১ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯ মঙ্গলবার ১৫ মে ২০১২


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।
সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন,
চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব সবমিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।


খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়...
ঐতিহ্য
• হিচককের নির্বাক ছবি
সাংস্কৃতিক অলিম্পিয়াডের অঙ্গ হিসেবে লন্ডনে শুরু হয়েছে হিচকক নির্মিত চলচ্চিত্র উৎসব। উদ্যোক্তা ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট। এই উত্সবে ছবি দেখানোর পাশাপাশি তাঁর দু’টি নির্বাক ছবি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের সূচনাও করবে ইনস্টিটিউট। ‘শ্যাম্পেন’ ও ‘ব্ল্যাকমেইল’ নামের এই দু’টি নির্বাক ছবি হিচকক তৈরি করেন গত শতাব্দীর কুড়ির দশকের শেষ ভাগে। উৎসবে ‘লাইভ’ সঙ্গীতের সঙ্গে ছবি দু’টি দেখানো হবে, জানিয়েছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। তিন মাস জুড়ে পালিত এই উৎসবে অ্যালফ্রেড হিচকক পরিচালিত ৫৮টি ছবি দেখানোর বন্দোবস্ত করেছে বিএফআই কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে ‘সাইকো’, ‘ভার্টিগো’, ‘বার্ডস’, ইত্যাদি বিশ্বখ্যাত ছবি। অভিনেতা টিপ্পি হেড্রেন, ব্রুস ডার্নও উত্সবে অংশ নেবেন বলে জানানো হয়েছে ইনস্টিটিউটের তরফ থেকে। ১৭ এপ্রিল লন্ডনে এই চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ‘ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর’ হেদার স্টুয়ার্ট বলেন, লন্ডন অলিম্পিকের বছরে অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের মতোই বিএফআই-ও কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করেছে। শেক্সপিয়র জাতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ হলেও হিচকককে সে স্থান দেওয়া হয়নি বলে এই অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্টুয়ার্ট। তিনি আরও বলেন যে, চিত্রকলার আধুনিক রূপ পরিবর্তনে যে ভূমিকা নিয়েছিলেন পিকাসো, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও একই ভূমিকা হিচককের। বিশেষত ‘সাইকো’র পর চলচ্চিত্র পরিচালনার রীতিতে একটা আমূল পরিবর্তন আসে। অনুষ্ঠানে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ছবির কিছু অংশও দেখানো হয়। ১৯২৯ সালে ৩০ বছরের হিচকক পরিচালিত এই ছবিটি খোলা আকাশের নীচে দেখানো হবে আগামী ৬ জুলাই। ‘লন্ডন ২০১২’ উৎসবের ডিরেক্টর রুথ ম্যাকেঞ্জি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিংশ শতকের সেরা শিল্প স্রষ্টাদের অন্যতম ছিলেন হিচকক।

• ১০০ বছর পর দ্বিতীয় টাইটানিক
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
১৬ এপ্রিল ১৯১২
ঠিক ১০০ বছরের ব্যবধান। ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল ডুবে গিয়েছিল টাইটানিক। আর তার ঠিক শতবর্ষ পর একবিংশ শতাব্দীর টাইটানিক গড়তে উদ্যোগী হলেন অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম ধনী ব্যক্তি ক্লাইভ পামার। গত মাসেই ক্লাইভ তাঁর উচ্চাভিলাষী এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। ১৯০৯ সালের ৩১ মার্চ জন পিয়ারপন্ট মরগান নামের একজন মার্কিন ধনকুবের এবং ইন্টারন্যাশনাল মার্কেন্টাইল মেরিন কোম্পানির তত্ত্বাবধানে সর্বপ্রথম টাইটানিকের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখনকার দিনের প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এই বিলাসবহুল জাহাজের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ৩১ মার্চ ১৯১২ সালে। ক্লাইভ পামার তাঁর এই দ্বিতীয় টাইটানিকের কাজের বরাত দিয়েছেন চিনের রাষ্টায়ত্ত সংস্থা সিএসসি জিনলিং শিপইয়ার্ড-কে। চিনা সংস্থাটি অবিকল আসল টাইটানিকের প্রতিরূপ গড়বে বলে জানিয়েছেন ক্লাইভ। তিনি জানিয়েছেন, দ্বিতীয় টাইটানিক আগেরটির মতো বিলাসবহুল হলেও একবিংশ শতকের সমস্ত রকমের আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এর দিকনির্দেশ ব্যবস্থা তৈরি হবে। এমনকী এই জাহাজে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হবে আধুনিক প্রযুক্তিকে মাথায় রেখে। তাঁর আশা ২০১৬-তে ইংল্যান্ড থেকে নিউ ইংল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে দ্বিতীয় টাইটানিক। চিনের নৌবাহিনীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই টাইটানিককে পাহারা দিয়ে নিউ ইয়র্কে নিয়ে যাওয়ার জন্য। টাইটানিক ডোবার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে গত মাসে বেশ কিছু অনুষ্ঠান হয়েছে ইংল্যান্ডে। পামার জানিয়েছেন, যাঁরা আসল টাইটানিক তৈরি করেছিলেন দ্বিতীয় টাইটানিক হবে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ। একশো বছর আগে তৈরি আসল টাইটানিকের কথা মানুষ আজও মনে রেখেছে, পামারের ইচ্ছে দ্বিতীয় টাইটানিককেও মানুষ মনে রাখুক আরও একশো বছর।

