|
|
|
|
জমির পাট্টার দাবিতে গায়ে আগুন ভূমিহীন মিস্ত্রির
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি
২৪ ফেব্রুয়ারি |
জমির পাট্টার দাবিতে ভূমিহীনদের বিক্ষোভে উত্তাল হল অসম। দিসপুর সচিবালয়ের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করলেন আন্দোলনে সামিল এক কাঠমিস্ত্রি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অবরোধে থম্কে গেল রেল, সড়ক যোগাযোগ। দরিদ্র ভূমিহীনদের জমির পাট্টা না-দেওয়া হলে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর সামনে গায়ে আগুন দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ‘কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি’র নেতৃত্ব। ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘পূর্বঘোষিত’ ওই আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত ছিল পুলিশ-প্রশাসন।
সোমবার সকাল ১০টা। দিসপুর সচিবালয়ের চারপাশে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। আগুনে ‘আত্মাহুতি’ রুখতে রাখা হয়েছিল কম্বল। আচমকা সচিবালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে ছুটে এলেন দাউ-দাউ আগুনে জ্বলতে থাকা এক ব্যক্তি। পেট্রলের গন্ধ ছড়াল চারপাশে। হতচকিত পুলিশকর্মীরা। কম্বল, জল দিয়ে যতক্ষণে আগুন নেভানো হল, ততক্ষণে তাঁর শরীরের অনেকটা ঝল্সে গিয়েছে। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর দেহের ৯৫% পুড়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম প্রণব বড়ো। বাড়ি গড়চুকের জনতাপুরে। তিনি কাঠের মিস্ত্রির কাজ করতেন। |
অসমের দিসপুর সচিবালয়ের সামনে জমির পাট্টার দাবিতে গায়ে
আগুন দিলেন ভূমিহীন কাঠমিস্ত্রি। সোমবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
প্রণববাবুর স্ত্রী পূর্ণিমাদেবী বলেন, “সকালে উনি বলে গেলেন, জমির জন্য আজ আমি তরুণ গগৈয়ের সামনে গায়ে আগুন দেব। তারপরও জমি না পেলে তুমি মামলা ঠুকে দিও। আমি ওকে বার বার বললাম, তুমি না-থাকলে সরকার আমাকে দেখবে না। স্বামীর মৃত্যুর জন্য তরুণ গগৈই দায়ী।” স্বামীর মৃত্যুর জন্য তরুণ গগৈ ও পৃথ্বী মাঝিকে দায়ী করে থানায় অভিযোগ করেছেন পূর্ণিমাদেবী।
অসমের বনাঞ্চল, জলাজমিতে বসবাসকারী দরিদ্র পরিবারগুলিকে পাট্টা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি। রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, কেন্দ্রের নীতি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য পাহাড়, বনাঞ্চল ও জলাভূমি জবরদখল করে থাকা পরিবারগুলিকে জমির পাট্টা দেওয়া সম্ভব নয়। ২০১১ সালের জুন মাসে ভূমিহীনদের নিয়ে দিসপুরে আইন অমান্য আন্দোলন করেন অখিল। পুলিশের গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর ভূমিহীনদের জমি বিলি করতে একটি বিশেষ কমিটি গড়ে সরকার।
রাজস্বমন্ত্রী পৃথ্বী মাঝি জানান, কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ঠিক হয়েছে ২০১১ সালের ২৮ জুন পর্যন্ত ১০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে গুয়াহাটি ও তার আশপাশে সরকারি জমিতে বসবাসকারী ৭০-৭৫ হাজার পরিবারকে দফায়-দফায় জমির পাট্টা দেওয়া হবে। সময় লাগবে কমপক্ষে ৩ বছর। কিন্তু অখিল দাবি করেন, ৬ মাসের মধ্যে সকলকে জমি দিতে হবে। গুয়াহাটির আশপাশের পাহাড়, কাজিরাঙা লাগোয়া এলাকায় জমির পাট্টা দেওয়ার দাবিও তোলেন।
আজ সরকারিভাবে ভূমিহীনদের জমির পাট্টা দেওয়ার কাজ শুরু হয়। অখিল-বাহিনী অনুষ্ঠান বাতিলের হুমকি দিয়েছিল। সকালেই কইনাধারা ও ভরলুতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ হয়। তিনসুকিয়া, গোলাঘাট, নগাঁও, মরিগাঁও, সরুপথার, নাওজান, খকন্দগুড়িতে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়। দিসপুরের ঘটনায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন অখিল।
প্রণববাবুর মৃত্যুর দায় অস্বীকার করে কৃষক মুক্তির সাধারণ সম্পাদক কমলকুমার মেধি বলেন, “ভূমিহীন কার্বি, বড়ো উপজাতির মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বাসযোগ্য জমির জন্য আন্দোলন করছেন। পুঁজিপতিদের জমি দিলেও, ওঁদের বঞ্চিত করছে সরকার। আজকের ঘটনা তারই ফলশ্রুতি।” প্রতিবাদে আগামীকাল গুয়াহাটি বন্ধের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি। এই মৃত্যুর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করেন বিজেপি সাংসদ বিজয়া চক্রবর্তী ও অগপ সভাপতি প্রফুল্ল মহন্ত।
মুখ্যমন্ত্রী গগৈ বলেন, “সরকার অখিলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই যা করার করেছে। তা হলে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এই আন্দোলন কেন? আমরা বন, পাহাড়, জলাভূমিতে জবরদখল মেনে নিতে পারি না। দারিদ্র্যসীমার নীচে যে সব পরিবার আবেদন করেছেন, তাদের দফায়-দফায় জমি দেওয়া হবে।” গগৈ বলেন, “আন্দোলনকারীরা কেন মোদীর সামনে বিক্ষোভ দেখান না? কেন রাহুলের সফরকেই নিশানা করা হচ্ছে? এর পিছনে রাজনীতির গন্ধ রয়েছে।” |
|
|
|
|
|