|
|
|
|
দলীয় কর্মীদের মারে জখম তৃণমূল কাউন্সিলর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেমারি |
সবে গত বছরই পুরভোটে বিনয় কোঙারের নিজের শহরে সিপিএমকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল তৃণমূল। বর্ধমানের সেই মেমারিতেই দলের লোকেদের হাতে বেদম মার খেলেন তৃণমূলের কাউন্সিলর।
ক’দিন আগেই বর্ধমান শহরে দলের এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মিছিল বের করেছিল তৃণমূলের অন্য এক গোষ্ঠী। দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক দুই গোষ্ঠীর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিলেও কার্যত কিছুই করা হয়নি। সেই গোষ্ঠী কোন্দলই এখন অন্যত্রও মাথা তুলছে। মেমারির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রহৃত কাউন্সিলর স্বপন ঘোষাল বর্তমানে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি। স্যালাইন ও অক্সিজেন চলছে। বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে শুয়েই তিনি দলের ১২ জন কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তেরা আবার তাঁর বিরুদ্ধে ‘লেঠেল’ লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। ঘটনাটি ইতিমধ্যে রাজ্য নেতৃত্বের কানে গিয়েছে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মায়ের কোল পাড়ায় মনসাতলার দু’টি আঁস্তাকুড়কে কেন্দ্র করে। তৃণমূল সূত্রের খবর, পুর নির্বাচনে কৌশিক কুণ্ডু নামে এক স্থানীয় কর্মী ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন বলে জল্পনা হয়েছিল।
পরে স্বপনবাবুকে প্রার্থী করা হয়। এর পর থেকেই এলাকার ‘দখল’ নিয়ে দু’জনের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। কয়েক দিন আগে কৌশিকবাবু ‘বিজ্ঞপ্তি’ জারি করেন, দু’টি আঁস্তাকুড়ে আর আবর্জনা ফেলা যাবে না। রবিবার বিকেলে এই নিয়ে কৌশিকবাবু ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে স্বপনবাবুর তুমুল বচসা হয়।
|
|
প্রহৃত তৃণমূল নেতা উদিত সিংহ |
বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মায়ের কোল পাড়ায় বৈঠক ডাকেন স্বপনবাবু। উপ-পুরপ্রধান হোসেনারা শেখ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রতিমা বসাকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। স্বপনবাবুর অভিযোগ, “বৈঠক চলার সময়েই কৌশিকবাবুর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন ঢুকে পড়ে মারধর শুরু করেন। ওয়ার্ড কমিটির সদস্যরা মার খান। আমায় বাইরে নিয়ে গিয়ে পেটানো হয়। হোসেনারা ও প্রতিমাকে নিগ্রহ করা হয়। মেমারি থানা থেকে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। এই হামলার পিছনে মেমারির বিধায়ক আবুল হাসেম মণ্ডলের মদত রয়েছে।” কৌশিকবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “দলের কর্মীদের পাত্তা না দিয়ে সিপিএমের লোকেদের নিয়ে উন্নয়নের কাজ চালাচ্ছেন স্বপনবাবু। আমরা বৈঠকে কথা বলতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি ৮ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে অনুগত লেঠেলদের ডেকে পাঠিয়ে আমাদের উপরে লেলিয়ে দেন। তাতেই সংঘর্ষ বাধে।” স্বপনবাবু যাঁর বিরুদ্ধে ‘মদত’ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন, সেই বিধায়কের বক্তব্য, “স্বপন কিছু দিন আগে কৌশিককে মারধর করেছিলেন। সম্ভবত তারই পাল্টা হিসেবে স্বপনবাবু প্রহৃত হয়েছেন। তবে নিজের মধ্যে মারপিটে জড়িতদের ছাড়া হবে না।” পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী কবুল করেন, “রাজ্য নেতৃত্ব বারবার জানতে চাইছেন, কী করে নিজেদের মধ্যে এমন গোলমাল হল। লজ্জায় কিছু বলতে পারছি না।” তাঁর আশ্বাস, “দু’পক্ষকে নিয়ে বসে মীমাংসার চেষ্টা করব।”
তৃণমূলের এই ‘গৃহযুদ্ধ’ দেখে স্বভাবতই খুশি সিপিএম। বিনয়বাবুর বড় ছেলে তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুকান্ত কোঙারের টিপ্পনী, “এমনই তো হওয়ার কথা। যাঁরা ভুল করে ওঁদের ভোট দিয়েছিলেন, তাঁরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, কাদের বরণ করে এনেছেন। মারামারি বন্ধ করে তৃণমূল বরং একটু কাজে মন দিক।” |
|
|
|
|
|