• বিশ্বযুদ্ধে ভেঙে পড়া বিমান খুঁজতে যৌথ অভিযান
১৯৪৪ সালের জানুয়ারিতে কনকনে ঠান্ডায় যে মার্কিন বিমানটি ভারতের অসমের উপর দিয়ে তৎকালীন ‘বর্মা’র (মায়ানমার) দিকে ধেয়ে গিয়েছিল, তাকে ডাকা হত ‘হট অ্যাজ হেল’ নামে। শত্রুবিমানের আক্রমণে বিস্ফোরণ ঘটে তাতে। গ্যাসোলিন ভর্তি বিমানটি আছড়ে পড়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত পাহাড়ি খাদে। ওই ঘটনার ঠিক এক বছর আগে, জাপানি মিৎসুবিশি বিমান থেকে ছোঁড়া গুলিতে অরুণাচল প্রদেশে ভেঙে পড়েছিল বি-২৫ ডি নামের একটি মার্কিন বিমান। অসম-অরুণাচলের পাহাড়ে লুকিয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এমন অন্তত ৯০টি মার্কিন বিমানের ধ্বংসাবশেষ। সম্প্রতি ভারত ও আমেরিকা ওই এলাকায় যৌথ অনুসন্ধান-অভিযানের সিদ্ধান্ত নিল। যেটুকু সম্ভব ওই ভগ্নস্তূপ ফিরিয়ে নিয়ে যাবে আমেরিকা। দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস সূত্রে জানানো হয়েছে, জাপানের হাতে ধ্বংস হওয়া ওই বি-২৫ ডি বিমানটির চালকের নাম ছিল জন পোর্টার। তাঁর ভাইপো জন হাউলে এবং পরিবারের অন্যরা আজ পর্যন্ত অপেক্ষায় রয়েছেন, ‘নিখোঁজ’ পোর্টারের শেষ পরিণতি জানার জন্য। এত বছর পর ওই ধ্বংসাবশেষ ঘেঁটে পোর্টারের দেহাবশেষ পাওয়া যাবে কি না, তা অবশ্য খুবই অনিশ্চিত। তবুও গোটা বিষয়টির মধ্য দিয়ে এক ধরনের সান্ত্বনা পাচ্ছেন তাঁর পরিবার। সরকারি ভাবে না হলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে স্মৃতিচিহ্ন খোঁজার কাজটি অবশ্য হয়ে এসেছে। গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন নাগরিক ক্লেটন কুলেস এই কাজটি অক্লান্ত ভাবে করে যাচ্ছেন। বি-২৫ ডি-এর ভগ্নাবশেষ খোঁজার কাজে বেশ কিছুটা অগ্রসরও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে সরকারি চুক্তি না থাকার জন্য তা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি।

• পিকাসোকে হারাল ৬০০ কোটির ‘চিৎকার’
পাবলো পিকাসোকে হারিয়ে দিলেন এডভার্ড ম্যুন্খ। সদবি নিউ ইয়র্কের এক নিলামে উনিশ শতকের এই শিল্পীর ‘দ্য স্ক্রিম’ ছবিটি ১১.৯ কোটি ডলারে বিক্রি হয়েছে। ভারতীয় অঙ্কে যার মূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এত দিন পিকাসোর আঁকা ‘ন্যুড, গ্রিন লিভ্স অ্যান্ড বাস্ট’ ছিল সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ছবি। ২০১০ সালে ক্রিস্টির নিলামে সেটি বিক্রি হয় সাড়ে দশ কোটি ডলারে। সেই রেকর্ড ভেঙে দিল নরওয়ের এক্সপ্রেশনিস্ট ধারার শিল্পী ম্যুন্খের ১৮৯৫ সালে আঁকা ‘দ্য স্ক্রিম’। নিলামের জন্য তৈরি বিশেষ পুস্তিকায় ছবিটির প্রাথমিক মূল্য ৪ কোটি ডলার ধার্য করা হয়েছিল। শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, ৮ কোটি ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে ছবিটির দাম। সেই অঙ্ক শেষ পর্যন্ত ১১৯,৯২২,৫০০ ডলার ছুঁয়ে ফেলে। কেন এত বিখ্যাত ছবিটি? শিল্পী যোগেন চৌধুরীর কথায়, “এই ছবিটি এক্সপ্রেশনিস্ট শিল্পধারার, যাকে বলে, ‘আইকন’। ছবিটি বিশ্বখ্যাত শুধু নয়, সুবিদিতও।” এত দিন ছবিটির মালিক ছিলেন নরওয়ের শিল্পপতি পেটার ওলসেন। তাঁর বাবা ছিলেন ম্যুন্খের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৮৯৩ থেকে ১৯১০-এর মধ্যে একই বিষয়বস্তু অবলম্বনে, একই নামে চারটে ছবি এঁকেছিলেন ম্যুন্খ। গাল তোবড়ানো টাকমাথা একটা মানুষ, গায়ে নীল শার্ট। দু’হাতে নিজের কান চেপে চিৎকার করছে। পিছনে দু’টি মানুষের অস্পষ্ট অবয়ব। ঘটনাস্থল অসলোর রেলিং ঘেরা পাহাড়ি সমুদ্রসৈকত, সময় সূর্যাস্ত। ছবিগুলির প্রধান রং উজ্জ্বল নীল ও লাল। ম্যুন্খের আঁকা দু’টি ‘স্ক্রিম’ অসলো’র ন্যাশনাল গ্যালারি এবং তৃতীয়টি অসলোর ‘ম্যুন্খ জাদুঘর’-এ রয়েছে। ছবিটির ফ্রেম ম্যুন্খ নিজেই রং করে সেখানে ছবিটির প্রসঙ্গে একটি কবিতা লিখে রেখেছিলেন। প্রথমে তিনি ছবিটির নাম দেন ‘দ্য স্ক্রিম অফ নেচার’। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘মোনালিসা’র মতোই তার খ্যাতি আকাশচুম্বী। ছবি চারটি গত এক শতকেরও বেশি সময় ধরে ‘আধুনিক’ যন্ত্রণার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বহু বার, বহু জায়গায়।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• বুদ্ধের তিন হাজার ‘মাথা’
চিনে প্রায় তিন হাজার বুদ্ধ মূর্তির মাথা খুঁজে পেলেন সে দেশের প্রত্নতত্ত্ববিদরা। গত মাসে চিনের হান্দান শহরে এক উদ্ধার কাজের সময় এই ‘আবিষ্কারে’র দাবি করেছেন তাঁরা। বুদ্ধের মাথাগুলি প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো, ধারণা বিশেষজ্ঞদের। চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সাইন্সেস-এর সঙ্গে যুক্ত এক প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে ১৯৪৯ সালের পর এই প্রথম চিনে এ ধরনের বড়সড় আবিষ্কার হল। ভগ্নপ্রায় বুদ্ধের মূর্তিগুলির বেশির ভাগই সাদা মার্বেল পাথর ও লাইমস্টোন দিয়ে তৈরি। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই মূর্তিগুলি পূর্ব উই এবং উত্তর কুই বংশের সময়কালের অর্থাৎ ৫৩৪ থেকে ৫৭৭ খ্রিস্টপূর্বের হতে পারে। পূর্ব উই এবং উত্তর কুই বংশের সময়কালের প্রাচীন রাজধানী ইয়ে-র বাইরে এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় এই মূর্তিগুলির সন্ধান মেলে। মনে করা হচ্ছে, উত্তর কুই বংশের অবসান কালের শেষ পর্যায়ে দেশ থেকে বৌদ্ধ ধর্মের বিলুপ্তি ঘটাতেই এই মূর্তিগুলির ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছিল।

