বন্ধ বন্ধ করতে আইন প্রণয়নের ভাবনা মুখ্যমন্ত্রীর
তিনি নিজে বন্ধ, অবরোধ করেন না। কাউকে করতেও দেবেন না। নিজের এই ‘প্রতিজ্ঞা’র কথা শুক্রবার মহাকরণে দাঁড়িয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে বন্ধ, অবরোধ রুখতে প্রয়োজনে আইন প্রণয়নের কথাও ভাবতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বামফ্রন্ট এবং বামফ্রন্টের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলির একাংশ প্রত্যাশিত ভাবেই তাঁর ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে। তাদের মধ্যে আছে মমতার প্রাক্তন জোটসঙ্গী এসইউসি-ও।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে চা শ্রমিকরা উত্তরবঙ্গে বুধবার থেকে তিন দিনের ধর্মঘট শুরু করেছেন। ওই ধর্মঘটের সমর্থনে এ দিন উত্তরবঙ্গে সাধারণ ধর্মঘটও করে বিভিন্ন বাম সংগঠন। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বার বার বন্ধ, ধর্মঘট করে সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বন্ধের নামে গুন্ডামি আর বরদাস্ত করা হবে না। দরকারে আইন করে বন্ধ, অবরোধ, ধর্মঘট বন্ধ করতে হবে।” তাঁর ব্যাখ্যা, “বাংলার অর্থনীতি এমনিতেই খারাপ। গত ৩৪ বছরে সর্বস্বান্ত করে দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে। এখন কথায় কথায় বন্ধ-ধর্মঘট ডেকে অর্থনীতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। এটা বরদাস্ত করা হবে না। আমি নিজেও করব না। কাউকে করতেও দেব না। এটা আমার প্রতিজ্ঞা।”
ধর্মঘটীদের সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উত্তরবঙ্গে যে কেউ বন্ধ ডেকে দিচ্ছে। আগে তো প্রায় সব চা বাগান বন্ধ ছিল। এখন তো অনেক চা বাগান খোলা হচ্ছে। সিপিএমের আমলে তো এত বন্ধ ডাকা হত না! সিপিএম ক্ষমতায় নেই বলেই এখন হচ্ছে।” মমতার যুক্তি, একটা-দুটো চা বাগানের সমস্যা নিয়ে বন্ধ ডেকে অজস্র মানুষের খাবার কাড়ার চেষ্টা অনুচিত। এতে মানুষ বিপদে পড়েন। দু’-একটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে সব বিপর্যস্ত করার চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক স্বার্থে ‘যা ইচ্ছা তাই’ করা হচ্ছে। এ সব তিনি বরদাস্ত করবেন না বলে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন।
রাজ্যে ‘বন্ধ-অবরোধ-ভাঙচুরের রাজনীতি’র বিরুদ্ধে মমতার এই অবস্থান নতুন নয়। গত বেশ কয়েক বছর তৃণমূল বন্ধ ডাকেনি। সে সময় থেকেই মমতা দলে যখন তখন বন্ধ-অবরোধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ওই পর্বে তিনি তাঁর এসইউসি-র বন্ধকেও সমর্থন করেননি। শাসক হওয়ার পরেও বন্ধ-অবরোধ নিয়ে তিনি একাধিক বার ‘কড়া হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার কসবার রাজডাঙায় নতুন স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “বন্ধ-অবরোধ-ভাঙচুরের রাজনীতি আর নয়। ৩৪ বছরে এই রাজনীতিই বাংলার সর্বনাশ করে দিয়েছে! এখন গড়ার রাজনীতির সময়।” রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সে দিনও তিনি বলেছিলেন, “টাকা নেই, গড়তে পারছি না। এর মধ্যে ভাঙলে কী করে হবে?” তবে একইসঙ্গে ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী যুব সমাজের কাছে ‘অন্যায়-অত্যাচার’ দেখলে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। বন্ধ-অবরোধ বন্ধে মুখ্যমন্ত্রীর আইন প্রণয়নের চিন্তার ব্যাপারে সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “উনি আগে আইন করুন। আগুন লাগালে ওঁর হাতই পুড়বে।” এই প্রসঙ্গে আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের মন্তব্য, “মা-মাটি-মানুষের কথা বলে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা ধর্মঘট বন্ধ করে দেবে বলছে! মানুষ এটা মানবে না।” উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে ইউটিইউসি-র সংগঠন শক্তিশালী। এসইউসি এবং সিপিআই (এমএল) লিবারেশনও মুখ্যমন্ত্রীর ওই মানসিকতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.