বাংলার মেলা
গোপীনাথ নিয়ে টানাটানি অগ্রদ্বীপ আর কৃষ্ণনগরে। বিস্তারিত...

মকর সংক্রান্তিতে ঢল চপলেশ্বরের মেলায়। বিস্তারিত...

সংক্রান্তিতে রাতে অন্নভোগ মাধবকে। বিস্তারিত...

কৃষ্ণনগরের সরভাজা, মালদহের ক্ষীরকদম্ব, কাটোয়ার ক্ষীরের পান্তুয়া। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুর্গাপুরে গাঁধী মোড় ময়দানে হাজির হয়েছিল নানা রকমের মিষ্টি। এটি দুর্গাপুরের প্রথম মিষ্টি উৎসব। বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মানকরের কদমা। নানা জায়গার বিখ্যাত মিষ্টি শুধু নয়, হারিয়ে যাওয়া বহু গ্রাম্য মিষ্টিরও উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি ছিল সাবেক পিঠে-পুলি। খড়ের ছাউনি দেওয়া কুঁড়ের আদলে তৈরি করা হয়েছিল তিরিশটিরও বেশি স্টল। মিষ্টি-লোভীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বাঁশের বাতায়। বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকে আনা কচি শালপাতায় মিষ্টির পাতের আয়োজন করা হয় । খাওয়ার পরে পাতা ফেলার জায়গাও ছিল বাঁশের তৈরি। গোটা ভাবনাটা প্রথম যাঁর মাথায় এসেছিল, দুর্গাপুরের মেয়রের ঘরণী তথা কাউন্সিলর অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জানান, স্বাদে-গন্ধে সাবেক মাটির মেজাজ ধরে রাখাটাই আসল উদ্দেশ্য।

কোথাও বইমেলায় উপচে পড়ছে ভিড়, আবার কোথাও হরেক জিনিসের মেলার মধ্যে বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে পড়ুয়ারা। বিভিন্ন জায়গার মতো দুর্গাপুর ও আসানসোল শিল্পাঞ্চলে পালিত হয় কল্পতরু উৎসব। এই উপলক্ষে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সারা দিন ধরে চলে বিশেষ পুজো, হোম, আরতি, ভক্তিগীতি। উৎসব উপলক্ষে দুর্গাপুরের সাধুডাঙ্গার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ভোরে মঙ্গলারতি দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সারা দিন ধরে ভাগবত পাঠ, ধর্মালোচনা। ছিল কীর্তন, ভজন, পংক্তিভোজন। গ্যামন ব্রিজ সংলগ্ন মাঠেও এ দিন থেকে শুরু হয়েছে কল্পতরু উৎসব ও মেলা। চলবে ১০ দিন। আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনে দিনটি উপলক্ষে বিশেষ পূজা অর্চনার আয়োজন করা হয়েছিল। সন্ধ্যায় বিশেষ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন স্বামী ভারূপানন্দ।মেলার প্রতিটি দিনই বিভিন্ন মনীষীর নামে উৎসর্গ করা হয়েছিল। মেলার প্রথম দিনটি ‘বিদ্যাসাগর দিবস’ হিসাবে পালিত হয়েছিল। শেষ দিনে মেলাটি পালিত হয় ‘দ্বিজেন্দ্রলাল দিবস’ হিসাবে। উদ্যোক্তা সংস্থার পক্ষে পূর্ণশশী রায় জানান, ১৯ বছর আগে এই মেলা শুরু হয়েছিল।

