নতুন দু’টি বাংলা মাধ্যম কলেজ চালু করতে চলেছে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ। নতুন শিক্ষাবর্ষেই (২০১৪-১৫) এই কলেজ দু’টি চালু হয়ে যাবে। রাজ্যের নানা প্রান্তে জেভিয়ার্সের একাধিক স্কুল থাকলেও কলেজ খোলার উদ্যোগ এই প্রথম। এ কথা জানিয়ে কলকাতার এই স্বশাসিত কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার ফেলিক্স রাজ বলেন, “আপাতত আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রাঘবপুর এবং বর্ধমান শহরে দু’টি কলেজ চালু করব। কলেজগুলির পঠনপাঠন পুরোদস্তুর বাংলা মাধ্যমে হবে।”
শতাব্দী-প্রাচীন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ বরাবরই প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পেয়ে এসেছে। পুরোদস্তুর ইংরেজি মাধ্যমে পাঠনপাঠন শেষে এই কলেজের প্রাক্তনীরা দেশ-বিদেশে নানা ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। এই পরিস্থিতিতে জেলায় বাংলা মাধ্যমের নতুন দু’টি কলেজকে জেভিয়ার্সের ‘গ্রামীণ মুখ’ হিসেবেই দেখছেন কর্তৃপক্ষ। কলেজ চালুর জন্য ইতিমধ্যে একটি নিবিড় সমীক্ষাও করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অধ্যক্ষ জানান, বিগত কিছু বছর ধরে তাঁরা লক্ষ্য করছিলেন, জেলার স্কুলে তাঁদের যে পড়ুয়ারা আছেন, তাঁরা প্রায় কেউই কলকাতায় কলেজে ভর্তি হন না। কারণ খুঁজতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ দেখেন, কলকাতায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয় বলে গ্রামের সাধারণ পড়ুয়ারা অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অধ্যক্ষ বলেন, “এই প্রবণতা দেখে রাঘবপুর এলাকার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির পড়ুয়াদের কাছে গিয়ে কলেজের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করতে সমীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ওই এলাকাগুলিতে যদি বাংলা মাধ্যমে কলেজ চালু করা হয় তা হলে পড়ুয়ারা আমাদের কলেজে ভর্তি হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তার পরেই আমরা পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছতে বাংলা মাধ্যমে নতুন কলেজ তৈরির পরিকল্পনা নিই।”
কলকাতা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুর বিধানসভার অর্ন্তগত রাঘবপুরে রয়েছে শতাব্দী-প্রাচীন সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল। ওই স্কুল ক্যাম্পাসের কাছেই প্রস্তাবিত কলেজের নতুন ভবন ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। একই ভাবে বর্ধমান স্কুল ক্যাম্পাসের কাছে নতুন কলেজ তৈরি করা হচ্ছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়েই ওই কলেজ চালু হবে বলে জানা গিয়েছে। নতুন দু’টি কলেজের ক্ষেত্রে শংসাপত্র দেবে যথাক্রমে কলকাতা এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজে দু’টিতে আপাতত সাধারণ বিএ, বাংলা ও বিকম (সাম্মানিক) পড়ানো হবে। প্রতিটি বিষয়ে মেধার ভিত্তিতে ৫০ জন করে পড়ুয়াকে ভর্তি নেওয়া হবে। ফি-ও থাকবে সাধারণের নাগালের মধ্যে। পড়ুয়াদের আগ্রহ দেখে আগামী বছরগুলিতে একে-একে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, শিক্ষাবিজ্ঞান-সহ একাধিক বিষয় চালু করা হতে পারে।
অধ্যক্ষ জানান, নতুন কলেজের জন্য আলাদা অধ্যাপক নিয়োগ করা হবে। কলকাতার কলেজ থেকেও অধ্যাপকেরা গিয়ে নতুন কলেজে ক্লাস নেবেন। তাতে উৎকর্ষ তথা গুণমান বজায় থাকবে বলে মনে করে তিনি। বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হলেও নতুন পড়ুয়াদের যুগোপযোগী করতে ইংরেজিতেও জোর দিতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। সেই উদ্দেশ্যে স্পোকেন ইংলিশ-সহ বেশ কিছু কোর্সও পাঠ্যক্রমে থাকবে বলে জানা গিয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারের মতে, “সেন্ট জেভিয়ার্স যদি বর্ধমানে কলেজ চালু করে, তা অবশ্যই সাধুবাদের যোগ্য।” প্রয়োজনীয় সহযোগিতারও আশ্বাস দেন তিনি। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক দিলীপ মণ্ডল বলেন, “এই বিধানসভা এলাকায় কোনও কলেজ নেই। জেভিয়ার্স এখানে কলেজ করলে আশেপাশের ছ’-সাতটি অঞ্চলের মানুষ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন।” |