• তিরুপুরে গুহাচিত্র
তামিলনাড়ুর তিরুপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দু’টি গুহায় মিলেছে গুহাচিত্রের সন্ধান। তিরুপুরের উদুমালাইপেট্টাইয়ের জঙ্গলে ভানাপেচিয়ালাই ও ভানারাপারাই নামের এই দু’টি গুহায় মিলেছে লাল-সাদা ও গৈরিক রঙের বেশ কিছু গুহাচিত্র। এর মধ্যে ভানারাপারাই গুহার ২৮টি স্কেচের মধ্যে রয়েছে জীবজন্তু ও মানুষের চিত্র। এ ছাড়াও এখানে বেশ কিছু হ্যান্ড প্রিন্টেরও দেখা মিলেছে। অন্য দিকে ভানাপেচিয়ালাই গুহায় রয়েছে লালচে গৈরিক রঙের বেশ কিছু চিত্র। এর মধ্যে মানুষের হাতের ছ’টি লাল রঙের ছাপ, এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি অস্পষ্ট চিত্রও মিলেছে এখানে। প্রাথমিক ভাবে অনুমান ভানারাপারাইয়ের গুহাচিত্রগুলি প্রায় তিন হাজার ও ভানাপেচিয়ালাইয়ের গুহাচিত্রগুলি প্রায় দু’হাজার বছরের পুরনো। তবে বাদুড় ও মৌমাছিদের জন্য ‘এলিফ্যান্ট করিডর’-এর মতো দুর্গম জায়গায় অবস্থিত গুহাগুলিতে দিনের বেলাতেও পৌঁছনো বেশ কষ্টসাধ্য, জানিয়েছেন গুহাচিত্রগুলির আবিষ্কর্তা।

• ‘নেতানিয়াহু’ সিলমোহর

ইজরায়েলে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো সিলমোহর। পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু-র নামের মতোই এই সিলমোহরের নাম ‘নেতানিয়াহু’। টেম্পল মাউন্টের কাছে এক ভগ্নপ্রায় বাড়ি থেকে এই সিলমোহরটির খোঁজ মিলেছে। বাড়িটি খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকের শেষ ভাগ থেকে ৫৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝামাঝি প্রথম টেম্পল যুগের। প্রাচীন ইহুদি মত অনুযায়ী, এই সিলমোহরটি মাতানিয়াহু-র। ১ ইঞ্চির কম ব্যাসার্ধের এই সিলমোহরটি ‘সেমিপ্রেসাস’ পাথর দিয়ে তৈরি। খনন কাজের নেতৃত্বে থাকা এলি শুকরন জানিয়েছেন, সিলমোহরটি একটি আংটিতে আটকানো ছিল। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, প্রায় তিন হাজার বছর আগে এই সিলমোহরটিকে চিঠিতে সাক্ষর করার কাজে ব্যবহার করা হত।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• সন্ধান মিলল বুরুরি ব্যাঙের
আফ্রিকার বুরুন্ডিতে এক অভিযান চলাকালীন সরীসৃপবিদরা পুনরায় লম্বা আঙুলযুক্ত বুরুরি ব্যাঙের খোঁজ পেলেন। এই প্রজাতির ব্যাঙকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৪৯ সালে। তার পর থেকেই এদের অস্তিত্ব আর চোখে পড়েনি। দেহাকৃতিতে এরা প্রায় দেড় ইঞ্চি লম্বা। কালো ও নীলচে-ধূসর রঙের শরীর। পুরুষ ব্যাঙের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, তাদের প্রত্যেক পায়ে একটি অতিরিক্ত লম্বা আঙুল, যাকে মানুষের ‘অনামিকা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন সরীসৃপবিদরা। তবে এই বিশেষ আঙুলের কার্যকারিতা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বিশেষ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। অন্য দিকে, ক্যামেরুনের পার্বত্য অঞ্চলে এদের নিকট আত্মীয় প্রজাতির ব্যাঙেরও সন্ধানও পাওয়া গেছে বলে জানান বিজ্ঞানীরা।

