|
|
কলকাতার কড়চা |
|
|
প্রতিমা, নতুন স্টাইল |
রক্ষণশীলেরা যতই ভুরু কোঁচকান, প্রতিমা নির্মাণের ধারা যে পাল্টাতে শুরু করেছে, এ সত্য স্বীকার করতেই হবে। প্রায় আড়াই শ’ বছর ধরে একচালের প্রতিমার বদলে বিরাট মণ্ডপের বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো মূর্তিগুলিও আমাদের চোখে যখন অভ্যস্ত হয়ে এসেছিল, তখন প্রতিমার রূপকল্পনার নতুন ধাক্কায় আবার আমরা সচকিত হয়ে উঠলাম। রাজবল্লভ পাড়ার সি-আই-টি পারক (জগৎবন্ধু পারক) সার্বজনীনের উদ্যোক্তারা সাহসের সঙ্গে ১৯৬১ সাল থেকে প্রতিমা নির্মাণে একেবারে বৈপ্লবিক পথে অগ্রসর হয়ে আমাদের সামনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিলেন। এবার যদিও মধ্য পাইকপাড়ার ভি পি ও পি ক্লাবে ১৭ বছরের এক কিশোর শিল্পী শ্রীমান প্রবাল বসু রিলিফের মহিষমর্দিনী নির্মান করে একটু নতুনত্ব এনেছেন, এতে রঙের কাজ করেছেন কুমকুম মুনসি এবং রবীন্দ্রকাননে মহীশূরে প্রাপ্ত মহিষমর্দিনীর অনুসরণে শ্রীকালীপদ পাল ও শ্রীবিষ্ণুচরণ পাল নয়নাভিরাম প্রতিমা গড়ে বৈচিত্র্য এনেছেন তথাপি এবারেও জগৎবন্ধু পারকের প্রতিমাই কল্পনা এবং গড়নে একেবারে নতুন ধারার একমাত্র উদাহরণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পী শ্রীসুনীল পালের শিষ্য। শিল্পীর সঙ্গে আলোচনা করে তাঁর ধ্যান সর্ম্পকে অবহিত হওয়া গেল। শুভ ও অশুভের চিরন্তন সংঘাত এবং অশুভ বা অসুরের পরাভব এই শাশ্বত পৌরানিক ধারণাকে শিল্পী নাটকীয়ভাবে প্রকাশ করতে ধ্রুপদী এবং গীতিধর্মী শৈলীর এক আশ্চর্যরকম মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। মনে হয় যেন দেবীর লীলা একটি চিত্রপটের মধ্যই জীবন্তরূপে প্রকট হয়ে উঠেছে। পটের বাঁদিকে মানবসভ্যতার উপরে সর্বমঙ্গলা দেবী অশুভের সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রামে আবদ্ধ। তাঁর চতুর্দিকে মন্ডলাকারে সিদ্ধিদাতা গণেশ, ঐশ্বর্যের অধিশ্বরী লক্ষ্মী, বাগদেবী বীণাপাণী এবং দেবসেনাপতি কার্তিকেয়। দক্ষিণ ঊর্ধ্বাকাশে দেদীপ্যমান সূর্য আশা ও নবজীবনের প্রতীকরূপে ডাম্বরু নীচে ঘোর দুর্যোগের মসীলিপ্ত পটভূমিকায় অমঙ্গল ও অশুভরূপী অসুরেরা পরাভূত। শুভ ও অশুভের মধ্যে লাল রক্তের স্রোতধারা প্রবাহিত। দেবীর বাহন এখানে বাঘ, পাঁচটা বাঘ। পঞ্চভূতের প্রতীক। দেবী দূর্গা, বাঘ এবং অসুরেরা মাটির তৈরি, পটভূমিকার ঢেউ এবং দুর্যোগের প্রতীক ঝড়ঝঞ্ঝা প্ল্যাসটারের গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক কাঠ কেটে তৈরি এবং সব নিচের প্যালেস দুটো- মানবসভ্যতা ও ঘোর অমঙ্গল-অঙ্কিত।
|
আগুন নিয়ে খেলা |
কোথাও আগুন লাগলে, তা সে পুজো প্যানডেলে, পাটের গুদামে অথবা গেরস্তের বাড়িতে যেখানেই লাগুক, সব থেকে তাড়াতাড়ি আগুন নেভানো যায় ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িতে ঢিল মারলে বা তার কর্মী ও অফিসারদের হেনস্থা করলে আর যাই হোক আগুন নেভে না। এই শাদা কথাটা যে আমরা মনে রাখিনে, সেটাই দুঃখের। আরও দুঃখের ফায়ার ব্রিগেডের নিয়মকানুনও আমরা যারা পুজো নিয়ে মত্ত ঠিকমত মেনে চলিনে। ফলে নিজেদের বিপন্ন করি, প্রতিবেশীদেরও বিপদের মুখে ঠেলে দিই।
এবারের পুজোর কথাই ধরুন। কলকাতায় পুলিশের হিসেবে এবার প্রায় আট শ পুজো হচ্ছে। আর ফায়ার ব্রিগেডের কাছে প্যানডেল বাঁধার অনুমতি নিয়েছেন মাত্র চার শ’টি সংস্থা। তার মানে কলকাতা শহরে এবার আরও প্রায় চার শ পুজো হচ্ছে ফায়ার ব্রিগেডের বিধিনিষেধ একেবারে লঙ্ঘন করে। এই আত্মঘাতী কাজ যাতে অবিলম্বে বন্ধ হয় তা দেখা সৎ নাগরিক-মাত্রেরই কর্তব্য। ফায়ার ব্রিগেডে জনৈক পদস্থ অফিসার জানালেন, শুক্রবার কনভেনট রোডে যে প্যানডেলটি পুড়েছে তা ফায়ার ব্রিগেডের অনুমতি না নিয়েই বানানো হয়েছিল। গত বছর গিরীশ পারক এবং গোল পারকের মন্ডপেও আগুন প্রতিরোধ সম্বন্ধে যথাবিহিত ব্যবস্থা অবলম্বন না করার দরুনই আগুন লাগে। আগুন-আইন ভঙ্গ করলে সাজার ব্যবস্থা আছে, তবে আজ পর্যন্ত সে আইনের ব্যবস্থা হয়নি। তাই এখন অবাধে কলকাতা শহরে আগুন নিয়ে খেলা চলছে।
|
‘অটোমেশন’- নাশিনী |
কলকাতায় এবার পুজোর জোর খবর ‘অটোমেশন’-নাশিনী দূর্গোৎসব। খবরে প্রকাশ, অটোমেশন-অসুর বিনাশকল্পে জীবনবীমা কর্মীরা ব্রেবোন রোডে ইলাকো হাউসের সদর ফটকে এ বছর দেবী দূর্গার পুজো করেছেন। পুজোকে পুজোও হল, আবার পুজোর ছুটির ফাঁকতালে কর্তৃপক্ষ কমপিউটার যন্ত্র যাতে বসাতে না পারেন, তার খবরদারিও হল। |
|
ফিরে দেখা... |
|
|