ডুয়ার্সের গজলডোবায় অনুষ্ঠিত হল বাউল উত্‌সব। ফি বছর এখানে দু’টি পৃথক গোষ্ঠীর বাউল গানের উত্‌সব আয়োজিত হয়। দু’টি উত্‌সবেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে বাউল শিল্পীরা অংশ গ্রহণ করেন। এ বছর উত্‌সবে দুই দিনাজপুর, কলকাতা, বীরভূম, কোচবিহার থেকে বাউলরা এসেছিলেন। দেহতত্ত্বশিল্পী হিসেবে পরিচিত মালদহের অষ্টম ঘোষ, ভাবরসের শিল্পী কলকাতার আরতি বালা এ বারের উত্‌সবে উপস্থিত ছিলেন। দূর দূরান্ত থেকে আসা শ্রোতাদের অথবা পর্যটকদের থাকার ব্যবস্তাও করে কমিটি। গজলডোবা বাউল কমিটির সভাপতি রুপচাঁদ বৈদ্য, সম্পাদক রতন মণ্ডলদের কথায় গজলডোবার বাউল উত্‌সব একটা ঐতিহ্য।

গত বছরের মতো এ বারেও গোয়ালতোড়ে আয়োজিত হল মাটি, কৃষি, উদ্যানপালন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মেলা। কৃষি দফতরের উদ্যোগে গোটা রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৯টি ব্লকেও এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ বার এই মেলা হয়েছে তিন দিন ধরে। গত বছর এক দিনই মেলার আয়োজন হয়েছিল। মেলায় প্রতিদিনই সেমিনার ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।২০১৩ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় সরকারি উদ্যোগে এই মেলা শুরু হয়। সাধারণ মানুষের কাছে বিভিন্ন দফতরের সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রচারের মঞ্চ হিসেবে মেলাকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সেমিনারে বিভিন্ন আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস আধিকারী বলেন, “সেমিনারে কোন মাটিতে কী চাষ করা উচিত, বিকল্প চাষের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।”

মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন মেলা এ বার ষষ্ঠ বর্ষে পড়ল। মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন অ্যাকাডেমির উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হয়। দু’দিন ধরে মেলা চলে জেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে। মেলা উপলক্ষে কবিতা পাঠ, মুক্ত ক্যানভাস, যেমন খুশি আঁকো, সঙ্গীত, আবৃত্তি প্রভৃতির আয়োজন করা হয়। মেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক গৌতম মাহাতো এবং অভিনন্দন মুখোপাধ্যায় জানান, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সমৃদ্ধি ও বিকাশের অঙ্গ হিসেবে এই মেলার আয়োজন।

কাঁথি রাও রিক্রিয়েশন ক্লাব প্রাঙ্গনে আয়োজিত হল চতুর্দশতম কাঁথি বইমেলা। উদ্বোধন করেন সুপ্রিয় কর। উদ্বোধনের আগে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল কাঁথি শহর পরিক্রমা করে। বইমেলার সম্পাদক ননীগোপাল বেরা বলেন, “দশ দিন ব্যাপী এই মেলায় কলকাতার ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা যোগ দিয়েছে। এ ছাড়াও মহকুমা ও জেলার লিটল ম্যাগাজিনগুলি মেলায় যোগ দিয়েছিল। প্রতিদিনই ছিল নানা অনুষ্ঠান।

তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের শিশু-কিশোর অ্যাকাডেমি আয়োজিত ষষ্ঠ শিশু-কিশোর উৎসব অনুষ্ঠিত হল বিষ্ণুপুরে। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ৮ দিনের এই সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রায় ১৬০০ শিশু-কিশোর অংশ নিয়েছিল। ছিল ছোটদের আঁকা ছবি, চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী, বইয়ের স্টল। সহযোগিতায় ছিল বিষ্ণুপুর পুরসভা ও পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র। ঠান্ডা উপেক্ষা করেও প্রথম দিনেই বড়দের সঙ্গে ভিড় জমিয়ে ছিল এলাকার কচিকাঁচারা। ‘হ য ব র ল’-থেকে শাঁওলি মিত্রের পাঠ, পণ্ডিত অলোক লাহিড়ীর পরিচালনায় সুরসঙ্গম মিউজিক অ্যাকাডেমির বৃন্দবাদন, দোহারের লোকগান ও ইয়ান জেমসের সঙ্গীত মাত করেছে শিশু-কিশোরদের। ছোটদের নাচ, গান, আবৃত্তি, ম্যাজিক, নাটক, পুতুল নাটকে বুঁদ হয়েছিলেন বড়রা।