• কাজিরাঙার সুমারিতে ১১৮টি বাঘের সন্ধান
গত তিন বছরের টানা নজরদারি ও সুমারি শেষে কাজিরাঙা ব্যাঘ্র প্রকল্প নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করল অসম বন দফতর। কাজিরাঙায় বাঘের সংখ্যা ১১৮টি বলে এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। তবে সুমারি চলাকালীনই ছ’টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১১ অবধি শতাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করে কাজিরাঙার চারটি রেঞ্জে বাঘের হদিস করা হয়। অসমের বনমন্ত্রী রকিবুল হুসেন, প্রধান মুখ্য বনপাল সুরেশ চাঁদ, কাজিরাঙার অধিকর্তা সঞ্জীব বরা, ডিএফও দিব্যধর গগৈ ও বাঘ গণনার মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এম ফিরোজ আহমেদ গত ৩০ এপ্রিল কাজিরাঙায় রিপোর্ট প্রকাশ করে জানান, গত বছর এনটিসিএ কর্তৃপক্ষ কাজিরাঙায় বাঘের যে হিসাব দিয়েছিলেন সেই অনুযায়ী এখানে বাঘের সংখ্যা ছিল অন্তত ৮১ ও সর্বাধিক ১৩১টি। কাজিরাঙা থেকে কার্বি আংলং, নামেরি ও ব্রহ্মপুত্রের চর বরাবর বাঘের বিস্তীর্ণ চারণভূমি। কাজিরাঙার হাতি-ঘাসের মধ্যে ক্যামেরা বসানো ও বাঘ গণনার কাজ খুবই কঠিন ছিল। অবশেষে সাফল্যের সঙ্গে ক্যামেরা-সুমারি সারা হয়েছে। ফিরোজ আহমেদ বলেন, ২০০৯ সালে ৫০টি ক্যামেরা ব্যবহার করে ৪০টি, ২০১০ সালে প্রথম দফায় ৩৫টি ক্যামেরা ব্যবহার করে ২৮টি, দ্বিতীয় দফায় ২৬টি ক্যামেরা বসিয়ে ২০টি ও ২০১১ সালে ১০৭টি ক্যামেরা ব্যবহার করে ৬৯টি বাঘের ছবি মেলে।

• সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে, বলছে পরিবেশ মন্ত্রক
প্রাথমিক বাঘ সুমারিতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ার ইঙ্গিত দিল রাজ্যের বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। সারা দেশে কয়েক বছর ধরেই বাঘ সুমারি চালু রেখেছে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই তিনটি পর্বের সমীক্ষা থেকে যা তথ্য এসেছে তাতে মন্ত্রক মনে করছে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আগের থেকে বেড়েছে। মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী এখন সুন্দরবনে ৭০ থেকে ৮০-র কাছাকাছি বাঘ রয়েছে। প্রাথমিক সমীক্ষায় যে ভাবে সজনেখালির কাছে ন্যাশনাল পার্ক (ওয়েস্ট রেঞ্জ)-এ ২২টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তাতে উৎসাহী জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের ডিআইজি এইচ এস নেগি। তাঁর কথায়, “চতুর্থ পর্বে ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘের উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। ফলে সুন্দরবন-সহ দেশে সংখ্যায় মোট কত বাঘ রয়েছে তা জানা যাবে।”

