অবৈধ খাদান বন্ধের নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের
পাথরখাদানে কাজ করতে গিয়ে ‘সিলিকোসিস’ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শ্রমিকরা। মৃত্যু হয়েছে অন্তত দুই শ্রমিকের। রাজ্য সরকার খাদানে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ বলেই এমন ঘটছে, বলল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে অবৈধ খাদান বন্ধ করতে হবে। সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই যে সব বৈধ খাদান চলছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।
কমিশনের সিদ্ধান্ত, বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকের তালবাঁধের দুই পাথরখাদান শ্রমিক, দেবু রাউত এবং মিচু মুর্মুর মৃত্যু হয়েছে সিলিকোসিসেই। এটা মানবাধিকার ভঙ্গের ঘটনা। তাদের পরিবারকে রাজ্য কেন ক্ষতিপূরণ দেবে না, তার কারণ দর্শিয়ে (শো-কজ) ছয় সপ্তাহের মধ্যে কমিশনকে চিঠি দিতে হবে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে।
শ্রমিক মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের আর্জি জানান শমিতকুমার কর। শ্রমিক সুরক্ষা নিয়ে কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি শমিতবাবু বলেন, “এটা ব্যতিক্রমী নির্দেশ। ওই দুই শ্রমিকের যে সিলিকোসিস হয়েছিল, তার স্বীকৃতি দেয়নি রাজ্য। সরকারের বক্তব্য খারিজ করেছে কমিশন, কারণ সরকার মেডিক্যাল পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যায়নি।” এর আগে ১৯৯৬ সালে মেদিনীপুরে সিলিকোসিস-আক্রান্ত ১৭ শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ সেই রায়কে আরও শক্তিশালী করল, মত শমিতবাবুর।
প্রধানত আদিবাসীরাই খাদানে শ্রমিকের কাজ করেন। আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি মাড়োয়ার বীরভূমের নেতা ঘাসিরাম হেমব্রম বলেন, “আমরা চাই, নিয়ম মেনে খাদান, ক্রাশার চলুক। কিন্তু সরকার তা নিশ্চিত করতে পারছে না। তাই সরকার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।”
বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “এ রকম কোনও নির্দেশিকা বা চিঠি পাইনি।” তিনি জানান, কয়েক বছর আগে দূষণের অভিযোগ তুলে বীরভূম জেলা আদিবাসী গাঁওতা আন্দোলন করেছিল। তার পরে প্রায় দেড়-দু’বছর ধরে পাঁচামি এলাকার একটি সরকারি খাদান ও ক্রাশার বাদে সমস্ত খাদান ও ক্রাশার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। “বর্তমানে সব সরকারি নিয়ম মেনেই ওই এলাকা-সহ জেলার সমস্ত পাথর শিল্পাঞ্চলে খাদান ও ক্রাশার চলছে। এ নিয়ে আমারা সব সময়ই নজরদারি করি,” দাবি জেলাশাসকের।
খাদানের পাথরগুঁড়ো থেকে ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে সিলিকোসিস রোগ হচ্ছে শ্রমিকদের, এই অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কিন্তু রোগটির বাহ্যিক লক্ষণগুলি অনেকটাই যক্ষ্মার মতো। শ্রমিক অধিকার কর্মীদের অভিযোগ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিপূরণের দায় এড়াতে সরকার যক্ষ্মার চিকিৎসার নিদান দেয়। দেবু রাউত এবং মিচু মুর্মুর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল।
বীরভূমের ওই পাথরখাদানে শ্রমিকদের মধ্যে সিলিকোসিস রয়েছে, এই আশঙ্কার কথা রাজ্য সরকার এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জানিয়ে ২০১২ সালে চিঠি দেয় শমিতবাবুর সংস্থা। কমিশনের সুপারিশে সরকারি চিকিৎসকদের একটি দল ওই পাথরখাদানে গিয়ে ২৫ জন শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। তাতে ডাক পড়ে মিচু ও দেবুরও। কিন্তু রোগ নির্ণয়ের আগেই মৃত্যু হয় মিচু মুর্মুর। তিনি ২০০৯ সাল থেকেই অসুস্থ ছিলেন। দেবু রাউতের পরীক্ষা করে সরকারি তরফে কেবল যক্ষ্মার রিপোর্ট দেওয়া হয়। পরে তিনিও মারা যান। সরকারি দলের পরীক্ষায় ২৫ জন শ্রমিকের ২২ জনেরই যক্ষ্মা মেলে। কেবল এক শ্রমিকের সিলিকোসিস সন্দেহ করা হয়।
বেলুড় ইএসআই হাসপাতাল কিন্তু মিচু ও দেবুর পুরনো এক্স রে প্লেট পরীক্ষা করে জানায়, তাঁদের সিলিকোসিস হয়েছিল। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নির্দেশিকা (আইএলও রেটিং) অনুসারে পরীক্ষা করে ওই হাসপাতাল রিপোর্ট দেয়, সিলিকোসিসেই মৃত্যু হয়েছে ওই দুই শ্রমিকের। সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় কমিশনে। সরকারি ডাক্তারদের দলটি যে ২৫জন শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিল, বেলুড় ইএসআই হাসপাতালে তাঁদের ফের ডাক্তারি পরীক্ষার সুপারিশ করেছে কমিশন।
কেন সিলিকোসিস নির্ণয় করা গেল না সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “নির্দেশ হাতে না পেলে কিছুই বলতে পারব না।” শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। কিন্তু সিলিকোসিস নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দায়িত্ব কার, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে।”
বীরভূমের অবৈধ খাদান নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের বক্তব্যে অবশ্য ধোঁয়াশা নেই। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ, “ওই এলাকায় শ্রম দফতর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিসারদের যোগ ছাড়া কখনও অবৈধ পাথরভাঙার কল চলতে পারত না। যে অফিসারদের অবহেলা অথবা যোগসাজশের জন্য এই দুভার্গ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। যাঁরা জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.