‘বই কিনুন, বই পড়ুন এবং প্রতিদিন আসুন বইমেলায়’এই স্লোগানেই নতুন বছরের চতুর্থ দিনে শুরু হয়ে গেল খড়্গপুর বইমেলা। শনিবার বিকেলে রেলশহরের গিরি ময়দান সংলগ্ন টাউন হল প্রাঙ্গনে বইমেলার উদ্বোধন করেন ‘দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক সাহিত্যিক হর্ষ দত্ত। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার সাহিত্যিক অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্যামল ভট্টাচার্য ও চিত্রকর সুব্রত চৌধুরী। এ দিন ‘গীতালি’র উদ্বোধনী সঙ্গীত ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে মেলার সূচনা হয়।

পাঁচ দিনব্যাপী বই ও সংস্কৃতি মেলা হয়ে গেল আমতায়। বই ও সংস্কৃতি মেলা কমিটির উদ্যোগে আমতা বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই মেলার উদ্বোধন করেন সাহিত্যিক ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়। ২৬টি স্টলে নামিদামী বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার বই ছিল। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় যোগদান করে প্রায় দু’শোরও বেশি প্রতিযোগী। এ ছাড়াও ছিল বাউল, কবি ও সাহিত্য সম্মেলন, লিটল ম্যাগাজিন বিষয়ে আলোচনা, গীতিনাট্য এবং আধুনিক বাংলা গানের আসর।


এগরা ১ ব্লক কৃষি মেলা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত মেলা। ছবি: কৌশিক মিশ্র।

যুব কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল দু’দিনের উত্তর দিনাজপুর জেলা বিবেক চেতনা উৎসব। রায়গঞ্জের দেবীনগর মহারাজা জগদীশনাথ উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে উৎসবের উদ্বোধন হয়। বিতর্ক, আবৃত্তি, সংবাদপাঠ, সঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত ও নাচের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। উত্তরবঙ্গের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও স্বামী বিবেকানন্দের জীবন আদর্শের উপর প্রদর্শনীমূলক একটি মেলারও আয়োজন করা হয়।

মুকুটমণিপুর মেলা এ বছর এই মেলা ১৬ বছরে পা দিল। খাতড়ার মুকুটমণিপুরে কংসাবতী জলাধার লাগোয়া এলাকায় তিন দিন ধরে চলে এই মেলা। মেলা কমিটির সম্পাদক তথা খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু জানান, এ বার মেলার বাজেট প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা। মূল মঞ্চে তিনদিন ধরে চলে আদিবাসী নৃত্য, লোকসঙ্গীত, ঝুমুর, রণ-পা, নাটক-সহ নানা অনুষ্ঠান।

রামমোহন মেলা অনুষ্ঠিত হল খানাকুলে। সাত দিনের এই মেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল আলোচনা সভা, প্রদর্শনী। মেলায় প্রায় ৩০০ স্টল ছিল। প্রথম দিন থেকেই মেলা ছিল জমজমাট। রাজা রামমোহন রায়ের জন্মস্থান এখানেই। মেলার সূচনা হয় ১৯৭৪ সালে। কিন্তু নানা কারণে মাঝে কয়েক বছর বন্ধ ছিল। তবে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলছে ২০০২ সাল থেকে।

নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজিত হল ‘পূর্বাঞ্চল পর্যটন মেলা’। তিন দিন ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় ধামাক, ঝাপা এবং নেপালে। নেপালের নানা এলাকার সঙ্গে পূর্বাঞ্চলকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরাই তাদের লক্ষ্য। নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের সিনিয়র ম্যানেজার লিলা বনিয়া বলেন, “বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে তুলে ধরা, বাসিন্দাদের বাড়িতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা, পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন জাতীয় এবং আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলির তথ্য বিনিময়, গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন মেলার উদ্দেশ্য।”