• মিজোরামের ডাম্পা অরণ্যে বাঘের হদিস
ডাম্পা মিজোরামের বৃহত্তম অভয়ারণ্য। বাংলাদেশ ঘেঁষা, মামিট জেলার এই অভয়ারণ্যটি ১৯৯৪ সালে ব্যাঘ্র সংরক্ষিত প্রকল্পের তালিকায় উঠেছে। ২০০ থেকে ৮০০ মিটার উচ্চতা অবধি বিস্তৃত, ৫৫০ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অভয়ারণ্যে বাঘ ছাড়াও চিতাবাঘ, মেঘলা চিতাবাঘ, বুনো কুকুর, স্লথ, স্লো লরিস, বিন্টুরং, বৃহৎ কাঠবিড়ালি, সজারু, প্যাঙ্গোলিন, উল্ল্ক, গউর-সহ বিভিন্ন তফশীলভুক্ত প্রাণীর বাস। ডাম্পার ডিএফও লালথানহুয়া জাথাং বলেন, “সম্প্রতি আরণ্যক ও বনবিভাগ, ডাম্পায় যে সমীক্ষা চালিয়েছে তাতে, বাঘের পায়ের ছাপ ও বিষ্ঠার নমুনা মেলে। বিষ্ঠাগুলি, আরণ্যকের গুয়াহাটি গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছিল। তবে, ক্যামেরায় বাঘের ছবি এখনও ধরা পড়েনি। ২০১০ সালের সুমারি অনুযায়ী, এখানে ৫টি বাঘ থাকার কথা।” আরণ্যকের তরফে জানানো হয়েছে, বিষ্ঠার ২৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ডাম্পায়, ৯টি বাঘ থাকার প্রমাণ মিলেছে। মিজোরামের বনকর্তারা জানান, দুর্গম ডাম্পার হাল-হকিকৎ জানতে, ছয় দফায় সমীক্ষা হবে। যার প্রথম তিন দফা, নমুনা সন্ধান, ক্যামেরা ট্রাপিং ও বিষ্ঠা সংগ্রহের কাজ শেষ। চতুর্থ পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে। ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এ মোট ৫৫টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে, কেবলমাত্র উত্তর অংশে ক্যামেরা ট্র্যাপিং হয়েছে। দক্ষিণের কাজ এখনও বাকি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৩১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে ৮০ কিলোমিটার এলাকা ডাম্পার আওতায় পড়ে।

পার্বণ
• কামাক্ষায় অম্বুবাচী মেলা
বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের ‘কল্যাণে’ তাণ্ডবরত শিবের কাঁধে থাকা সতীর দেহের ছিন্নভিন্ন অংশ যেখানে যেখানে পড়ে, হিন্দু পুরাণ মতে সে সব জায়গাই হয়ে ওঠে দেবীর পীঠস্থান। তেমন একান্নপীঠের উল্লেখ পাওয়া যায়। মতান্তরে আবার কেউ কেউ বলেন পীঠস্থানের সংখ্যা ৫২। দেবীর এই পীঠের অন্যতম অসমের গুয়াহাটির কাছে কামাক্ষা। সতীর যোনিদেশ এখানে পড়ে। আর প্রতি বছর বর্ষাকালে এই কামাক্ষায় দেবীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে অম্বুবাচী তিথীতে এক মেলা আয়োজিত হয়। নাম তার অম্বুবাচী মেলা। প্রতি বছর চার দিন ধরে এই মেলাটি চলে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ তাঁদের কামনা পুরণের আসায় ছুটে আসেন এখানে। তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান হিসাবে খ্যাত এই কামাক্ষা। তন্ত্র সাধনার জন্য এই সময়টিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করা হয়। অম্বুবাচী মেলা, পুজো, তন্ত্র সাধনা ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি চার দিন ধরে চললেও প্রথম তিন দিন মন্দির বন্ধ থাকে। চতুর্থ দিন সকল দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দির।

• ফকিরি উৎসব
বহু যুগ ধরে মানব জীবণের চিরন্তন শান্তি ও সত্যের খোঁজে বাংলার পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাউল ও ফকিররা। ‘ফকির’ শব্দের উৎস আরবী শব্দ ‘ফে-কাফরে’। যার অর্থ উন্মাদনা। গানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শান্তির উৎস ও জীবনীশক্তির সন্ধানেই বাউল ও ফকিরদের এই উন্মাদনা। অন্যান্য অনেক জায়গার মতো পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার গোরভাঙা গ্রামেও বাউল ও ফকিরদের সন্ধান মেলে। কলকাতা থেকে প্রায় ২১৪ কিলোমিটার দূরের এই গোরভাঙা গ্রামে বাংলার বাউল ও ফকিরদের সমন্বয়ে ‘ফকিরি উৎসব’ আয়োজিত হয়। কয়েকশো বছরের প্রাচীন, ঐতিহ্যপূর্ণ, উৎকৃষ্ট লোকসঙ্গীত-সমৃদ্ধ এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে। তিন দিন ব্যাপী এই উৎসব শতাধিক বাউল ও ফকিরদের সমাগমে লোকসঙ্গীতে মুখর হয়ে ওঠে। জানা অজানা অসংখ্য বাউল গান, বাংলা কাওয়ালি, ছড়া গান এই ফকিরি উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলা কাওয়ালি গানের ধারায় ফকিরদের দখল কিন্তু একচেটিয়া। ফকির, বাউল ছাড়াও অসংখ্য সঙ্গীত শিল্পী, গবেষক-সহ এই উৎসবের টানে প্রতি বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন।

