সম্পাদকীয়...
‘উত্তেজনা’র দায়
ত্তেজনা এক বিশেষ রকম অনুভূতি যাহা মস্তিষ্কে তৈয়ারি হয় এবং মানুষ তাহার অধীন হইয়া পড়ে। উত্তেজনার বশে মানুষ কখনও নৃত্য করিয়া ওঠে, কখনও গালি দেয়, কখনও অত্যন্ত আনন্দিত হইয়া পড়ে, কখনও ক্রোধে উন্মত্ত হয়। এই উত্তেজনার বশেই নাকি কিছু কিছু পুরুষ মহিলাদের যৌন হেনস্থা করিয়া থাকে, কখনও বা ধর্ষণও। অর্থাৎ, এই যুক্তিতে, পুরুষের উত্তেজনাই নারীর লাঞ্ছনার জন্য দায়ী। কিন্তু এহ্য বাহ্য। পুরুষজাতির মধ্যে এই উত্তেজনা আনয়ন করে কে? নারীর উত্তেজক পোশাক। বহুশ্রুত যুক্তি নারী ‘উত্তেজক পোশাক’ পরিধান করে বলিয়াই, পুরুষ উত্তজেনার বশবর্তী হইয়া তাহার উপর চড়াও হইতে বাধ্য হয়। অতএব নারীর লাঞ্ছনার জন্য নারীই দায়ী। এক্ষণে একটি প্রশ্ন। ‘উত্তেজক পোশাক’ কাহাকে বলে? উত্তেজনা মস্তিষ্কের ক্রিয়া। তর্কের খাতিরে যদি ধরিয়া লওয়া যায় যে, নারীর স্বল্পবাস সত্যই পুরুষের উত্তেজনার কারণ, তাহার দায় পোশাকের কেন হইবে? সেই দায় তো পুরুষের মস্তিষ্কের।
গত ৩১ জুলাই দিল্লির একটি সংস্থা এক অভিনব মিছিলের আয়োজন করে স্লাট ওয়াক বা নির্লজ্জার মিছিল। যে সমাজ নারীকে স্বল্প পোশাক পরিধানের দোষে ধর্ষণের জন্য দায়ী করে, সেই সমাজের প্রতি একটি নিটোল চপেটাঘাত এই মিছিল। এই মিছিলের মূল বক্তব্য: নারী স্বল্প পোশাক পরিধান করিলেই তাহাকে ধর্ষণ করিবার অধিকার পুরুষের জন্মায় না। নারীর স্বল্পবাস পুরুষের অজুহাত বই কিছুই নহে। নিজের উত্তেজনা প্রশমন করিতে না পারিলে তাহা পুরুষের অক্ষমতা, নারীর দোষ নহে, স্বল্পবাস ধর্ষণের ‘যুক্তি’ হইতে পারে না এই বক্তব্য লইয়া বিশ্বের নানা জায়গায় এই মিছিল সংগঠিত হইয়াছে। প্রথম এই মিছিল বাহির করে কানাডার টরন্টো শহর। সেখানে এক পুলিশকর্মী এক নারীকে আপন সম্ভ্রম রক্ষার জন্য ‘যৌনকর্মীর ন্যায় পোশাক’ না পরিবার পরামর্শ দিয়াছিলেন। তাহার প্রতিবাদেই এই মিছিল। ভারতে ভোপালে কিছু দিন আগে এই মর্মে মিছিল বাহির হয়। দিল্লির মিছিলটি সেই পরম্পরাতেই।
পোস্টারে ও স্লোগানে ছয়লাপ এই মিছিল একটি বিশেষ বার্তা বহন করিয়াছিল ‘যৌনকর্মীর ন্যায় পোশাক’ পরিলেও মহিলাদের হেনস্থা করার অধিকার পুরুষের আয়ত্ত হয় না। অবশ্যই, কিন্তু কথাটির তাৎপর্য আরও গভীর। ভাবিয়া দেখা প্রয়োজন, ‘যৌনকর্মীর মতো পোশাক’ কথাটিই কি এক জন যৌনকর্মী যিনি এক জন ব্যক্তি মানুষ তাঁহার পক্ষে যথেষ্ট অপমানজনক নহে? যৌনকর্মী পেশার তাগিদে কিংবা পরম্পরার তাড়নায় অথবা আপন পছন্দে কী পোশাক পরিতেছেন, তাহা কোনও সমাজে কোনও ঘটনার সংজ্ঞা বা বিশেষণ রূপে ব্যবহার করা কি উচিত? কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতে যৌনকর্মীর পোশাকের অনুষঙ্গ টানিয়া আনিলে সদর্থে প্রতিবাদ হয় না। তাহা যৌনকর্মী ও অসম্মানিত নারী, দুইয়ের পক্ষে অসম্মানজনক। স্বল্পবাস পরিধান করিলেই হেনস্থার অধিকার জন্মায় না এই বার্তাটি স্বগুণেই স্বতঃসিদ্ধ। তাহা বলিবার জন্য অন্য কোনও বর্গকে অপমান করিবার প্রয়োজন নাই।
First Page Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.