হরিতকি গ্রামের গায়ক ‘গুপী’
সন্দেশ পত্রিকার সূচনা হয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর হাতে। আর সে পত্রিকাতেই তিনি লিখেছিলেন ‘গুপী গাইন’ নামের এক কাহিনি। মজাদার সেই চরিত্রকে ফিল্মে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন তাঁরই পৌত্র সত্যজিত্ রায় ও প্রপৌত্র সন্দীপ রায়। আর সেখানে ‘গুপী’র চরিত্রে অভিনয় করে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঢুকে পড়েছিলেন যিনি তাঁর নাম তপেন চট্টোপাধ্যায়। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গিয়েছে তাঁর জন্মদিন। সেই উপলক্ষে অতীতের তাঁরায় এ বার তাই ‘গুপী’র গল্প।
দেখো রে নয়ন মেলে... এই গান গাওয়ার আগে ‘গাধা’র পিঠে চাপিয়ে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ‘তৃতীয় সুর ষষ্ঠ সুর, গুপী চলল বহু দূর...।’ কিন্তু বেসুরো গুপীর গলায় ভূতের রাজা সাজিয়ে দিয়েছিলেন সপ্ত সুরের বাহার। আর তাতেই মজেছিল ‘আম বাংলা’। না মজেছিল নয়, মজে রয়েছে এখনও। শুধু কী গান, গুপীর চরিত্রে সেই মানুষটির সাবলীল, অমায়িক ও নিরীহ অভিনয় যা চরিত্রটিকে করে তুলেছিল ঘোরতর জীবন্ত, তাতেও ডুবেছিল বাঙালি! উপেন্দ্রকিশোরের কাহিনি নিয়ে সত্যজিৎ ছবি তৈরি করলেন, সেখানে ‘গুপী’র নাম ভূমিকায় অভিনয় করে বাঙালিকে মাতিয়ে দিয়েছিলেন তপেন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে অনুপ ঘোষালের গলায় গান আর ‘বাঘার’ ঢোলকের তাল। ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’ এবং সন্দীপ রায়ের ‘গুপী বাঘা ফিরে এল’ এই তিনটি ছবিতেই মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন তিনি, সবার প্রিয় ‘গুপী’। তথ্যপঞ্জী বলবে, এর বাইরেও ‘মহানগর’, ‘সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা’, বা ‘ধন্যি মেয়ে’র মতো ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তপেন, কিন্তু সে সব তো ‘গুপী’র ঔজ্জ্বলের কাছে ম্লান।
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এ রবি ঘোষ ও তপেন চট্টোপাধ্যায়
কৈশোর কাল
তপেন চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, কালীঘাটের মাইশোর রোডের বাড়িতে। নলিনীরঞ্জন ও শোভনাদেবীর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তপেন ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক তপেন চট্টোপাধ্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা রাজেন্দ্র বিদ্যাভবনে। ছোট থেকেই অভিনয়ের দিকে ঝোঁক ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তপেন প্রথম মঞ্চে পা দিলেন, নাটকের নাম ‘অচলায়তন’। ছোট্ট চরিত্র হলেও দর্শকের মনে দাগ কেটে গিয়েছিল তাঁর অভিনয়।
গুগাবাবা’র পঁচিশ বর্ষ পূর্তিতে ‘ফার্স্ট ডে কভার’
শীতকালে বা পুজোর সময় সেই নাটকের জন্যই ডাক পড়ত তপেনের। পরে শেখর চট্টোপাধ্যায়ের গ্রুপ থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন।

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার তপেন চট্টোপাধ্যায় খুব কম বয়সে এক সময়ে রাজস্থানের বিকানেরে চাকরি করতেন। সেখানকার জিপসাম মাইনস-এ রোজ দু’ টাকা দু’ আনা পারিশ্রমিক মিলত। বছর দুই চাকরি করার পর অতঃপর কলকাতায় ফিরলেন তিনি। এসে এ বার যোগ দিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকের দলে। এতে বাবা নলিনীরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের যথেষ্ট আপত্তি ছিল, তবুও জ্যেঠিমার উৎসাহে দিন চলতে থাকল গড়গড়িয়ে।

