লোকসভার ফল দেখে পা ফেলবেন রেজ্জাক, জল্পনা
বার কী করবেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা!
রবিবার দিনের আলো দেখেছে তাঁর ‘সামাজিক ন্যায়বিচার মঞ্চ’। মুসলিম, তফসিলি জাতি ও উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর, দলিতদের একজোট করার লক্ষ্য সামনে রেখে। দলিত মুখ্যমন্ত্রী এবং মুসলিম উপমুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যে সরকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ঘোষণা করে। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য কি এ বার দল ছাড়বেন রেজ্জাক?
সিপিএম বিধায়ক নিজে অবশ্য বলছেন, লোকসভা ভোটে লড়বে না তাঁর মঞ্চ। লড়বে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে। বাম নেতাদের অনেকের মতে, লোকসভা ভোটে রাজ্যে, বিশেষ করে নিজের জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সিপিএম কেমন ফল করে, সেটাই আগে দেখে নিতে চাইছেন রেজ্জাক। বামেদের ফল যদি ভাল হয়, তা হলে দল ছাড়বেন না তিনি। ফল খারাপ হলে সিপিএম ছেড়ে ন্যায়বিচার মঞ্চকে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক দলের চেহারা দেবেন। তাই আপাতত চলছে সলতে পাকানোর প্রক্রিয়া।
সংখ্যালঘু ও তফসিলি ভোট বাদ দিয়ে যে হেতু এ রাজ্যে রাজনীতির অঙ্ক করা সম্ভব নয়, তাই রেজ্জাকের মঞ্চ বাম না তৃণমূল, কাদের সুবিধা করে দেবে, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রেজ্জাকের বক্তব্য, প্রথমত তাঁর মঞ্চ লোকসভা ভোটে লড়ছে না। ফলে আপাতত এ নিয়ে ভেবে লাভ নেই। দ্বিতীয়ত, তাঁদের মঞ্চ বামফ্রন্টের বিরোধিতা বা তৃণমূলকে সমর্থন করার জন্য নয়। বরং, তাঁরা ঘোরতর তৃণমূল-বিরোধী।
প্রথম দিন অন্তত রেজ্জাকের কনভেনশন মঞ্চ থেকে কড়া তৃণমূল-বিরোধী বক্তৃতাও হয়েছে। স্বয়ং রেজ্জাক সোমবারও বলেছেন, “বামপন্থার বিরুদ্ধে আমার কোনও রাগ নেই। কিন্তু বামপন্থী কারও কারও বিরুদ্ধে আমার বিস্তর রাগ! বামপন্থীদের ভুল এবং সেই ভুলের মাসুল কী দিতে হচ্ছে, তার কথা বলছি।” কিন্তু সিপিএম এবং বাম শিবিরের একাংশের আশঙ্কা, এমন উদ্যোগে ঘুরপথে লাভ হতে পারে তৃণমূলেরই।
কেন? বাম শিবির সূত্রে বলা হচ্ছে, শাসক দলের কাজকর্মে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশের যদি মোহভঙ্গ হয়ে থাকে, তা হলে বামফ্রন্ট তাদের কাছে টানার চেষ্টা করবে। কিন্তু বামপন্থী মোড়কেই রেজ্জাকের মঞ্চ আসরে থাকলে বিকল্প হিসাবে তাকেই বেছে নিতে পারেন অনেকে। বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে ফায়দা হতে পারে তৃণমূলের। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “হিন্দু-মুসলিম বিচার করে রাজনীতি আমাদের দলে হয় না। রাজনৈতিক নেতা হলে তার সামাজিক সত্তা বলে আলাদা কিছু বোঝানোও যায় না! এখন যা হচ্ছে, তাতে তৃণমূলেরই লাভ!”
এর উল্টো দিকের ব্যাখ্যা হচ্ছে, বিক্ষুব্ধ রেজ্জাকের ভাবমূর্তি ব্যবহার করে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ও আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে চাইছে সিপিএম-ই। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেমন মনে করছেন, “সিপিএম এখন বিলুপ্তপ্রায়। ক্ষমতায় ৩৪ বছর থেকেও সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য তারা কেন কিছু করেনি, তার জবাব ওদের কাছে নেই। বেনামে এখন নানা রকম চেষ্টা তারা করছে!” কিন্তু এরও আবার বিপরীত মত আছে বাম শিবিরে। এক বাম নেতার বক্তব্য, “রেজ্জাক তো ২০০৯-এর লোকসভা বা ২০১১-র বিধানসভা ভোটে ছিলেন। তাতে কি বামেদের সংখ্যালঘু সমর্থনে ভাঙন ঠেকানো গিয়েছে? উনি তো সিপিএম ছেড়ে দেননি। তা হলে মানুষ কি ওঁকে বিশ্বাস করবেন?”
এই অবস্থায় সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য রেজ্জাক অবশ্য বলছেন, “ওই মঞ্চ তো এখন ভোটেই যাচ্ছে না! তা হলে কার লাভ, এ সব ভেবে লাভ কী? তবে ২০১৬ সালে নিজেদের কথা ভাবতে হবে। তখন কাদের লাভ ভাবলে চলবে না!” ন্যায়বিচার মঞ্চের বক্তব্য, তফসিলি জাতি ও উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর, মুসলিম মিলে মোট জনসংখ্যার ৯৪%। সুতরাং, সব দলে ও সরকারে উচ্চবর্ণের আধিপত্যের অবসান ঘটাতে তাদের লড়াই যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। এই পরিসংখ্যান থেকেই রেজ্জাক বলছেন, “অঙ্ক আমার পক্ষে। কিন্তু রসায়নটা এখনও গোলমেলে!” কেন? রেজ্জাকের ব্যাখ্যা, “ওই ৯৪%-এর মধ্যে বাদসাদ দিয়ে ৬০%-কে পাব। কিন্তু জেলে-বাগদির সঙ্গে মুসলিম, এ সব একসঙ্গে মেলানোর কাজটা খুব কঠিন। তবে চেষ্টা করব।”
এখন প্রশ্ন, রেজ্জাকের এ হেন তৎপরতার প্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে কী পদক্ষেপ করবে সিপিএম? দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, ধীরে চলো নীতিই শ্রেয়। লোকসভা ভোটে রেজ্জাক দলের কাজ করবেন, ধরেই রাখছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সামনে সদস্যপদ নবীকরণের সময়ও আসছে। রেজ্জাক দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের ইনিংস খেলতে নেমেছেন ধরে নিয়েই তাড়াহুড়ো চাইছে না আলিমুদ্দিন। যদিও রেজ্জাক চ্যালেঞ্জ দিয়ে রাখছেন “আমাদের দলে যারা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করেন, তাঁদের মনোভাব কী হয় দেখি!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.