২৯ আশ্বিন ১৪১৯ সোমবার ১৫ অক্টোবর ২০১২
 
ঐতিহ্যের আরাধনা
বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের দুর্গাপুজো
ইতিহাস অনুযায়ী, ৯১৭ বঙ্গাব্দে জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের চার রাজপুত্র পারিবারিক দুর্গাপুজো শুরু করেন। এর পরে কেটে গিয়েছে পাঁচশো বছর। সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে পুরনো জৌলুস। ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ির এক অংশ আগাছায় ঢেকেছে। রাজবাড়ির অন্দরে মাথা চাড়া দিয়েছে একের পর এক উত্তরাধিকার বির্তক, মামলা-পাল্টা মামলা। কিন্তু ঐতিহ্য থেমে যায়নি। এখনও মনসা পুজোর সময় বেজে ওঠে ঢাক। চণ্ডীমণ্ডপে কাঠামো পুজো করে শুরু হয় মূর্তি তৈরির কাজ।

বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে দেবীর আগমন হয় পরিবারের রথে চেপে। আর পুজোর জোগাড় শুরু হয় মাস দুয়েক আগে থেকেই। মথুরা, বৃন্দাবন, বারাণসীর মতো পাঁচ তীর্থের জল নিয়ে আসা হয় বোধনের জন্য।

তপ্ত কাঞ্চন বর্ণের দেবী প্রতিমার পাশে শিবঠাকুরের চেলা ভৃঙ্গীর স্ত্রী বিজয়া এবং দেবীর প্রিয়তম সখি জয়া। শতাব্দী পুরনো প্রথা মেনে এখনও রাজবাড়ির সন্ধিপুজো বহিরাগতদের জন্য নিষিদ্ধ। এক সময়ে নরবলির প্রথা ছিল। তাই প্রতীকি হিসেবে নিশুতি রাতে সন্ধিপুজোয় হাড়িকাঠে বলি দেওয়া হয় মাটি-ধান দিয়ে তৈরি নরমুণ্ড। অনেক বাড়ির পুজো বা বারোয়ারি পুজোয় দুর্গা প্রতিমার মাথার পেছন দিকে শিব ঠাকুরের ছবি থাকে। তবে বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির পুজোয় দেবী মূর্তির পেছনে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, বিশ্ব সৃষ্টির তিন দেবতাই থাকেন। পুজোয় প্রতি দিনই অন্নভোগ দেওয়া হয়। প্রাচীন প্রথা মেনে নবমী পুজোর পরেই দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এবং এখনও রাজপরিবারের কোনও সদস্যই দেবীর বিসর্জন দেখেন না।

ইতিহাসবিদ উমেশ শর্মার কথায়, ৫০০ বছরের ঐতিহ্য বহন করে পুজো হয়ে আসছে বৈকুন্ঠপুরের রাজবাড়িতে। খুঁটিনাটি সব আচার-বিধি না মানলেও, কিছু বিশেষ রীতিনীতি হুবহু মানা হয় এখনও।
তথ্য ও ছবি: অনির্বাণ রায়
সেনগুপ্ত পরিবারের মাতৃ আরাধনা
ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় সেনগুপ্ত পরিবারের আবাসস্থল ‘রজনীকুটির’। ১৯৪৮ সাল থেকে এ পার বাংলায়, এই বাড়িতেই শুরু হয় তাদের পারিবারিক দুর্গাপুজো। আগে পুজো হত ফরিদপুরের বান্ধব-দৌলতপুর গ্রামে। সেখানেই ছিল সেনগুপ্তদের আদি ভদ্রাসন। ১৭৫২ সালে, প্রখ্যাত কবিরাজ রামগতি সেনগুপ্তর আমলে ফরিদপুরের পুজোয় জৌলুস বাড়ে। দেশভাগের পর, ১৯৪৮ সালে রামগতি সেনগুপ্তর উত্তরসূরিরা ঝাড়গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। তবে পূর্ববঙ্গের বসতবাটি ছেড়ে এলেও পুজো ছাড়তে পারেননি তাঁরা। পুজোর বয়স তাই তিনশো পেরিয়েছে।

সেনগুপ্ত পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুব্রত সেনগুপ্ত বলেন, “এক সময় লাগাতার বর্গি হামলার জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষেরা আত্মগোপন করে পুজোর আয়োজন করতেন বলে শুনেছি। ওই অবস্থায় ভোগ রাঁধার সুযোগ হতো না। ‘ভোগ’ হিসেবে কাঁচা আনাজ নিবেদন করা হত। সেই প্রথা এখনও চলে আসছে।” তাই এখনও রান্না করা অন্নভোগ হয় না। পরিবর্তে দেবীকে নিবেদন করা হয় কাঁচা শাকসব্জি, চাল, ডাল ও মশলাপাতি। দেওয়া হয় ফল, খই, মুড়কি ও নারকেল নাড়ুর নৈবেদ্যও। আগে পুজোয় তিন দিন— সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে ছাগবলি দেওয়া হত। ১৯৯২ সাল থেকে পশুবলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

একচালার প্রতিমার বিশেষত্ব হল, দুর্গার ডান দিকে লক্ষ্মীর পাশে থাকেন কার্তিক এবং বাঁয়ে সরস্বতীর পাশে থাকেন গণেশ। কেন এই পরিবর্তন তা পরিবারের সদস্যদের অজানা। সুব্রতবাবু বলেন, “পূর্ববঙ্গে যেমন প্রতিমা হত, ঝাড়গ্রামেও অনুরূপ প্রতিমা তৈরি করানো হয়। গণেশ-কার্তিকের এই অবস্থানগত পরিবর্তনের কারণ আমাদের জানা নেই।”

