৪ আশ্বিন ১৪১৮ বুধবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০১১



  পূজা-বর্তমানে


মিদারীপ্রথা বিলোপের পরে, অনেক রাজা-মহারাজা, জমিদার বা অবস্থাপন্ন গৃহস্থ দেশত্যাগ করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলে এসে বসবাস করছেন। নূতন পরিবেশে এসে তাঁদের পক্ষে পূর্ব-পুরুষের প্রথা অনুসারে পূজা করা সম্ভবপর নয়। আর যাঁরা করেন তাঁরা দায়সারাভাবে করেন।

কলকাতার কথাই ধরা যাক। কলকাতার যাঁরা বনেদি ঘর তাঁদের বাড়িতে হয়তো পূর্বের নিয়মানুযায়ী পূজা হচ্ছে, কিন্তু তা বাদে যে লক্ষ লক্ষ অধিবাসী, তাঁদের পূজার আনন্দ উপভোগ করতে সর্বজনীন পূজার আবশ্যকতা অপরিহার্য— তাই অলিতে গলিতে অগণিত পূজার আয়োজন। কারো নিজ বাড়িতে পূজা হলে গৃহস্বামী ও বাড়ির স্ত্রী-পুরুষ সকলে মিলে একান্তভাবে যে অর্চনা করেন, তাতে যে নিষ্ঠা ও হৃদয়ের আকুলতা দেখতে পাওয়া যায়, সর্বজনীন পূজায় তার অভাব পরিলক্ষিত হয়। তার কারণও সুস্পষ্ট- যেহেতু কর্তা বহু। যদিও কর্মকর্তাদের মধ্যে সকলেই প্রাণপণ পরিশ্রম করেন এবং পূজা যাতে সুসম্পন্ন ও ত্রুটিহীন হয় সেদিকে লক্ষ থাকে, তবুও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝোঁক থাকায় সংগৃহীত অর্থ অনেক ক্ষেত্রে অনর্থ ডেকে আনে— টাকার অপব্যবহার হয়। “আমাদের প্রতিমা, ফায়ার-ব্রিগেড, বাগবাজার, পার্ক সার্কাস, বেঙ্গল ইম্যুনিটির চেয়ে ভাল করা চাই-ই”— এই যে ঝোঁক বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াই— এ আদৌ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রতিমার পেছনে ও পূজামণ্ডপ নির্মাণে যে টাকা খরচ করা হয়, তার অর্ধেক উপস্থিত দর্শকবৃন্দের মধ্যে প্রসাদ বিতরণে বা দীনদরিদ্রের মধ্যে বস্ত্র বিতরণে ব্যয় করলেও ব্যয়ের সার্থকতা হয়।

তারপর বলতে চাই চাঁদা আদায়ের কথা। যাঁরা সমর্থ, তাঁরা আনন্দের সঙ্গেই চাঁদা দিয়ে থাকেন, কিন্তু শুনতে পাই স্থানে স্থানে চাঁদা সংগ্রহ ব্যপারে অসমর্থদের উপরে জুলুম করা হয়— তাও বাঞ্ছনীয় নয়। আমি অসমর্থ, চাঁদা দিতে পারি না— আমার কাছ থেকে জুলুম করে চাঁদা সংগ্রহ করে মায়ের পুজো দিলে মা কি সে পুজো গ্রহণ করবেন? এই প্রসঙ্গে বলতে চাই, কোন পাড়ায় বা পল্লীতে সকলে মিলে একখানি পূজা করলে অনেক খরচ কমে যায়, প্রতিমা ও পূজা মণ্ডপের হেডে। সেই অর্থে জনহিতকর কোন কাজ করা যায়, পাঠাগার বা ছোট গোছের চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন, কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমরা একই পল্লীতে ৩ খানি পূজা করব। সম্মিলিত ভাবে মাত্র একখানা করব না। এর ফলে, পরস্পরের মধ্যে মনোমালিন্যের বৃদ্ধি হয়, বা ঐক্যবদ্ধভাবে কোন জনহিতকর কার্য সম্পাদনে বাধা দেয়।

এই বিষয়গুলি সর্বজনীন পূজা কমিটির সভ্যবৃন্দকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করি। দেশের বর্তমান খাদ্যসংকট প্রত্যেক পরিবারকেই যেভাবে বিব্রত করে তুলেছে, সেদিকে লক্ষ রেখে পূজার ব্যয়-সংকোচ প্রয়োজন। প্রত্যেক পাড়ায় বা পল্লীতে একখানি করে পূজা হলেই সে ব্যয়-সংকোচ হতে পারে— এ বিষয়টি কমিটির সভ্যবৃন্দ ভেবে দেখেন।




ফিরে দেখা...

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.