|
|
|
|
তাঁতঘরে জল, পুজোর আগে চিন্তায় শিল্পীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালনা |
ভাগীরথীর জল ঢুকেছে গ্রামে। পাড়ার রাস্তায় নৌকা চলছে। বাধ্য হয়েই ঘর ছেড়েছেন পূর্বস্থলী-১ ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকার বহু তাঁত শিল্পী। পুজোর মরসুমের শুরুতেই টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কালনার তাঁত শিল্প। বাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। ভিটেমাটির সঙ্গে ছেড়ে এসেছেন তাঁত যন্ত্রও। কার্যত বন্ধই রয়েছে তাঁত বোনার কাজ। অন্য বার যে সব গ্রামে পুজোর আগে তাঁত বোনার ব্যস্ততা তুঙ্গে থাকে, এবার জলবন্দি সেই সব গ্রামে হেলায় পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত তাঁত যন্ত্র।
কালনা মহকুমার বহু মানুষ তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। সরকারি হিসাবে তাঁতের কাজ করে প্রায় চল্লিশ হাজার পরিবারের আয় হয়। পূর্বস্থলী-১ ব্লকের প্রায় ১৭ হাজার পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। পূর্বস্থলী-১ ব্লকের সমুদ্রগড় ও কালনার ধাত্রীগ্রাম থেকে প্রায় সারা বছরই তাঁতের শাড়ি নিয়ে যান কলকাতা, হাওড়া, আসানসোলের ব্যবসায়ীরা। পুজোর মরসুমে ব্যবসা আরও বাড়ে। আরও বেশি করে বরাত পান তাঁতিরা। কাজের ভার সামলাতে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি থেকে তাঁত শিল্পীদের নিয়ে আসা হয় কালনায়। তবে এবার পুজোর মরসুম শুরু হতে বৃষ্টিতে ঘর ছাড়তে হয়েছে তাঁতিদের। ফলে বাজারে তাঁত কাপড়ের চাহিদা থাকলেও কাপড় তৈরি কার্যত বন্ধই হয়ে গিয়েছে। |
|
বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চরকা। পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর এলাকায় কেদারনাথ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি। |
পূর্বস্থলী-১ ব্লকের মধ্যশ্রীরামপুর, দক্ষিণ শ্রীরামপুর-সহ বেশ কয়েকটি এলাকার বেশির ভাগ মানুষই তাঁতের কাজ করেন। টানা বৃষ্টিতে এলাকাগুলি এখনও জলবন্দি। বেশির ভাগ মানুষই স্থানীয় নবদ্বীপ স্টেশন কিংবা অন্যান্য ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকায় এখনও যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও অন্য কোথাও চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় তাঁতিদের অনেকে জানালেন, অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় যাদের তাঁত ঘর, তাদের পক্ষেও এই বৃষ্টিতে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় সুতো শুকোচ্ছে না। নরম সুতোয় কাজ করতে গেলে কাপড়ের মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পূর্বস্থলী-১ পঞ্চায়েত সমিতির রিপোর্ট অনুসারে, টানা বৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকা মিলিয়ে প্রায় ছ’হাজার আটশোটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁত শিল্পী প্রেমানন্দ বিশ্বাস বলেন, “সারা বছর আমরা এই পুজোর মরসুমের জন্যই অপেক্ষা করে থাকি। অন্য বারের মতো এ বারও প্রচুর অর্ডার পেয়েছি। তবে গত সাত দিন ধরে কোনও কাজ করতে পারিনি। জানি না কী ভাবে ফের কাজ শুরু করব। তাঁতের গর্ত এখনও জলে টইটুম্বুর।” ভবরঞ্জন দেবনাথ বলেন, “মারাত্মক ক্ষতি করল বৃষ্টি। এর পরে কী ভাবে বাঁচব তাই ভাবছি।”
তাঁত ঘর ডুবে রয়েছে স্থানীয় নবপল্লি এলাকাতেও। জিনিসপত্র নিয়ে অনেকেই ঘর ছেড়েছেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রতন সন্ন্যাসী বলেন, “কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁতিদের ঘরে খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তাঁদের কাছে চাল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দিলীপ মল্লিক জানান, পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ত্রাণের জন্য প্রচুর মানুষ আবেদন করছেন।
কালনা মহকুমা তাঁত শিল্পী সঙ্ঘের সদস্য তথা রাজ্য তাঁত বাঁচাও কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মনোজ রায় বলেন, “বৃষ্টিতে গোটা মহকুমাতেই তাঁতের শাড়ির উৎপাদন কমে গিয়েছে। তাঁতিদের অসহায়তার কথা স্বীকার করে রাজ্য হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান তথা পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন দেবনাথ বলেন, “ক’দিনের বৃষ্টিতে জেলার তাঁত শিল্পীরা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে তাঁত শিল্পের এই সমস্যার সমাধানের আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করছি এই সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে।” |
|
|
|
|
|