|
হঠাৎ একনজরে দেখলে মনে হবে বুঝি ‘হ্যাপি ন্যু ইয়ার’। ডালপালায় জড়ানো লাল-নীল বাতিগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে খ্রীষ্টমাস ট্রী। আলো কি শুধু গাছে গাছে? চওড়া পথের ওপর ক্রশবেল্টের মত টাঙ্গানো আলো আর আলো!
ইদানীং কয়েক বছর সাহেবপাড়া পার্ক স্ট্রীটও পুজোর সময় বাঙালী মেয়েদের মত প্রসাধন করছে, নতুন ফ্যাশনে সাজছে। এবারের সাজটা একটু বেশী, প্রসাধনটা যেন আরও কড়া। সিমলা বাগবাজার আর গড়িয়াহাটার সঙ্গে এবার পার্ক স্ট্রীটের ফারাক বোঝাই দায়।
কিন্তু তবু আশ্চর্যের কথা সাহেবপাড়ার পুজো হচ্ছে না। আপিসপাড়া ডালহৌসিতেও ঢাকের বাদ্যি শোনা যায় কিন্তু খোদ সাহেব পাড়া, —পার্ক স্ট্রীটটা পার হলেই গোটা সাহেবপাড়া অন্ধকার। এখন অবশ্য ওসব পাড়ায় ও-দেশী সাহেবের চেয়ে এ-দেশী সাহেবরাই বেশী। তবু ওপাড়া দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়ল টেনিশ লনে ফ্লাড লাইট আজও জ্বলছে। দোতলা-তিনতলা থেকে পিয়ানো অথবা চা-চা-চা’র সুর ভেসে আসছে। পথঘাট রাত আটটার মধ্যেই জনশূন্য। সাহেবপাড়ায় এখন পুরো ‘হলিডে মুড’।
তবে বাঙালী পাড়ার লোক সাহেব পাড়ায় আসছেন। টালা-টালিগঞ্জের ভিড়ে যাঁরা হাফিয়ে উঠেছেন তাঁরা বাদুড়ঝোলা হয়ে ট্রামে বাসে ঝুলতে ঝুলতে চৌরঙ্গী পাড়ায় চলে এসেছেন। এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোতে আজ বাঙালী পাড়ারই ভিড়। পর্দাঢাকা কেবিন খালি পাওয়াই দায়। মুরগী মসল্লাম, চৌ-মিন, মাটন-কাবাব, চিকেন বিরিয়ানির ঘন ঘন অর্ডার যাচ্ছে।
সাহেবপাড়ার মোড়েই দেখা এক পরিচিতার সঙ্গে। নিজেই ড্রাইভ করে চলেছেন। ট্রাফিক সিগন্যাল দেখে গাড়ি বেঁধেছেন আমাদের গাড়ির ধার ঘেঁষে। দক্ষিণমুখী দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, কী ব্যাপার, পুজো দেখতে নাকি? এনামেল করা মুখে কয়েক ইঞ্চি হেসে উনি বললেন : না না। ওসব শখ নেই। লুসি আর সিসি বড্ড ডিসটার্ব করছে একটু নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছি। সভয়ে দেখি জানালা দিয়ে দুটো ইয়া বড় অ্যালসেসিয়ান উঁকি মারছে।
|
|