সুভাষচন্দ্রের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রামনগর থানার দেপালে আয়োজিত হল চারদিন ব্যাপী নেতাজী গ্রামীণ মেলা। দেপাল আজাদ হিন্দ ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত চারদিন ব্যাপী গ্রামীণ মেলার উদ্বোধন করেন রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি। উপস্থিত ছিলেন জেলাপরিষদ সদস্য অশোক বিশাল ও দেপাল হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক রাধাশ্যাম মাইতি প্রমুখ। মেলায় পুষ্প, কৃষি ও হস্তশিল্পের প্রদর্শনী ছাড়াও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

রেশম চাষে উন্নত প্রযুক্তি-সহ উন্নত প্রজাতির ব্যবহার এবং রেশম চাষিদের তা নিয়ে সচেতন করতে কেন্দ্র সরকারের রেশম পর্ষদ, বস্ত্র মন্ত্রালয়ের অধীন মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় রেশম গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এক দিনের রেশম কৃষি মেলা অনুষ্ঠিত হল রামপুরহাটে। অনুষ্ঠানে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, নদিয়ার রেশম চাষি ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের রাজমহল এবং মহেষপুর এলাকার রেশমচাষিরা ছিলেন। তাঁরা প্রশ্ন-উত্তর পর্বে আলোচনাতেও যোগ দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় রেশম উপাদন অনুসন্ধান এবং প্রশিক্ষণ সংস্থার নির্দেশক এস নির্মল কুমার প্রমুখ।

নিতুড়িয়ার সরবড়ি ফুটবল ময়দানে অনুষ্ঠিত হল নিতুড়িয়া বইমেলা। উদ্যোক্তা রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলেন, “এলাকায় এই ধরনের মেলা প্রথম বার অনুষ্ঠিত হল।” বিধায়ক হওয়ার আগে তিনি নিয়মিত ‘দাগ’ নামে একটি লিট্ল ম্যাগজিন সম্পাদনা করতেন। মূলত কবিতার কাগজ। পত্রিকার উদ্যোগে কবিতাপাঠের আসর বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল এলাকার পরিচিত নির্ঘণ্ট। আসরে যোগ দিতেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের উৎসাহী কবি-সাহিত্যিকেরা।

অনুষ্ঠিত হল দমদমের খাদ্যমেলা ‘নালে ঝোলে’। এ মেলায় হাজির ছিল নানা স্বাদের পিঠে-পুলি, বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, কলকাতার কয়েকটি বিশিষ্ট দোকানের সন্দেশ, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া, চন্দননগরের মিষ্টি। ছিল বিরিয়ানি, ফাস্ট ফুড, হজমি-পাপড়-আচারের স্টল। এ ছাড়াও গরম গরম পদ্মার ইলিশ, চিংড়ি, পমফ্রেট-সহ হরেক রকম মাছ ভাজা।

শহিদ সত্যকিঙ্কর দত্ত স্মরণে ঝালদায় অনুষ্ঠিত হল তিন দিনের সত্যমেলা। মেলা কমিটির সভাপতি তথা ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার জানান, সত্যকিঙ্কর দত্ত ছিলেন ব্রিটিশ আমলে এই এলাকার নামকরা লেঠেল। তিনি এই ময়দানেই এলাকার যুবকদের জড়ো করে লাঠি খেলা শেখাতেন। গড়ে তুলেছিলেন লেঠেল বাহিনী। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য ব্রিটিশ সেনা তাঁকে এক দিন লাঠিখেলা শেখানোর সময় গুপ্তচর পাঠিয়ে চক্রান্ত করে হত্যা করে। মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি শহিদ হয়েছিলেন। প্রদীপবাবুর কথায়, “ঝালদার মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান স্মরণ করার জন্য প্রতি বছর এই মেলায় যোগ দেন।” মূলত মানভূম সংস্কৃতির চৌডল প্রতিযোগিতা, টুসু গান, ছৌ নৃত্য, বাউল, কবিগান, নাচনি নাচ, ঝুমুরের আসর এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ। পাশাপাশি গুড়কাঠি, খাজা, জিলিপি, বেসনের গরম ভাবরার স্বাদ চাখবেনই মেলায় আসা মানুষ। লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকেও এই মেলায় অনেকে আসেন। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির পরের দিন থেকে স্থানীয় সত্যমেলা ময়দানে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