• মদনমোহনের নৌকাবিহার
প্রতি বছরের মতো বাংলা নতুন বছরের প্রথম পূর্ণিমার রাতে নৌকাবিহার করলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অর্থাৎ মদনমোহন। এটি বহু পুরনো রীতি। ১৮৯০-এ কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত, তখন থেকেই মদনমোহনের এই নৌকাবিহার উৎসব হয়ে আসছে। প্রাণের ঠাকুর শ্রীশ্রীমদনমোহনের এই নৌকাবিহার উৎসবটি হয় ইতিহাসের শহর কোচবিহারের প্রাণকেন্দ্র সাগরদিঘিতে। সেই সময় সাগরদিঘির পূর্ব দিকের ঘাটে থাকেন বাণেশ্বর মন্দিরের চলন্ত মহাদেব, তুফানগঞ্জ নাককাটিগছের ষণ্ডেশ্বর শিব, কোচবিহার শহরের গুঞ্জবাড়ি ডাঙ্গর আই মন্দিরের রাধাবিনোদ এবং রাজমাতা মন্দিরের রাধানাথ ও কানাইলাল বিগ্রহ। এঁরা সকলেই মদনমোহনের বন্ধু। নৌকাবিহার দেখতেই তাঁদের আগমন। এটিও অতি প্রাচীন প্রথা। বন্ধুদের উপস্থিতিতে শ্রীশ্রীমদনমোহন নৌকায় আরোহণ করেন। এর পূর্বে পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণ করেন। সেই সঙ্গে পাঁঠার চামড়া দিয়ে তৈরি ভিস্তির জলে মদনমোহনকে প্রতীকী স্নান করানো হয়। পঞ্চফল জলে নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শ্রীশ্রীমদনমোহনকে শুদ্ধ করানো হয়। এতে মদনমোহনের প্রায়শ্চিত্ত ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানটিকে বলে ‘মোটের জল’ উৎসব। উৎসবটির পিছনে রয়েছে এক কিংবদন্তি। পূর্ণিমার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ মদনচতুর্দশী তিথিতে মদনকাম বা বাঁশপুজো উপলক্ষে মদনমোহন ভাঙের নাড়ু খেয়ে নেশাচ্ছন্ন অবস্থায় খাসির মাংস খেয়ে ফেলেন। বৈষ্ণব মদনমোহনের মাংস ভক্ষণ অপরাধ। উপরিল্লিখিত বন্ধুরা জানতে পেরে প্রায়শ্চিত্তের বিধান দেন। ‘মোটের জল’ উৎসবের মধ্যে দিয়ে শ্রীশ্রীমদনমোহন প্রায়শ্চিত্ত করে শুদ্ধ হন। রাজ আমল থেকে চলে আসা এই উৎসব আজও কৌতূহল উদ্রেক করে চলেছে।

• সুবর্ণরেখার চরে চৈত্রসংক্রান্তি মেলায় আজও অম্লান ঐতিহ্য
দাঁতনে সুবর্ণরেখার চরে বসে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা। গোপীবল্লভপুরের করবনিয়া গ্রামে নদী উত্তরবাহিনী বলে সেখানে স্নান ‘পুণ্যস্নান’ বলে বিবেচিত হয়। হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন। লোকসংস্কৃতি গবেষকদের মতে, দাঁতনে ওই নদী দক্ষিণ বা পূর্ববাহিনী হলেও করবনিয়ার দেখাদেখি কিছুকাল পরে দাঁতনের বেলমূলা ঘাট, বারাসতী ঘাট ও সোনাকালিয়া ঘাটেও কয়েকশো বছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। মেলার নাম কোথাও বালিযাত্রা, বালিযাত, নদীযাত্রা বা বালিমেলা। কিংবদন্তী আছে, পাণ্ডবগণ অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন চৈত্র সংক্রান্তি তিথিতে উত্তরবাহিনী সুবর্ণরেখা নদীতে স্নান ও পিতৃতর্পণাদি করেছিলেন। পাণ্ডবদের কাহিনির পাশাপাশি জনশ্রুতি রয়েছে বারাসতী ঘাটের বিষয়েও। কথিত আছে বারো সতী বা বারো স্রোত থেকেই এই নামকরণ হয়েছে। কোনও সময় হয়তো বারোজন সতীকে দাহ করা হয়েছিল বা এই অংশে চৈত্র মাসের সময়ে নদীতে বারোটি পৃথক স্রোত ছিল। কবি দীনকৃষ্ণের ‘রসকল্লোল’ কাব্যে জানা যায়, ১৫১০ সালের চৈত্র সংক্রান্তির দিন বারাসতী ঘাট থেকে নদী পেরিয়েছিলেন চৈতন্যদেব। আবার ওই ঘাটেই চৈতন্যদেবের পুণ্যস্নানের কাহিনিও প্রচলিত রয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের মতো লোকসংস্কৃতির বৈচিত্র্যও চোখে পড়ে এই মেলায়। মেলাগুলিও গড়ে উঠেছে আপন বৈশিষ্ট্যে লোককথা-কাহিনি, ছড়া, গান ও বিশ্বাসে ভিত্তি করে। সুবর্ণরেখা নদীকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে এক পৃথক সংস্কৃতির ধারা বহমান, যা দাঁতনের এই তিনটি মেলার বৈশিষ্ট্য।

পর্যটন কেন্দ্র
• ভ্রমণকেন্দ্র গড়ার ভাবনা বারাবনিতে
বারাবনির পানিকলা উষ্ণ প্রস্রবণ ও সালানপুরের মুক্তাইচণ্ডী মন্দির সংলগ্ন এলাকায় ভ্রমণকেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ। সম্প্রতি তিনি আসানসোলের একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ওই দু’টি জায়গায় গিয়েছিলেন। ওই দুই জায়গাতেই যে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে তা জানিয়েছেন মন্ত্রী। রচপাল সিংহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “বীরভূমের বক্রেশ্বরে উষ্ণ প্রস্রবণ ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রের মতো এখানেও তেমন কিছু গড়ে তোলা যায় কি না, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে।”

