বিধি নিয়ে বিতর্কে সরকার ও বিরোধীদের সংঘাত
বাজেট-বিতর্কের শেষে দফাওয়াড়ি ব্যয়বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করা নিয়ে বিধানসভায় সংঘাত বাধল সরকার ও বিরোধী পক্ষের। বিষয়টি অবশ্য পুরোপুরিই পদ্ধতিগত। কিন্তু তার জেরেই শুক্রবারের অধিবেশন শেষে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান সরাসরি স্পিকারের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত এ দিনের বাজেট-বিতর্কের শেষে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে দফাওয়াড়ি ব্যয়বরাদ্দ পেশ করার কথা বলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব আনাকে ঘিরে। স্পিকার জানিয়ে দেন, সময়ের অভাবের জন্য তিনি সভার কার্যপদ্ধতির ২০৮ (ক) ধারা এই দিনের মতো ‘সাসপেন্ড’ করছেন। তখনই বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু পয়েন্ট অফ অর্ডার তুলে বলেন, “আপনার এই সিদ্ধান্ত কালাপাহাড়ি কানুনের মতো (ড্রাকোনিয়ান)!” সূর্যবাবুর অভিযোগ, স্থায়ী কমিটির অধিকার খর্ব করা হচ্ছে স্পিকারের ওই ‘বিশেষ ক্ষমতা’ প্রয়োগের ফলে। শুধু তা-ই নয়, কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। দিনের কার্যসূচিতেও উল্লেখ ছিল না যে, অর্থমন্ত্রী এ দিনই দফাওয়াড়ি বাজেট পেশ করবেন।
উত্তরে স্পিকার বলেন, এ বারই প্রথম এই ঘটনা ঘটছে তা নয়। এর আগেও নতুন সরকারের ক্ষেত্রে ওই ঘটনা ঘটেছে। এই সময় পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এক বার স্পিকারের কাছে গিয়ে কিছু বলেন। তার পরে নিজের আসনে ফিরে গিয়ে অধ্যক্ষের উদ্দেশে বলেন, “আপনি যে প্রস্তাব এনে ফেলেছেন, তা ভোটাভুটিতে দিয়ে দিন। সভা যা বলবে, তা-ই হবে।” স্পিকার তখনই প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে নিয়ে যান এবং সরকার পক্ষ জিতে যায়। এর পরে অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু দফাওয়াড়ি ব্যয়বরাদ্দের বিভাগ-সংখ্যাগুলি পড়ে যান। এর ফলে মঙ্গলবার থেকে দফাওয়াড়ি ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় আর কোনও অসুবিধা থাকল না।
পরে সূর্যবাবু আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বিধানসভার কার্যপদ্ধতির ২০৮ (ক) ধারায় বলা আছে, বাজেট পেশের পরে যে দফতরগুলির ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটি আছে, সেগুলির দফাওয়াড়ি বাজেট যাবে সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির কাছে। সেখানে আলোচনা করে কমিটি প্রয়োজনে সুপারিশ করবে। অর্থমন্ত্রী উত্তর দেওয়ার সময় জানাবেন, কোন কোন সুপারিশ তিনি মানলেন। এতে বাজেটের ‘স্বচ্ছতা’ থাকে। সূর্যবাবুর বক্তব্য, “আমরা এই বিষয়টা চিহ্নিত করলাম সরকারের অস্থিরতা বোঝাতে। অচলাবস্থা তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। অর্থমন্ত্রীর কথামতো ২৪ জুন পেশ-করা বার্ষিক আর্থিক বিবরণীই বাজেট হলে এখন আবার তা নিয়ে বিতর্ক করার কারণ কী? তা হলে তো আগের এবং এই অধিবেশনের মাঝের সময়টাতেই স্থায়ী কমিটিগুলি দফাওয়াড়ি ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা সেরে নিতে পারত। সেটা যদি বাদও দিই, সরকার সময়ের অভাবের কথা বলে সর্বদল বা কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে আমাদের সহযোগিতা চাইতে পারত। কিন্তু এই ভাবে কার্য উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করার অর্থ কী?” বিরোধী দলনেতার মতে, ‘যখন যেমন, তখন তেমন’ ভিত্তিতে সরকার চলছে!
পরিষদীয় মন্ত্রী কী ভাবে বিধানসভার মধ্যে স্পিকারকে ‘নির্দেশ’ দেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর। তাঁর মন্তব্য, “নাটকের প্রম্পটার কখনও মঞ্চে আসে না। কিন্তু এখানে প্রম্পটার প্রকাশ্যে নির্দেশ দিচ্ছে!” বিরোধীদের বক্তব্য, স্পিকারই বিধানসভার ‘সর্বময় অভিভাবক’। দলের টিকিটে জিতলেও স্পিকারের আসনে বসলে তিনি দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে। মন্ত্রী স্পিকারকে ‘নির্দেশ’ দিতে পারেন না। সূর্যবাবু বলেন, “স্পিকার নতুন। তাঁকে আর কী বলব!”
অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু এ দিন জবাবি বক্তৃতায় তারিখ উল্লেখ করে জানান, গত এপ্রিল মাসে তৎকালীন বাম সরকার কোষাগার শূন্য করে ফেলে বলে কেন্দ্রীয় সরকার দু’বার ১৭০০ কোটি টাকা করে সাহায্য দিয়েছিল। যাতে রাজ্য সরকারের চেক বাউন্স না-হয়। ওই তথ্যকে সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে সূর্যবাবুর দাবি, “কোষাগার খালি হয়ে গেলে কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ মহানুভব হয়ে বামফ্রন্ট সরকারকে সাহায্য করবে কেন? গত দু’বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বামফ্রন্ট বা তার বিগত সরকারের সম্পর্ক তো সবাই জানে!” আনিসুরের বক্তব্য, “কোষাগার তো এক দিনে খালি হতে পারে না! সত্যিই কোষাগার শূন্য হলে বাম সরকারের ৩৪তম বছরে কর্মীদের বেতন-সহ সব বন্ধ হওয়ার কথা। কই, তা তো হয়নি!”
প্রসঙ্গত, সিপিএম বিধায়ক নাজমুল হক এ দিন বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেন, পুজো এবং ঈদের সময় কর্মীদের কিছু অনুদান দিয়ে থাকে সরকার। এ বার ১০টা রোজা পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে সরকারের কোনও ঘোষণা হয়নি। বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর ‘নজরে’ আনেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.