কৃষি মেলার অনুষ্ঠিত হল মন্তেশ্বরের ভাগরা ফুটবল মাঠে। মেলা উপলক্ষে কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, সমবায় সমিতি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী এমনকী রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের প্রায় ১৫টি স্টল ছিল। তিনদিনের মেলায় আয়োজন ছিল পুতুল নাচেরও। এছাড়া শীতের দুপুরে মেলার মাঠে রকমারি পিঠেপুলিও বিক্রি করেন অনেকে। ব্যবস্থা ছিল আলোচনাসভারও।

মাটি, কৃষি, উদ্যান পালন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মেলা অনুষ্ঠিত হল মালদহের চাঁচলে। মেলা চলে ৩ দিন ধরে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষিরা যাতে উন্নত ফলন ফলাতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই এই মেলার আয়োজন। সহ কৃষি অধিকর্তা জয়ন্ত দাস বলেন, “মাটি, কৃষি, উদ্যান পালন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে মেলায় চাষিদের মধ্যে সব ক’টি বিষয়ে সচেতন করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” মেলায় ছিল ১২টি স্টল। এলাকার চাষিদের ফসল ও সবজির প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল সব কটি দফতরেরও স্টল। সেখানে দফতরের কর্মীরা ছিলেন। চাষিকে নানা চাষবাসের বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে প্রচার চালান তারা।

হাওড়া জয়পুর অমরাগোড়িতে শান্তিমেলা অনুষ্ঠিত হল। উদ্বোধন করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দিলীপকুমার সিংহ। বিভিন্ন স্টলে ছিল বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র, কাঠের তৈরি নকশা, জরির কাজের প্রদর্শনী। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় তিনশোরও বেশি প্রতিযোগী। ছিল গ্রামীণ পিঠে-পায়েস তৈরি করার প্রতিযোগিতা। বুক স্টল ছাড়াও খেলনা ও খাবারের দোকানের ভিড়ে মেলা ছিল জমজমাট।

তামিল ভাষাভাষি মানুষের ঐতিহ্যবাসী কৃষি-উত্‌সব হল পোঙ্গল। বাংলার নবান্নর ধাঁচেই খেতের ফসল ঘরে তোলার পরে এই উত্‌সব আয়োজন করা হয়। রীতি মেনে মকর সংক্রান্তির দিনে হয় পোঙ্গল। ‘মিনি-ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরে দক্ষিণ ভারতের বহু মানুষের বাস। তাই পোঙ্গলের রং প্রতিবছরই এখানে ধরা পড়ে। ওল্ড সেটলমেন্ট, নিমপুরা, মথুরাকাটি-সহ রেলশহরের নানা এলাকায় মকরের দিন ঐতিহ্য মেনেই পোঙ্গল পালিত হয়। ছিল রঙ্গোলির আয়োজনও।