• আকাশপথে সুন্দরবন দর্শন আট হাজারে
নদীনালায় জলযানে নয়। এ বার বিমানে পাখির চোখে সুন্দরবন দর্শন। ন’টি আসনের ছোট বিমান কলকাতা থেকে যাত্রীদের নিয়ে গিয়ে এক ঘণ্টা চক্কর কাটবে সুন্দরবনের আকাশে। প্রতি রবিবার সকাল ও দুপুরে। খরচ মাথাপিছু ৭৮০০ টাকা। খাবার ও পানীয়-সহ। ভূপৃষ্ঠ থেকে দু’হাজার ফুট উপর দিয়ে সাকুল্যে এক ঘণ্টার চক্কর। এই ব্যাপারে তারা কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং রাজ্য সরকারের বন দফতরের অনুমতি পেয়েছে বলে সোমবার দাবি করেছে বেঙ্গালুরুর সংস্থা ডিটিডিসি। সংস্থার কর্তা রূপক রাও জানান, আকাশপথে সুন্দরবন ভ্রমণ শুরু হয়েছে ২৯ এপ্রিল। ন্যূনতম ছ’জন যাত্রী পেলেই উড়বে বিমান। পানীয় ও খাবার মিলবে বিমানবন্দরে ফেরার পরে। ডিটিডিসি-র সেলস ম্যানেজার শ্যামল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘‘আমরা জানুয়ারি থেকে কলকাতা-জামশেদপুর রুটে সপ্তাহে পাঁচ দিন ওই ছোট বিমান চালাচ্ছি। যাওয়ার সময়ে পাঁচ-ছ’জন যাত্রী পেলেও ফেরার বিমান ভর্তি থাকছে। এ বার কলকাতা থেকে রৌরকেল্লা এবং রাঁচির উড়ানও শুরু হবে।” পরিকল্পনা অনুযায়ী সপ্তাহে দু’দিন কলকাতা-জামশেদপুরের উড়ান রাঁচি ঘুরে আসবে। বাকি তিন দিন জামশেদপুরের উড়ান রৌরকেল্লা, ভুবনেশ্বর ঘুরে কলকাতায় ফিরবে।

• জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি জলদাপাড়াকে
জলদাপাড়া অভয়ারণ্যকে সরকারি ভাবে জাতীয় উদ্যান বা ‘ন্যাশনাল পার্ক’ ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। উত্তরবঙ্গের তোর্সা নদীর তীর বরাবর ২১৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই বিস্তৃত বনাঞ্চল যে দেশের জাতীয় উদ্যানের তালিকায় ঠাঁই পেতে চলেছে, মাস কয়েক আগেই বনমন্ত্রকের উপদেষ্ঠামণ্ডলীর সভায় তা সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল সরকারি শিলমোহর। গত ১০ মে ২০১২ বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে চিঠি দিয়ে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের পঞ্চম জাতীয় উদ্যান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে সমগ্র জলদাপাড়াকেই। এই খবরে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। তিনি বলেন, “এর ফলে জলদাপাড়া সংরক্ষণে আমাদের দায়িত্ব অবশ্য বেড়ে গেল।” ১৯৪১ সালে জলপাইগুড়ি জেলার আলিপুরদুয়ার মহকুমায় নদী কেন্দ্রিক এই জঙ্গলকে অভয়ারণ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এক শৃঙ্গ গন্ডার, হাতি, বাইসন (গাউর), চিতাবাঘ, ভালুক পাঁচ প্রজাতির হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির বাঁদর ছাড়াও জলদাপাড়ায় বাঘেরও সন্ধান মিলেছে সম্প্রতি। রয়েছে অন্তত ৪২ প্রজাতির পাখি। বন্যপ্রাণ আইন অনুসারে জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পাওয়ায় জলদাপাড়ার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাড়তি কেন্দ্রীয় অনুদানের পাশাপাশি, জঙ্গল সংরক্ষণের জন্য পাওয়া যাবে বাড়তি নিরাপত্তা বাবস্থাও।

পরিষেবা
• ২০১৩-য় জিপিএস প্রযুক্তির ট্রেন
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ভারতীয় রেল ২০১৩ সালের মধ্যে জিপিএস প্রযুক্তির ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করছে। সেন্টার ফর রেলওয়ে ইনফর্মেশন সিস্টেম (ক্রিস) এবং ইসরো এই প্রযুক্তি কার্যকর করতে কাজও শুরু করেছে। জানা গিয়েছে ইসরো এই প্রযুক্তিটি বানিয়েছে যা প্রায় নির্ভুল ভাবে ট্রেনের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে। রেল কর্তাদের মতে এই প্রযুক্তি চালু হলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। ট্রেনের সঠিক অবস্থান আগে থেকে জানা গেলে চালকরা অনেক আগে থেকে ব্রেক কষে রেল দুর্ঘটনা এড়াতে পারবেন। প্রাথমিক ভাবে ১০০টি ট্রেনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। প্রত্যেকটি ট্রেনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে আনুমানিক ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা খরচ হবে। গত এক বছরে রেল দুর্ঘটনায় ১২২ জন মারা গিয়েছেন এবং গত চার বছরে বিশ্বের প্রায় ১৫ শতাংশ রেল দুর্ঘটনাই ভারতে হয়েছে। এই প্রযুক্তি চালু হলে রেল যাত্রীরাও নিজেদের মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে ট্রেনের অবস্থান জানতে পারবেন। শুধু তাই নয়, ট্রেন দেরিতে চললে তা ঘরে বসেই জানা যাবে।

