সন্ত্রাসের উত্তর ২
দ্বিতীয় ইনিংসের অস্ত্রাগারে কালান্তক হেকলার
ফোন এসেছিল নেপাল থেকে।
ঝাপা জেলার বিরটামোড়ে বসে এক জন ভারতীয় নম্বরটায় ডায়াল করেছিলেন। ময়নাগুড়ির প্রদীপ রায়ের মোবাইল বেজে উঠেছিল। উল্লাডাবড়ি গ্রামের বছর তিরিশের যুবকটি তখন সবে খেতের কাজ সেরে বাড়ি ঢুকেছেন। ফোন ধরে তিনি থ। কিছুক্ষণ কোনও কথা সরল না তাঁর মুখে!
ও প্রান্তে যে খোদ জীবন সিংহ! কেএলও-র চেয়ারম্যান!
পুটিমারি মথুরামোহন হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক উতরোনো প্রদীপ ২০০১-এ কেএলও-র চতুর্থ ব্যাচের ক্যাডার। ভুটানের পিপিং শিবিরে জঙ্গি-তালিম নিয়েছিলেন নারায়ণ রায় ওরফে তরুণ থাপার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ভুটানে সেনা-অভিযানে ধরা পড়ে ছ’বছরেরও বেশি জেলে কাটিয়েছেন। ২০১০-এ ছাড়া পেয়ে গ্রামে এসে চাষবাসে কাজে মন দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১২-র জুনে ‘চিফ’-এর ওই ফোনই তাঁর ভবিতব্য অন্য খাতে বইয়ে দিল। নিরুত্তাপ জীবনের খোলস ছেড়ে ফের বেরিয়ে প্রদীপ রায় হয়ে গেলেন কেএলও-র সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকি ওরফে প্রাণনারায়ণ কোচ।
গোয়েন্দাদের দাবি: গত ২৯ জানুয়ারি খড়িবাড়ির ভারত-নেপাল সীমান্তে ধরা পড়া প্রদীপ ওরফে ইকবাল জেরার মুখে জানিয়েছেন, জীবন সিংহ একাধিক বার তাঁকে ফোন করে কেএলও-য় ফিরে আসার জন্য চাপাচাপি করেন। বলেন, জামিনে মুক্ত সমস্ত নেতাকে তিনি আবার সংগঠনে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গড়ে রাজবংশী সম্প্রদায়ের দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা যায়।
প্রদীপও শেষমেশ জীবনের আহ্বান ফেরাতে পারেননি। অসমের কোকরাঝাড় হয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন নেপালে।
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাংশ এখন মেনে নিচ্ছেন, ‘অপারেশন ফ্লাশ আউট’-এর পরে জীবন সিংহের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখা তাঁদের ভুল হয়েছিল। রাজ্য গোয়েন্দা শাখা (আইবি)-র এক কর্তার কথায়, “আমরা ভেবেছিলাম, জীবন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। টের পাইনি যে, তিনি তলে তলে নতুন ভাবে তৈরি হচ্ছেন। শক্তি বাড়িয়ে যাচ্ছেন।” পুলিশের এই মহলের বক্তব্য: কেএলও’র পত্তন থেকে শুরু করে সদস্যদের জঙ্গি-তালিম ও হাতিয়ার জোগানোয় আলফা’র বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু ভুটানে সেনা অভিযান যে আলফা’র মেরুদণ্ড দুর্বল করে দিয়েছে, তা বুঝতে অন্তত জীবন সিংহের দেরি হয়নি। তাই তিনি উত্তর-পূর্বের অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে থাকেন। তাঁর ‘মিত্র-তালিকা’য় আসে মণিপুরের প্রিপাক, কেসিপি, কেওয়াইকেএল, ইউএনএলএফ, ইউপিপিকে। সঙ্গে নাগাল্যান্ডের এনএসসিএন (খাপলাং গোষ্ঠী)। এমনকী, ত্রিপুরার এনএলএফটি এবং এটিটিএফ-ও।