একদিনের উত্‌সব। তবু উত্‌সাহের অন্ত নেই। প্রতিবারের মতো এ বারও কর্ণগড়ে মহামায়ার মন্দিরে হয়ে গেল পৌষ সংক্রান্তি মেলা ও কল্পতরু উত্‌সব। নানা জিনিসের বিকিকিনি ছাড়াও ছিল যাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের ভোগও বিতরণ করা হয়। সেবা সমিতির পক্ষে তরুণ সাউ বলেন, “মঙ্গলবার প্রায় ৩০ হাজার দর্শনার্থীকে প্রসাদ বিতরণ হয়েছে। উত্‌সব একদিনের হলেও মেলা চলে ২ দিন ধরে।” উত্‌সবের দু’দিন চলেছে যাত্রানুষ্ঠান। রানি শিরোমণির কর্ণগড় একটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। কর্ণগড়ের রাজাই মহামায়া মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে চুয়াড় বিদ্রোহে ইংরেজদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন রানি শিরোমণি। ফলস্বরূপ শেষ জীবনটা বন্দিনী হিসেবে কাটাতে হয় তাঁকে। ইতিহাসের গন্ধমাখা কর্ণগড় আর মহামায়া মন্দির ঘিরে আজও আগ্রহে খামতি নেই। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষই এখানে আসেন।

এ বার রজত জয়ন্তী বর্ষ পালিত হল ‘বসিরহাট মহকুমা সংস্কৃতি ও বইমেলা’র। এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই মেলার উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। এ বার মেলায় স্টলের সংখ্যা ছিল ১২০টি। তার মধ্যে ছিল ৪০টি বইয়ের স্টল। মেলার বিভিন্ন দিনে ছিল প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠান এবং বিচিত্রানুষ্ঠান।

তাঁত শিল্পকে বাঁচানোর ডাক দিয়ে শুরু হল এ বছরের ধাত্রীগ্রাম উৎসব। উৎসব উপলক্ষে স্থানীয় মালতীপুর মোড় থেকে ধাত্রীগ্রাম ফুটবল মাঠ পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। মিছিলে ছিল ব্যান্ড, তাসা, ধামসা, মাদল, সানাই। একটি গাড়ির মধ্যে কেউ সুতো কাটছিলেন আবার কেউ তাঁত বুনছিলেন। মিছিলে ছিল একটি ট্র্যাক্টর। সেই ট্র্যাক্টরের টলিতে মাটি ফেলে পোঁতা হয় ধানের চারা। এ ছাড়াও মিছিলে ছিল ছৌ নাচ, রণ পা, ও লোকশিল্পীদের নাচ। হলুদ শাড়িতে আদিবাসী শিল্পীদের নাচ দর্শকদের নজর কাড়ে। স্থানীয় তাঁত শিল্পীরা ছাড়াও মিছিলে হাঁটেন বিভিন্ন স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী, ক্লাবের সদস্যেরা। ছিল স্থানীয় খেলোয়াড় ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। উৎসব উপলক্ষ্যে মাঠ জুড়ে বসেছিল অনেক স্টল। তার মধ্যে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ দফতরের মত সরকারি দফতরের স্টলও ছিল। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, উৎসবে থাকছে মাছ ধরার সরঞ্জাম ও দেশি ও বিদেশি প্রজাতির মুরগীর প্রদর্শনী। উৎসব কমিটির কর্তা বিকাশ রায় বলেন, “এই উৎসব এ বছর দু’বছরে পড়ল। মানুষের সাড়া পেয়ে আমরা খুশি।”

শীতের কুয়াশা গায়ে মেখে পিঠেপুলির খাওয়ার আনন্দই অন্য রকম। সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই রাজডাঙার খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ‘রাজডাঙা উত্‌সব ও পিঠেপুলি উত্‌সব’। এ বার তৃতীয় বর্ষ। পাঁচ দিন ধরে চলে এই উত্সব। পাটিসাপ্টা, গোকুল পিঠে তো ছিলই, এ ছাড়াও ছিল দুই বাংলার হারিয়ে যাওয়া নানা ধরনের পিঠের সম্ভার। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ রকমের পিঠেপুলি এখানে বিক্রির জন্য আনা হয় বলে জানান উত্‌সব কর্তৃপক্ষ। কলকাতা পুরসভার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (সড়ক) সুশান্তকুমার ঘোষ জানান, গত দু’বছর ধরে এই উত্‌সব চলছে। এ বারেও এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে মহিলাদের ৩৫টি দল এই উত্‌সবে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরাই বিক্রি করেন নানা ধরনের পিঠেপুলির সম্ভার।

