|
|
|
|
পোলিও হার মেনেছে ফুটবলের কাছে |
কেদারনাথ ভট্টাচার্য • কালনা |
রোজ তিনি ফুটবল খেলেন। মনে মনে!
পোলিও আক্রান্ত হয়ে দু’টো পা-ই অসাড়। খেলাধুলো তো দূরের কথা, হুইল চেয়ার ছাড়া চলাফেরাও করতে পারেন না। তাতে অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্র নন কালনার পালপাড়ার বাসিন্দা বাপ্পা পাল। পাড়ার খুদে খেলোয়াড়দের প্রিয় প্রশিক্ষক তিনিই। খেলার সামগ্রী কিনে দেওয়া থেকে প্রশিক্ষণ, সবেতেই এলাকার খুদেদের ভরসা ‘বাপ্পাদা’।
এলাকারই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন বছর কুড়ির বাপ্পা। কালনার অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে ছোটদের ফুটবল প্রতিযোগিতা হলেই সাইডলাইনের ধারে দেখা মেলে তাঁর। শুধু প্রশিক্ষণ দেওয়াই নয়, ছেলেদের জন্য বল, জার্সি, টিফিনির খরচএ সব পকেটের পয়সা থেকেই দেন তিনি। হুইল চেয়ারে চড়ে স্টেডিয়ামে আসেন। তবে সেটি বাইরে রেখে বুকে হেঁটে মাঠে ঢোকেন তিনি। বাপ্পার বাবা পরেশবাবুর চালের ব্যবসা রয়েছে। সাত ভাইয়ের মধ্যে বাপ্পা পঞ্চম। পরিবার ও পড়শিরা জানান, দু’বছর বয়সে পোলিওয় আক্রান্ত হন বাপ্পা। তার পর থেকেই তাঁর সঙ্গী হুইল চেয়ার। তবে ছোট থেকেই তিনি ফুটবলের ভক্ত। ব্রাজিল ও ইস্টবেঙ্গলের খেলা থাকলে তাঁকে টিভির সামনে থেকে নড়ানো মুশকিল। টিউশন পড়িয়েই পাড়ার খুদেদের খেলার জন্য খরচ জোগাড় করেন তিনি। |
|
খুদে ফুটবলারদের সঙ্গে বাপ্পা। |
পালপাড়ার খুদে ফুটবলার প্রসেনজিৎ পাল, সঞ্জিত পালরা বলে, “এলাকায় ভাল মাঠ না থাকায় বাপ্পাদা আমাদের ভাগীরথীর চরে অনুশীলন করায়। প্রতি দিন অনুশীলনের আগে তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী আমরা শরীরচর্চা করি।” আর এক খেলোয়াড় ঈশান রাজবংশীর কথায়, “অনুশীলনে অথবা ম্যাচে ভাল খেললে দাদা যে ভাবে উৎসাহ দেয়, তাতে খেলার ইচ্ছা বেড়ে যায়।” নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও খুদেদের শরীরচর্চা করান কী ভাবে? বাপ্পার উত্তর, “টিভি ও স্থানীয় কোচেদের থেকে কসরৎগুলি শিখে নিয়েছি। নিজে করে দেখাতে না পারলেও বুঝিয়ে দিই, কী ভাবে অনুশীলন করতে হবে।” এ বার নার্সারি লিগে পালপাড়ার প্রশিক্ষক হিসেবে মাঠে দেখা গিয়েছে বাপ্পাকে। দাপটের সঙ্গে খেলে তাঁর প্রশিক্ষণাধীন দলটি সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিল। সেমিফাইনালে হারের পরে দলের খুদে খেলোয়াড়দের পিঠে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বাপ্পা বলেছেন, “দারুণ খেলেছিস। পরের বার আরও ভাল হবে।”
কালনায় যাঁরা মাঠে-ময়দানে যাতায়াত করেন, তাঁরা সকলেই চেনেন বাপ্পাকে। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার পুরনো রেফারি রুবেন সান্যাল বলেন, “বাপ্পার ফুটবলে আগ্রহ দেখে আমরা সকলেই অবাক হয়ে যাই।” মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমরেন্দ্রনাথ সরকারের কথায়, “এলাকার খুদে খেলোয়াড়দের কাছে বাপ্পা ভীষণ জনপ্রিয়। অনেক সময়ে খেলা শেষে ওকে কাঁধে নিয়েই মাঠ ছাড়ে ফুটবলাররা।” এ ভাবে ফুটবল আঁকড়ে পড়ে থাকার কারণ কী? বাপ্পা বলেন, “ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। পা দু’টোর জন্য তা আর সম্ভব হল না। তাই ছোটদের সাহায্য করি। যত দিন পারব, ছোটদের নিয়েই থাকব।”
খুদে পায়ের দাপটেই এক দিন রূপ পাবে তাঁর স্বপ্ন, এই আশাতেই বাঁচেন বাপ্পা। |
|
|
|
|
|