা আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গিয়েছেন।
ক্ষোভের সূত্রপাত ‘গাড়িওয়ালা’ এবং ‘গাড়িহীন’ বিধায়কদের মধ্যে ‘বিভাজন’কে ঘিরে। চলতি অধিবেশনে গত ক’দিন ধরেই বিধানসভা ভবনের ভিতরে বিধায়কদের বাস রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। অধিবেশনের শুরুতে তাঁদের নামিয়ে দিয়ে বাস চলে যাচ্ছে। অধিবেশন শেষে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ‘গাড়িওয়ালা’দের গাড়িগুলো আগের মতোই বিধানসভা চত্বরে থাকছে। এ দিন সন্ধ্যায় বেশ কিছুক্ষণ রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রায় ২৫-৩০ জন বিধায়ক। তখন অন্যদের গাড়ি বেরিয়ে যেতে দেখে তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রথমে আটকে দেন কংগ্রেসের প্রবীণ (বিধানসভার প্রবীণতম) বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপালের (চাচা) গাড়ি। তাতে চাচার সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের নাজমুল হক। কংগ্রেসের অজয় দে’র চেষ্টায় তখনকার মতো ওঁরা বেরিয়ে গেলেও বাকি গাড়ি আটকে পড়ে। সিপিএম বিধায়ক তথা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান গাড়ি থেকে নেমে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পিছনে পিছনে আটকে পড়ে নির্মল ঘোষ-সহ তৃণমূল বিধায়কদের গাড়ি।
বাম জমানায় বরাবরই তিনটি সরকারি বাস ভাড়া করে এনে বিধায়কদের শিয়ালদহ-হাওড়া স্টেশন এবং বিধায়ক আবাসে পৌঁছে দেওয়া হত। আগের জমানায় শাসক ফ্রন্টের বিধায়কেরাই বেশি সংখ্যায় ওই বাসের যাত্রী ছিলেন। এখন স্বল্পসংখ্যক বিরোধী বাম বিধায়ক বাসে ফেরেন। শাসকদলের বহু বিধায়কের রকমারি মডেলের গাড়িতে ভরে থাকে বিধানসভা চত্বর। কিন্তু এখন নিরাপত্তার কড়াকড়িতে বাস ভিতরে রাখা যাচ্ছে না। ইডেন গার্ডেন্সের ঠিক উল্টো দিকে, সাউথ গেটে এ দিনের বিক্ষোভের সামনের সারিতে থাকা মম্তেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক চৌধুরী মহম্মদ হেদায়েতুল্লার প্রশ্ন, “গাড়ি কিনতে পারিনি বলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?” জামুড়িয়ার সিপিএম বিধায়ক জাহানারা খানের ক্ষোভ, “যে বিধায়কেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবেন, তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা নেই?” জয়পুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতোর মন্তব্য, “নিরাপত্তার জন্য বাস ঢুকতে পারবে না, অথচ গাড়ি থাকলে অসুবিধা নেই?” আনিসুরও বলেন, বিধায়কদের স্বার্থেই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।
পুলিশ অফিসারেরা বিক্ষুব্ধদের অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন বিষয়টি বিধানসভায় তোলেন। মার্শালও আশ্বাস দেন, তিনি সমস্যার কথা স্পিকারের গোচরে আনবেন। পুলিশের তরফে কর্তব্যরত আধিকারিক পি কে ঘোষ এবং এন চক্রবর্তী পরে বলেন, বিধায়কদের নামিয়ে বাস তিনটে কোথায় পার্ক করা হয়েছিল, তাঁদের জানা নেই। কোনও কারণে সন্ধ্যায় বাস আসতে দেরি হওয়ায় বিপত্তি ঘটেছে। কিন্তু বিষয়টি তাঁদের এক্তিয়ারে নেই।
হেদায়েতুল্লা, জাহানারারা অবশ্য পরিষ্কারই বলেছেন, “এখন ছেড়ে দিলাম। সুরাহা না-হলে বৃহস্পতিবার গাড়ি ঢুকতে-বেরোতে দেব না!” |
|
|
|
|
|