সত্যজিতের সান্নিধ্যে
তপেনের দুই কাকা কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও চঞ্চল চট্টোপাধ্যায়। চঞ্চলবাবুর পুরনো বন্ধু ছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেই সুবাদে তাঁদের বাড়িতে আসতেন সত্যজিৎবাবু। বাড়ির কাছেই থাকতেন কবি বিষ্ণু দে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্র, রথীন্দ্রনাথ মৈত্র, সমর সেনরা আসতেন এবং আড্ডা বসাতেন তপেন চট্টোপাধ্যায়দের বাড়িতে। এঁরা কাকার বন্ধু ছিলেন বলে সবাই তপেনেরও ‘কাকা’। বেকার তপেনকে তখন সুভাষকাকা এক দিন নিয়ে গিয়েছেন ‘সন্দেশ’ পত্রিকার অফিসে। ‘মানিককাকা’র কাছে নিয়ে গিয়ে সুভাষবাবু বলেছিলেন, “চঞ্চলের ভাইপোকে নিয়ে এলাম।” সত্যজিতের ঝটিতি জবাব: “কোনটা? যেটা দুরন্ত ছিল, না শান্তটা?” সুভাষবাবুর উত্তর: “দুরন্তটা।” কাজ করলেন কিছু দিন ‘সন্দেশ’-এ।

সেই দুরন্ত ছেলেকেই এক দিন লাইটহাউস সিনেমার সামনে পাকড়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তপেন তখন এক ইংরেজি সংবাদপত্রের অফিসে কাজ করেন। রাস্তায় দেখেই পরিচালক চেঁচিয়ে উঠলেন, “আরে, তোকে গরুখোঁজা খুঁজছি। কাল আমার বাড়িতে আয়।” মাথায় তখন সত্যজিতের নতুন ছবির ‘প্ল্যান’। সব চরিত্র ঠিকঠাক মিলে গিয়েছে মনের মতো। শুধু আটকে গিয়েছে ‘গুপী’তে এসে। অথচ মুখ্যভূমিকার চরিত্রাভিনেতা ঠিক না করে কাজেও নেমে পড়া যাচ্ছে না! ‘খেরোর খাতায়’ চরিত্র আঁকার পর কেমন যেন মিলে গেল তপেনের সঙ্গে! কাজেই বিশফ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে ডাক পড়ল তপেনের।

প্রস্তুতির পথে ‘গুগাবাবা’
১৯৬২তে ‘অভিযান’ চলচ্চিত্রের জন্য সত্যজিৎ গিয়েছিলেন রাজস্থান। সেই থেকে রঙিন জমির দৃশ্যপট মনের কোনে জমতে থাকে। গুপি গাইন বাঘা বাইন উঁকি মারছে। ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোরের গুপি গাইন বাঘা বাইন গল্পটির চলচ্চিত্র করার বায়না ধরেছিল তেরো বছরের সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কাহিনি ‘গুপী গাইন’ প্রথম প্রকাশিত হয় সন্দেশ পত্রিকায়। ১৯১৫ সালের মার্চ মাস থেকে ওই বছরেরই অগস্ট সংখ্যা পর্যন্ত মোট ছ’ কিস্তিতে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় সে কাহিনি। পরে ১৯৬১ সালের অক্টোবর মাসে সত্যজিৎ রায় সম্পাদিত ‘সন্দেশ’ পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যায় এই গল্প পুনর্মুদ্রিত হয়। যদিও তখন তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’। এ দিকে উপেন্দ্রকিশোরের জন্ম শতবার্ষিকীও কাছে এসে পড়ছিল। কাজেই সত্যজিৎ তখন ঠিকই করে ফেলেছিলেন ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ রিল-বন্দি করতেই হবে।
সত্যজিতের হাতের লেখায় গুগাবাবা’র চিত্রনাট্য
১৯৬৭ সালের ২৮ নভেম্বর ‘গুগাবাবা’র রিহার্সাল শুরু হল। যেমন চিত্রনাট্য, তেমনই গানের কথা ও সুর। জানা যায়, এই অসামান্য গল্পের ছবি তৈরি করতে অর্থনৈতিক অসুবিধের মধ্যে পড়তে হয়েছিল সত্যজিৎ রায়কে। তবে তিনি এও বলেছিলেন ছবির বাজেট বেশি ঠিকই, কিন্তু এ রকম ছবি আগে কখনও হয়নি। আমার ছবি মূলত এক শ্রেণির দর্শকেরা দেখেন। কিন্তু এই ছবি সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছবে। পরের কাহিনি তো সবার জানা।

