রাজ্যপালের দ্বারস্থ বামেরা
‘সন্ত্রাস’ নিয়ে মনমোহনের কাছেও যাবেন
রাজ্যে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ বন্ধ করতে রাজ্য সরকারকে ১৩ দিন সময় দিল বিরোধী বাম-শিবির। শুক্রবার রানি রাসমণি রোডে বড় জমায়েত করার পর বাম নেতারা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে ‘সন্ত্রাস’ বন্ধে স্মারকলিপি দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও।
রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে বিমানবাবু বলেন, তাঁরা রাজ্য সরকারকে ১৩ দিন সময় দিচ্ছেন। তার মধ্যে সন্ত্রাস বন্ধ না হলে আগামী ২৫ অগস্ট দিল্লিতে বাম সাংসদ, বিধায়কদের ধর্নার পরে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে যাবেন। বিমানবাবুর মতে, “বাম নেতা কর্মীদের উপরে আক্রমণ করে, প্রতিহিংসা নিয়ে তৃণমূল আসলে গণতন্ত্রের মুখ বন্ধ করতে চাইছে।”
বিরোধী শিবিরের থাকাকালীন তৃণমূল ঠিক যে ভাবে শহিদ পরিবারের লোকেদের মূল মঞ্চের পাশের মঞ্চে হাজির করত, এদিন বামেরাও তা-ই করেছেন। রানি রাসমণি রোডে বামেদের সভায় তৃণমূলের সভার মতোই পাশের লাগোয়া মঞ্চে বসানো হয়েছিল শহিদ পরিবারের সদস্যদের। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বহু মানুষ জমায়েতে এসেছিলেন। যে ভিড় দেখে বাম নেতৃত্ব রীতিমতো ‘উচ্ছ্বসিত’! বিমানবাবুর হিসাব মতো, নির্বাচনের আগে ৫৭ জন এবং নির্বাচনের পর ৩০ জন বামপন্থী নেতা-কর্মী বিরোধীদের হাতে খুন হয়েছেন। তার মধ্যে অধিকাংশই খুন হয়েছেন ‘তৃণমূল দুষ্কৃতীদের’ হাতে। মঞ্চে তাঁদের প্রত্যেকের নামও লেখা ছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, শহিদ পরিবারের প্রত্যেকের দায়িত্ব নেবে দল। সভা শুরুর আগে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে বাম নেতারা ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার’ অভিযোগ তোলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাম নেতাদের দাবি, রাজ্যপাল তাঁদের কথা মন দিয়ে শুনেছেন। এবং বলেছেন, এমন কিছু হয়ে থাকলে অন্যায় হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ গ্রেফতার হওয়ার পর দলের একাংশ মনে করছেন, আগামী দিনে দলের আরও নেতা-কর্মী গ্রেফতার হতে পারেন। বিশেষত, যে ভাবে সাঁইবাড়ির ঘটনায় প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন, বর্ধমান জেলা সিপিএম সম্পাদক অমল হালদার, আনন্দমার্গী-হত্যার ঘটনায় কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের নাম বার বার তৃণমূল শিবির থেকে তোলা হচ্ছে, তাতে ‘বিপদ’ বাড়ছে। বুদ্ধবাবুর কথায় সেই আশঙ্কা গোপন থাকেনি। তিনি বলেন, “সরকার প্রতিহিংসা অভিযান করছে। ৪০ বছর আগের সাঁইবাড়ির ঘটনায় কমিশন বসাও! যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা সকলেই কোর্ট থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছে! তবুও সাঁইবাড়ি নিয়ে কমিশন!”
জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানে পুলিশের গুলিতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ওই ঘটনা, বিজন সেতুতে আনন্দমার্গী-হত্যা এবং মরিচঝাঁপির ঘটনা নিয়েও নতুন তদন্তের জন্য কমিশন গঠন করেছেন। তা উল্লেখ করে বুদ্ধবাবু বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য এতদিন পরে এ সব ঘটনা নিয়ে কমিশন হবে? কই আমরা তো এমনকিছু করিনি!” বামশাসনে মমতার নেতৃত্বে কিছু ঘটনার উল্লেখ করে বুদ্ধবাবু বলেন, “বিধানসভার মধ্যে দাঁড়িয়ে বিধানসভা ভাঙচুর, লণ্ডভণ্ড করল! কই আমরা তো গ্রেফতার করিনি! বারাসতে থানা, রেল স্টেশন আক্রমণ-ভাঙচুর হল। কই কাউকে তো গ্রেফতার করিনি!”
কাউকে গ্রেফতার না-করে তাঁরা যে বিষয়টি ‘রাজনৈতিক’ ভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, তা বোঝাতেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওরা কী করেছে মানুষ দেখেছে। তখন আমরা কী করেছি, তা-ও মানুষ দেখেছে।” বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, “একটি দল ক্ষমতায় এসেই প্রতিহিংসা নিচ্ছে। এটাও মানুষ দেখছে।” সরকারি প্রতিহিংসার জন্য প্রতিটি বামকর্মীকে আগে থেকেই মানসিক ভাবে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “মাওবাদীরা গত তিন মাসে লালগড়, শালবনী সমেত পশ্চিম মেদিনীপুরের বিরাট এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে এগিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ওদের বিরুদ্ধে অভিযান হবে? নাকি, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযান হবে?” কিছুটা সুর চড়িয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকারকে বলছি, বামপন্থীদের উপরে প্রতিহিংসা বন্ধ করুন। রাজ্য জুড়ে এত হিংসা। মানুষ খুন হচ্ছে। মাওবাদীরা ঘাঁটি গাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিহিংসা করবেন না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.