সল্টলেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) কার্যালয়ের সামনে অনশন কর্মসূচি ১৯ দিনে পড়ল। সোমবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু নিজে হস্তক্ষেপ করে অনশন ভাঙার আর্জি জানিয়ে বলেছেন, অনশনকারীদের অধিকাংশেরই চাকরি হবে। তাঁরা যেন অনশন তুলে নিয়ে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করেন।
রবিবারই শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আন্দোলনকারীদের দাবি ন্যায্য হলে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ দিন তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁকে ব্রাত্যবাবু জানান, এ দিনই বিবৃতি দিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা হবে। তার পরেই শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনকারীদের অনশন তোলার আর্জি জানান। আশ্বাস দেন, সরকার অধিকাংশেরই চাকরির ব্যবস্থা করবে।
চূড়ান্ত মেধা-তালিকায় ঠাঁই হওয়া সত্ত্বেও কাউন্সেলিংয়ে ডাক পাচ্ছেন না এই অভিযোগে অনশন করছেন এসএসসি-র চাকরিপ্রার্থীরা। অনশনে আন্দোলনকারীদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, মেধা তালিকায় তাঁদের পিছনে থাকা অনেক প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসেও অনশন তুলতে রাজি নন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ১০০% আন্দোলকারীকেই চাকরি দিতে হবে। আর শিক্ষামন্ত্রীকে অনশন মঞ্চের সামনে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ব্রাত্যবাবু সন্ধ্যায় বলেন, “আইন যদি বলে ১০০% প্রার্থীকে চাকরি দিতে হবে, তাই-ই হবে। আর ওঁদের সঙ্গে আগেও দেখা করেছি। চাইলে আবার করব।” শিক্ষামন্ত্রী জানান, চতুর্থ কাউন্সেলিংয়ের উপরে স্থগিতাদেশ কোর্টের রায়েই উঠেছে। নতুন করে কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। তাঁর মতে, এখনও অনশন চালানো অযৌক্তিক। আন্দোলনে রাজনীতির রং না লাগাতেও আর্জি জানান শিক্ষামন্ত্রী।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতরের সামনে তৈরি অনশন মঞ্চে এ ক’দিনে দেখা গিয়েছে সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা, তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক শিখা মিত্র, প্রাক্তন নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেককেই। আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রবিবার এসএসসি দফতরের সামনে যান সিপিএম নেতা গৌতম দেবের পুত্র সপ্তর্ষি। আজ, মঙ্গলবার বেলা ১২টায় অনশনকারীদের সঙ্গে সূর্যকান্তবাবুর দেখা করার কথা। সোমবারই আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল বিধানসভা ভবনে গিয়ে সূর্যকান্তবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। সূর্যকান্তবাবু পরে বলেন, “চতুর্থ কাউন্সেলিং হবে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এক এক জন অফিসার এক এক রকম বলছেন! আমরা অনশনকারীদের দাবি সমর্থন করছি। এঁদের নিয়োগ করা হলে রাজ্য যোগ্য প্রার্থীই পাবে।”
তবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সহকারী সচিব অমিতেশ বিশ্বাসের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মাওবাদী যোগ রয়েছে। একাধিক পরিচিত মাওবাদী মুখকে গৌতম দেবের পুত্র সপ্তর্ষির সঙ্গে মঞ্চে দেখা গিয়েছে। অনশনকারীরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন সূর্যকান্তও। সপ্তর্ষির দাবি, “আমি অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করেছি। তবে আমার সঙ্গে মাওবাদী-সমর্থক ছিলেন না। উনি (সহকারী সচিব) নাম করে জানান কোন কোন মাওবাদী-সমর্থক ছিলেন।” এই বিষয়টি নিয়েও হস্তক্ষেপ করতে হয় শিক্ষামন্ত্রীকে। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে, ওঁরা (অনশনকারীরা) মাওবাদী।”
বিভ্রান্তির সূচনা অমিতেশবাবুর মন্তব্যে। অমিতেশবাবু বলেছিলেন, “রবিবার রাতে যখন দফতর থেকে বেরোই, দেখি প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের ছেলে সপ্তর্ষি এবং কিছু মাওবাদী ছেলেমেয়ে এসেছে অবস্থানকারীদের সঙ্গে দেখা করতে।” সহকারী সচিবের দাবি, ওঁদের আগে পুলিশ ধরেছে। ওঁরা পরিচিত মুখ। ‘মাওবাদীদের হাত থেকে দফতরকে বাঁচাতে’ আন্দোলনকারীদের এসএসসি অফিসের শৌচাগার ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। অমিতেশবাবুর দাবি, শৌচাগার ব্যবহারের অজুহাতে দফতরে ঢুকে অন্তর্ঘাত ঘটাতে পারে মাওবাদীরা। টেট-এর লক্ষ লক্ষ আবেদন নষ্ট করতে পারে, দফতরের আধিকারিকদের আক্রমণও করতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা। অনশনকারীদের দাবি, তাঁদের রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই। কেবল চাকরির দাবিতেই অনশন। তাঁদের অভিযোগ, শৌচাগার ব্যবহার থেকে বঞ্চিত করা এবং অনশন-মঞ্চের আলোর বিদ্যুৎ-সংযোগ কাটা হয়েছে। অমিতেশবাবুর বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও জানিয়েছেন তাঁরা। অমিতেশবাবু অভিযোগ মানেননি। |