‘গুপী’ সংবাদ
প্রথমে ‘রাজা’র চরিত্রে সত্যজিৎ ভেবেছিলেন ছবি বিশ্বাসকে। আর রবি ঘোষ ‘বাঘা’র চরিত্রে। তবে ‘গুপী’ নিয়ে ঘোরতর চিন্তা। পরে সন্তোষ দত্তকে ‘রাজা’র চরিত্রে মনোনীত করেন সত্যজিৎ, রবি ঘোষ ওই ‘বাঘা’ চরিত্রেই। স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী আঁকিবুকি চলছে তখন। আঁকা-মোছা-জোড়া-বাদ দেওয়া সবই চলছে। ‘গুপী’ নামের রোগা লম্বা ছেলেটার মাথায় একটু বড় চুল দিলে কেমন দেখতে হবে? সেই মতো আঁকাও হল। কেমন যেন চেনা চেনা ঠেকছে! এক সপ্তাহ পার হল। এক দিন সত্যজিৎ-জায়া বিজয়া রায় বললেন, “আমাদের তপেন না!” ব্যস, খোঁজ খোঁজ। শেষমেশ দেখা হল লাইট হাউসের সামনে।
তার পর তো জীবনের মোড়ই ঘুরে গেল তপেন চট্টোপাধ্যায়ের। বিজয়া রায় ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন, “২৪ নভেম্বর ১৯৬৮ দিনটি মনে রাখার মতো। কারণ সকালে ‘গুগাবাবা’ দেখানো হল। এক কথায় সুপার্ব।” ৩০ নভেম্বর ১৯৬৮ তিনি লিখছেন, “প্রিয়াতে আবার ‘গুগাবাবা’ দেখানো হল। তুলনা হয় না। বারবার দেখেও আশ মিটবে না”। পরে এ কথা তিনি ‘আমাদের কথা’য় উল্লেখ করেছেন। কাজেই এ ছবি মুক্তি পাওয়ার পর তপেন চট্টোপাধ্যায়ের ‘গুপী’ নামেই তুমুল খ্যাতি মিলল। এমনকী বার্লিন থেকে ‘গুগাবাবা’র আমন্ত্রণ এল। সত্যজিৎ-বিজয়া ছাড়াও রবি ও তপেনকেও যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

অভিনয় করতে গিয়ে বেশ বড় বড় মানুষের চোখে পড়লেন তপেন। খ্যাতমান সব অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। পরে অনেকের ছবিতে ডাক পেলেও তপেন খুব বেছে ‘হ্যাঁ’ বলতেন। যে হেতু অভিনয়টা তাঁর সম্পূর্ণ পেশা ছিল না, তাই ছোট ভূমিকায় অভিনয়ের ডাক ফিরিয়ে দিতেন। অনেকেই ভুল ভাবতেন, ‘মানিকদা’র ছবিতে অভিনয় করেছেন বলে তপেন অন্যদের খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না।