• গরমের ছুটিতে রেল
গরমের ছুটি চলাকালীন যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে বিশেষ পরিষেবার পরিকল্পনা করেছে ভারতীয় রেল। দেশের ৪৪টি জনপ্রিয় পথে কিছু অতিরিক্ত ট্রেনগুলি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। দেশের যে কোনও বড় রেলস্টেশনে ৫ টাকার বিনিময়ে এই ট্রেনগুলির সময়সূচি পাওয়া যাবে। জানা যাচ্ছে এই পরিষেবায় ১৪টি সম্পূর্ণ অসংরক্ষিত ট্রেন চলবে, যার মধ্যে ২টি সম্পূর্ণ বাতানুকূল(এসি) এবং ১০টি সুপার ফাস্ট ট্রেনও রয়েছে। যে যে শহরের মধ্যে এই ট্রেনগুলি চলবে তা হল নয়াদিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, আমদাবাদ, বেঙ্গালুরু, জম্মু-তাওয়াই, জয়পুর, লখনউ, গুয়াহাটি এবং পুণে। এ ছাড়া আরও ১১৯টি নতুন পরিষেবা এই সময়ে যাত্রীদের জন্য চালানো হবে। প্রত্যেকটি ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত কোচও যোগ করার পরিকল্পনা করেছে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ। টিকিটের অপব্যবহার রুখতে টিকিট সংরক্ষণ অফিসগুলিতে থাকবে বিশেষ পরিক্ষক।

• ১৪টি রেল স্টেশনকে সংস্কার করবে বেলজিয়াম
এ দেশের চারটি মহানগরের মোট ১৪টি রেলস্টেশনকে নতুন করে সাজাতে ভারতীয় রেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল বেলজিয়াম। হায়দরাবাদে সিআইআই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভারতে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে ভায়সেন এ কথা জানিয়েছেন। এই চুক্তির পিছনে সিআইআই-এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তিনি আরও জানান শুধুমাত্র রেলওয়ে নয়, বিদ্যুৎ, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বায়োটেকনোলজি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে চুক্তিবদ্ধ হতে আগ্রহী বেলজিয়াম। বর্তমানে ইউরোপে বেলজিয়াম ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম (ব্রিটেনের পর) বাণিজ্য সহযোগী। প্রত্যেক বছর বেলজিয়াম থেকে প্রচুর পরিমানে গয়না এবং মণি-রত্ন আমদানি করে ভারত। বিশেষত গুজরাতে এর খুব বেশি চাহিদা রয়েছে।

• কলকাতা-ব্যাঙ্কক রুটে নয়া উড়ান জেটের
কলকাতা থেকে ব্যাঙ্ককে ১০ মে থেকে আরও একটি উড়ান চালু করল জেট এয়ার। এখন এই রুটে তাদের একটি উড়ান চলে। সেটি কলকাতা থেকে ছাড়ে রাতে। দ্বিতীয় উড়ানটি ছাড়বে সকালে। সংস্থার দাবি, এই রুটে টিকিটের চাহিদা বাড়তে থাকায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হারিয়ে যাওয়ার পথে
চড়াই পাখি (ইংরেজি নাম House Sparrow, বৈজ্ঞানিক নাম Passer Domesticus) এখন গ্রামের দিকেও খুব বেশি নজরে পড়ে না। এর কারণ, গ্রামাঞ্চলেও ইদানীং প্রচুর পরিমাণে পাকা বাড়ি এবং ছাদ হওয়ায় চড়াই পাখিরা বাসা তৈরির জায়গা পাচ্ছে না।
এ ছাড়াও গ্রামের চতুর্দিকে বড় বড় মোবাইল টাওয়ার থেকে বিচ্ছুরিত ইথার তরঙ্গের কম্পনজনিত কারণে চড়াই পাখিরা বন্ধ্যাত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটাও চড়াই পাখি দ্রুত হ্রাসের অন্যতম কারণ। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, গ্রামাঞ্চলে ধানের মাঠে ভোরুই পাখি শিকারের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী-চড়াই পাখিও (অনেকটা ভোরুই পাখির মতো দেখতে) বড় বড় জাল দিয়ে শিকার করা হচ্ছে এবং হোটেলে দশ টাকা থেকে কুড়ি টাকা ‘পিস’ হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
শুধু চড়াই নয়, বাংলার গ্রামাঞ্চলে ইদানীং অন্য কয়েকটি পাখিও খুব বেশি দেখা যায় না যেমন পানকৌড়ি, শামুকখোল, সরাল, বালিহাঁস, তিতির, বনমুরগি, ডাহুক, সারস, বক, শকুন, চিল, বাজপাখি, জলপিপি, কাদাখোঁচা, হাট্টিটি, ঘুঘু, টিয়া, চন্দনা, বুলবুলি, ফুলটুসি, চোখ-গেল, কোকিল, কুবো, লক্ষ্মীপ্যাঁচা, ভুতুমপ্যাঁচা, মাছরাঙা, নীলকণ্ঠ, বসন্তবৌড়ি, কাঠঠোকরা, কাজল, ফিঙে, শালিক, ময়না, ছাতারে, দোয়েল, টুনটুনি, শ্যামা, ভোরুই, খঞ্জনা, মৌটুসি, চাতক, মুনিয়া, হরিয়াল, বাবুই প্রভৃতি।
ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
 
 


রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর স্বাদবদল পুরনো সংস্করণ