বইমেলার পাশাপাশি খাদ্যমেলা অনুষ্ঠিত হল আসানসোলে। রেল মাঠ মেলা প্রাঙ্গণে প্রদীপ জ্বালিয়ে মেলার সূচনা করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার। এ দিন পুরনো রামকৃষ্ণ আশ্রম মোড় থেকে ‘বই-এর জন্য হাঁটুন’ মিছিল শুরু হয়ে, শেষ হয় মেলা প্রাঙ্গনে। মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পা মেলান বুদ্বিজীবী ও সাধারণ মানুষও। মেলা কমিটির তরফে জানা গিয়েছে, মেলায় ৬৮টি স্টল রয়েছে। আসানসোল যুব সংসদের উদ্যোগে এই মেলা ৩৩ বছর অতিক্রান্ত হল এ বার। অন্য দিকে, বিএনআর গ্রাউন্ড ক্লাবের উদ্যোগে খাদ্যমেলা এ বার ১৫ বছরে পড়ল।

কৃষি মেলার আসর হয়ে গেল কালনা ১ ব্লকের বিজেরা ফুটবল মাঠে। বাঘনাপাড়া অঞ্চল কৃষি মেলা কমিটির উদ্যোগে ওই মেলা হয়। চাষিদের চাষের কাজে ব্যবহৃত নানা জিনিস, যেমন- জল তোলার মেশিন, পাওয়ার টিলার, হ্যান্ড ট্রাক্টর-সহ নানা যন্ত্র মাঠে সাজানো হয়। প্রায় ৪০ ধরণের সব্জির প্রদর্শনীও হয়। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মহকুমা কৃষি আধিকারিক আশিস বারুই, সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ, সুব্রত ঘোষ, কালনা ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক আশিস দত্ত-সহ বেশ কিছু কৃষি বিশেষজ্ঞ। তাঁরা এলাকায় কী কী বিকল্প চাষের সম্ভাবনা রয়েছে এবং চাষের জন্য মাটি পরীক্ষার কী গুরুত্ব তা নিয়ে আলোচনা করেন। পার্থবাবু বলেন, “সরকারি উদ্যোগে বিনা পয়সায় মাটি পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু চাষিদের তেমন কোনও উদ্যোগ নেই। অথচ মাটি পরীক্ষা করেই একমাত্র জানা যায় কোন ফসল কোথায় ভাল হবে।” মেলা কমিটির তরফে পরিমল দাস জানান, এলাকার চাষিদের আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে সচেতন করতেই এই প্রয়াস।

২৪তম ঘাটাল মহকুমা পত্র-পুষ্প প্রদর্শনী ও মেলার সূচনা হল। ঘাটাল শহরের প্রসন্নময়ী স্মৃতি উদ্যান পার্কে চার দিনের এই মেলার উদ্বোধন করেন ইছাপুর মঠের স্বামী প্রভুনামানন্দ। মেলা কমিটির পক্ষে প্রদীপ বেরা জানান, প্রতিদিনই নানা রকমের অনুষ্ঠান হয়েছে। এ ছাড়াও ফুল চাষের পদ্ধতি নিয়ে প্রতিদিন সেমিনার হয়।

হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (এইচপিসিএল) এর উদ্যোগে দেশের ১০টি রাজ্যের ২৫০টি শহরে আয়োজিত হল ‘সুরক্ষা সচেতনা অভিযান মেলা’। গ্রামীণ মেলার মোড়কে হওয়া এই মেলাতে রান্নাঘরের সুরক্ষা বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করাই ছিল মেলার মূল বিষয়। এইচপিসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মেলায় বোঝানো হচ্ছে, বাড়ির সুরক্ষার দায়িত্ব একা মহিলাদের নয়, সব সদস্যেরই। রাজ্যে এই মেলা হয়েছে কালনা, দুর্গাপুর ও আসানসোলে।