শেষের সে দিন
আনন্দবাজারকে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তপেন চট্টোপাধ্যায় স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এক বার বলেছিলেন, “হঠাৎ এক দিন মানিকদা সিগারেট অফার করলেন। আমি তো কিন্তু কিন্তু করছি। উনি বললেন খাও না নাকি? খাও খাও মরবে না। তুমি জন্মেছ গুপী করার জন্য।”

‘গুপী’ চরিত্রে অভিনয় করার জন্য জন্ম হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তপেনের মৃত্যু হয়েছিল ফুসফুসের অসুখ ও হাঁপানিতে অনেক দিন ভুগে। কালীঘাট ছেড়ে কুঁদঘাট হয়ে তখন তাঁরা গড়িয়ায় নিজস্ব বাড়িতে থাকেন। ২৪ মে ২০১০, সকালে গড়িয়ার সেই বাড়িরই কলঘরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অচৈতন্য হয়ে যান। স্থানীয় এক নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণের পর ওই মহান ব্যক্তিত্বের অন্তিম যাত্রা ও অভূতপূর্ব শবানুগমনের ধারাবিবরণী ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখেছিলেন তপেন চট্টোপাধ্যায় ১৯৯২ সালের ১৬ মে। তাঁর ‘মানিকদা’র সেই অনন্তলোকের পথেই স্ত্রী, দুই পুত্র, এক পুত্রবধূ ও নাতনিকে রেখে ৭২ বছর বয়সে ‘গুপী’ও চলে গেলেন বহুদূর।

‘গুপী’ সম্পর্কে তাঁদের কথা
বিজয়া রায় (সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী): বাঘার চরিত্রে রবিকে (রবি ঘোষ) নেওয়া প্রথম থেকেই ঠিক ছিল, কিন্তু গুপীর চরিত্রে কাকে নেবেন, মানিক ভেবে কিছুতেই ঠিক করতে পারছিলেন না। অনেক দেখানো হল, এমনকী একজনের স্ক্রিন টেস্ট নেওয়া হয়েছিল রবির সঙ্গে, যিনি এক ডেলি পেপারের সম্পাদক ছিলেন। কোনও ফল হয়নি।

চঞ্চলবাবুর (চঞ্চল চট্টোপাধ্যায়) ভাইয়ের ছেলে তপেন আমাদের বাড়িতে মাঝেসাঝে আসত। ‘সন্দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে প্রথম দিকে ছিল। মানিক তাঁর অভ্যাস মতো গুপীর চরিত্রে যে-ধরনের মুখ ওঁর চাই, সেটা এঁকে রেখেছিলেন। চেহারার মধ্যে একটা গ্রাম্য ভাব থাকবে, বেশি চালাক চটপটে নয়।

ভাগ্যক্রমে একদিন তপেন আমাদের বাড়িতে এসেছিল। মানিকের ঘরে ঢুকতেই মানিক ওর দিকে ফিরে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ‘এই তো পেয়ে গেছি’ গোছের ভাব। তপেন এর আগে ‘মহানগর’ ছবিতে একটা ছোট্ট ভূমিকায় নেমেছিল।

তপেন আমাকে পরে বলেছিল, মানিক যখন ওকে জানালেন, ‘গুপী’-র চরিত্রর জন্য ওকে ভাবা হচ্ছে, তখন তপেন এত অবাক হয়ে গিয়েছিল যে, বিশ্বাস করতে পারছিল না। যখন জানতে পারল যে, ওর মুখের সঙ্গে গুপীর মুখ প্রায় মিলে গেছে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে ফিরতে পারেনি। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে চোখের জল চেপে রাখতে চেষ্টা করেছিল। প্রথমবারের পক্ষে তপেন সত্যি অসাধারণ অভিনয় করেছিল এবং বি.এফ.জে.এ-তে সর্বশ্রেষ্ঠ নতুন অভিনেতার জন্য পুরস্কৃতও হয়েছিল।
আমাদের কথা, বিজয়া রায়, আনন্দ পাবলিশার্স, প্রথম সংস্করণ তৃতীয় মুদ্রণ