পরিবারের প্রবীণা গৃহিনী আলো সেনগুপ্ত বলেন, “বাড়ির বেশির ভাগ সদস্যই কলকাতা কিংবা বাইরে থাকেন। আমিও কলকাতায় থাকি। তবে পুজোয় সবাই এখানে চলে আসি। ক’টা দিন হৈচৈ করে কেটে যায়।” ফরিদপুরে পুজোর সময় যাত্রা, কবিগান ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসতো। আতসবাজির রোশনাই নজর কাড়ত আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষের। সেই দিন আর নেই। আড়ম্বর গিয়েছে, তবে ঐতিহ্য আর আন্তরিকতা আজও অম্লান রয়েছে সেনগুপ্ত বাড়ির পুজোয়।
তথ্য: কিংশুক গুপ্ত ও ছবি: দেবরাজ ঘোষ
রাজ পরিবারের বড়দেবী পুজো
রাজা নেই, নেই রাজ্যও। কিন্তু রাজ আমলের নিয়মনিষ্ঠা মেনে পুজো আয়োজনের পরম্পরার ঐতিহ্য এতটুকু বদলায়নি। রাজাদের আমলে শুরু হওয়া প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন কোচবিহারের বড়দেবী পুজো ঘিরে তাই বাসিন্দাদের মধ্যেও বাড়তি উৎসাহ রয়েছে। ঢাকে কাঠি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোচবিহার জুড়ে প্রতি বার দেখা যায় একই ছবি।

জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ডাঙ্গোরাই মন্দিরে ময়না কাঠের দণ্ড বসিয়ে যূপচ্ছেদন পুজোর পর তা মদনমোহন বাড়িতে আনা হয়েছে। এর পর বড়দেবী মন্দিরে পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকে। সম্পূর্ণ পুজো পর্ব মিটে যায় জগদ্ধাত্রী পুজোর অষ্টমীতে, বড়দেবী মন্দিরেই, বামা পুজোর মাধ্যমে। মহালয়ার পরের দিন, অর্থাত্ প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত টানা পুজো চলে।

বড়দেবী এখানে রক্তবর্ণা। দেবীর এক দিকে সাদা সিংহ, অন্য দিকে বাঘ। দুই পাশে কার্তিক, গণেশ কিংবা লক্ষ্মী, সরস্বতীর বদলে আছেন জয়া, বিজয়া। জনশ্রুতি রয়েছে, মহারাজা বিশ্বসিংহ স্বপ্নে দেখা দেবী রূপই ওই প্রতিমায় উঠে এসেছে।
সপ্তমী থেকে দশমী, বড়দেবীর পুজোয় চলে অজস্র বলি। ওই তালিকায় মহিষ, পাঁঠা, হাঁস, পায়রা থেকে মাগুর মাছ সবই রয়েছে। এ ছাড়াও পুজোর সব থেকে বড় ব্যতিক্রমী উপকরণ নররক্ত। অষ্টমীর রাতে গুপ্ত পুজোয় দেবীর সামনে বসে আঙুল চিরে রক্ত দেন কোচবিহারের এক বাসিন্দা, শিবেন রায়। ওই রক্তে ভেজানো পুতুলের বলি দেওয়া হয়। বংশানুক্রমিক ভাবে রায় পরিবারের লোকেরা ওই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কোচবিহার রাজ পরিবারের অমিয় বক্সি বলেন, “পুজোর বিধি, উপকরণ থেকে দেবী প্রতিমা সবেতেই বড়দেবী স্বতন্ত্র। দেবী দর্শনে বেরিয়ে কোচবিহারের বাসিন্দারা এক বারের জন্য হলেও বড়দেবী মন্দিরে যাবেনই।”

কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ফি বছর বড়দেবীর পুজোয় মানত করেন অসংখ্য মানুষ। অষ্টমীতে বলি দেওয়ার জন্য মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব তাপস মণ্ডলের কথায়, “রাজাদের স্মৃতি বিজড়িত বড়দেবীর পুজোয় সমস্ত আয়োজনই করা হয় রীতি মেনে।”
তথ্য: অরিন্দম সাহা ও ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
 
হাওয়াবদল
মুর্শিদাবাদ
বিষ্ণুপুর আমরা ক’জন ক্লাব
নদিয়া
বাদকুল্লার অনামী ক্লাব
উত্তরবঙ্গ: রায়গঞ্জ
সুদর্শনপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব
উত্তরবঙ্গ: মালদহ
বিবেকানন্দ স্মৃতি সংসদ
হাওড়া
শিবপুর নবারুণ সঙ্ঘ
বাঁকুড়া
মধ্য কেন্দুয়াডিহি আদি সর্বজনীন
পুরুলিয়া
ভামুরিয়া বাথানেশ্বর
সবর্জনীন দুর্গাপুজো
বর্ধমান
শহরের সেরা তিন দুর্গাপুজো
দুর্গাপুর
মার্কনি দক্ষিণপল্লি
সর্বজনীন দুর্গাপুজো
মেদিনীপুর (শহর)
কোতয়ালি বাজার
সর্বজনীন দুর্গাপুজো
পূর্ব মেদিনীপুর: রামনগর
রামনগর বাজার
ব্যবসায়ী সমিতি
উত্তর ২৪ পরগনা: বনগাঁ
মতিগঞ্জ ঐক্য সম্মিলনী
পূর্ব মেদিনীপুর: হলদিয়া
হাজরা মোড় কমিটির দুর্গোৎসব
উত্তর ২৪ পরগনা: বেলঘরিয়া
মানসবাগ সর্বজনীন দুর্গোৎসব
উত্তর ২৪ পরগনা: বারাসত
হরিহরপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.