অর্থাৎ, আগের দফার আলফা-নির্ভরতা দ্বিতীয় পর্যায়ে কাটিয়ে উঠেছেন জীবন। খুঁজে নিয়েছেন রসদের নিত্য নতুন উৎস। যেমন এখন তাঁদের আইইডি’র জোগানদার ও প্রশিক্ষক হল বড়ো জঙ্গিরা। আবার কেএলও-কে মায়ানমারের কাচিনে মূল প্রশিক্ষণ শিবির চালাতে সাহায্য করছে মণিপুরের কাংলিপাক কমিউনিস্ট পার্টি (কেসিপি)। ধৃত টম অধিকারী, নীলাম্বর রাজবংশীদের মুখে এ তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: ২০১০ থেকে কাচিনের শিবিরে কেএলও-র জঙ্গি প্রশিক্ষণ চলছে। কেএলও-র অষ্টম থেকে ত্রয়োদশ ব্যাচের ক্যাডারেরা ওখানে নাশকতার পূর্ণাঙ্গ ট্রেনিং নিয়েছে। প্রসঙ্গত, কাচিনের পশ্চিম সীমান্ত ঘেঁষেই ভারত। ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে মণিপুর-নাগাল্যান্ড-অরুণাচলের সীমাম্ত।
পাশাপাশি অস্ত্রশক্তির নিরিখেও আগের তুলনায় অনেক বলীয়ান কেএলও। কী রকম?
গোয়েন্দাদের দাবি: মণিপুরি জঙ্গিদের কাছ থেকেই কেএলও পেয়ে গিয়েছে জার্মানির হেকলার অ্যান্ড কোচ-এর দুরন্ত অ্যাসল্ট রাইফেল এইচকে-৩৩। যাকে এক কথায় বলা যায়, কালান্তক মারণাস্ত্র। কালাশনিকভের চেয়েও মারণ ক্ষমতা বেশি। একে-৪৭ যেখানে মিনিটে ছ’শো গুলি ছুড়তে পারে, সেখানে এইচকে-৩৩ রাইফেলের ‘রেট অফ ফায়ার’ মিনিটে ৭৫০! ভারতীয় সেনা বা আধা ফৌজ তো নয়ই, এমনকী এসপিজি, এনএসজি-র মতো অভিজাত নিরাপত্তাবাহিনীর হাতেও অস্ত্রটি এখনও আসেনি। ভারতীয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি একে-৪৭ বা একে-৫৬ ব্যবহারে মোটামুটি সড়গড়, তবে এইচকে-৩৩ তাদের কাছেও নতুন। তবে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সেখানকার জঙ্গিদের একাংশ এটি ব্যবহার করে।
এবং সম্ভবত মায়ানমার-সূত্রেই ওই রাইফেল মণিপুরি জঙ্গিদের হাতে এসেছে, যার কয়েকটা তারা কেএলও-কে বিক্রি করেছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। এমন হাতিয়ার কত আছে কেএলও-র ভাঁড়ারে?
গোয়েন্দা-সূত্রের দাবি: এই মুহূর্তে কেএলও-র হেফাজতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তিরিশটি। এর সাতটা এইচকে-৩৩, বাকি সব কালাশনিকভ। এইচকে-৩৩ রাইফেলের শ’পাঁচেক রাউন্ড কার্তুজও মণিপুরি জঙ্গিদের থেকে কেএলও কিনেছে। গোয়েন্দারা এ-ও জেনেছেন, সাতটি এইচকে-৩৩ রাইফেলের ছ’টাই আপাতত অসমের কেএলও নেতাদের হাতে। শুধু একটা এইচকে-৩৩ ও দু’শো রাউন্ড কার্তুজ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্র এক কেএলও নেতার কব্জায়।
তিনি মালদহের হবিবপুরের কাংসা গ্রামের মাধব মণ্ডল। সংগঠনে যাঁর নাম মালখান সিংহ।

(শেষ)

তালিমের রুটিন
• ভোর ৪টেয় বিছানা ছাড়া
• শারীরিক কসরত সেরে প্রাতরাশ
• সকাল ১০টায় মধ্যাহ্নভোজ
• আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড ব্যবহারের ট্রেনিং*
• বিকেলে ফের শারীরিক কসরত
• সন্ধ্যায় মতাদর্শের ক্লাস
• রাত ৭টার মধ্যে নৈশাহার
• সাড়ে ৭টায় ঘুম
* মায়ানমারের শিবিরে



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.