সন্দীপ রায় (চলচ্চিত্র পরিচালক): দুই পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তপেনদা প্রথমে যুক্ত ছিলেন ‘সন্দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে। বাবার খুব প্রিয় ছিলেন। বাবা ‘মহানগর’ ছবিতে ছোট্ট একটা চরিত্রে অভিনয় করান। পরে গুপী গাইন পরিকল্পনার সময় তপেনদার কথা মনে পড়ে। তার পরের কথা তো সবাই জানেন। আমার ছবি ‘গুপী বাঘা ফিরে এল’তেও অভিনয় করেন। বাবার জন্মদিনে প্রতি বছর বাড়িতে আসতেন। অত্যন্ত সাধাসিধে ও খোশমেজাজের মানুষ ছিলেন। খোশামোদ করতেন না। রবিবাবুর (রবি ঘোষ) সঙ্গে অত্যন্ত ভাব ছিল।


আলো চট্টোপাধ্যায় (তপেনবাবুর স্ত্রী): স্বামী হিসেবে অত্যন্ত দায়িত্ববান মানুষ ছিলেন। পিতা হিসেবে সন্তানদের মানুষ করার জন্য তাঁর দায়িত্ববোধ গভীর। এক কথায় খুবই সাংসারিক মানুষ ছিলেন। আমুদে এবং গল্প করতে ভালবাসতেন। আবার যখন তিনি অভিনেতা, তখন সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষ। নিষ্ঠায় ভরপুর মানুষটি ভুলে যেতেন সংসারের কথা। ছোট থেকে অভিনয় করতে খুব ভালবাসতেন। এ জন্য বাবার সঙ্গে মনোমালিন্যও ছিল।


অনুপ ঘোষাল (গায়ক): আমার তখন প্রায় ঊনিশ বছর বয়স। গানের মহড়ার জন্য আমাকে যেতে হত সত্যজিৎবাবুর কাছে। গিয়ে শুনলাম গুপী গাইন বাঘা বাইন-এর জন্য গুপীর চরিত্রে ঠিক হয়েছে জীবনলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। সুন্দর চেহারা। সত্যজিৎবাবু স্ক্রিন টেস্ট করলেন। উতরে গেলেন তিনি। কিন্তু সংলাপ বলা পছন্দ হল না। ডাক পড়ল তপেনের। সেই প্রথম তপেনের সঙ্গে দেখা। অত্যন্ত সাদাসিধে, আমুদে ও আত্মভোলা মানুষ ছিলেন। সত্যজিৎবাবুর নির্দেশে আমি রবিদা ও তপেনকে গান দেখিয়ে দিতাম। রবিদা বলতেন, এই সব গান থেকে তোমার খুব নাম হবে। এটা সত্যিই যে এখান থেকে আমাকে সবাই চিনল। এবং এই ছবিতেই আমি প্রথম প্লে ব্যাক সিঙ্গার। আনন্দের ব্যাপার যে, এই ছবি করতে গিয়ে আমরা পেলাম এক নতুন অভিনেতাকে। আবার দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, উনি কোনও চরিত্রাভিনেতা হতে পারেননি। গুপী ইমেজ এতটাই শক্তিশালী ছিল এর জীবনে।

শিল্পী তপেন চট্টোপাধ্যায়
অভিনীত চলচ্চিত্র: মহানগর, গণদেবতা, ধন্যিমেয়ে, ননী গোপালের বিয়ে, নরক গুলজার, রবিবার, ভোলাময়রা, সঙ্গিনী, শ্রীমান পৃথ্বিরাজ, ঠগিনী, জীবন যে রকম, গোলাপ বউ, কন্যাদান এবং গুপীগাইন-বাঘাবাইন, হীরক রাজার দেশে ও গুপী বাঘা ফিরে এল।

অভিনীত নাটক: সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা, মেঘে ঢাকা তারা, কবি।

তথ্য: পাপিয়া মিত্র
নিজস্ব চিত্র
 
 

 
 
 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.