|
|
|
|
ভোটের আগেই সঙ্গী খুঁজতে মরিয়া কংগ্রেস
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৪ ফেব্রুয়ারি |
এক-আধটা নয়, তামাম জনমত সমীক্ষাই তাঁদের রক্তক্ষরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই অবস্থায় প্রকাশ্যে সাহসী মুখ দেখালেও নতুন জোট সঙ্গী খুঁজতে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে কংগ্রেস। এতটাই যে দলের চাপে তাঁর পুরনো অবস্থান ছেড়ে আপসেও পিছ পা নন রাহুল গাঁধী।
পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের পর সেখানকার আঞ্চলিক দল টিআরএসের সঙ্গে এখন স্বাভাবিক নিয়মেই সমঝোতার অঙ্ক নিয়ে বসেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। আজও রাহুল গাঁধীর বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন টিআরএস নেতা চন্দ্রশেখর রাও। কিন্তু তার থেকেও তাৎপর্যের, অন্ধ্রের মতোই আজ থেকে উত্তরপ্রদেশ ভাগের জন্যও জোর সওয়াল করতে নেমে পড়লেন জয়রাম রমেশের মতো রাহুল ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতারা। যে দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানাচ্ছেন দলিত নেত্রী মায়াবতী এবং রাষ্ট্রীয় লোকদল নেতা অজিত সিংহ। জয়রামের এই বক্তব্য দলিত নেত্রীর প্রতি কংগ্রেসের বার্তা বলেই দেখছেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কংগ্রেস সূত্রে খবর, হিন্দি বলয়ে এই নতুন তাস খেলার পাশাপাশি জোটের চেষ্টা চলছে দক্ষিণেও। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে এবং বিজয়কান্তের সঙ্গে সমঝোতার জন্য কার্যত এখন আদা জল খেয়ে নেমেছেন গুলাম নবি আজাদ ও মুকুল ওয়াসনিকরা।
এ সবের মাঝে কংগ্রেসকে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছেন রামবিলাস পাসোয়ান। কারণ, কংগ্রেস ধরেই নিয়েছিল, বিহারে লালু প্রসাদ এবং পাসোয়ানের সঙ্গে তাদের জোট হবে। কিন্তু পাসোয়ান বিজেপিকে আঁতাঁতের বার্তা দেওয়ায় কংগ্রেস কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। তবে অস্বস্তি কাটাতে আজ মহারাষ্ট্রে গেরুয়া দুর্গে ভাঙন ধরিয়ে ভারসাম্যের চেষ্টা করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সিরডি-র শিবসেনা সাংসদ ভাউসাহেব ওয়াকচুড়েকে আজ কংগ্রেসে সামিল করিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মহারাষ্ট্রের দলিত নেতা সুশীল শিন্দে। তলে তলে রাজ ঠাকরের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে কংগ্রেস, যাতে মহারাষ্ট্রে আগের বারের মতোই সর্বশক্তি দিয়ে লড়েন রাজ এবং সেনা-বিজেপির ভোটে থাবা বসান। তা হলে কংগ্রেস-এনসিপি জোটেরই সুবিধা। চিন্তা অবশ্য রয়েইছে। কারণ, রাজ গোপনে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও আঁতাঁত করতে পারেন।
তুলনায় তেলঙ্গানা প্রশ্নে কিছুটা হলেও আশাবাদী কংগ্রেস নেতারা। রাহুলের সঙ্গে চন্দ্রশেখর রাওয়ের বৈঠকে আজ প্রিয়ঙ্কা বঢ়রা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহও উপস্থিত ছিলেন। পরে দলীয় সূত্রে বলা হয়, চন্দ্রশেখরকে বোঝানো হচ্ছে তাঁর দলকে কংগ্রেসের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে। এ ব্যাপারে অতীতে ঘোষণাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন মওকা বুঝে প্রথমে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি করছেন চন্দ্রশেখর। একই সঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পরিবর্তে জোটের কথা বলছেন। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, হতে পারে চন্দ্রশেখর ভবিষ্যতের জন্য দরজা খুলে রাখতে চাইছেন, যাতে লোকসভা ভোটের পর চাইলে বিজেপি-র সঙ্গে সমঝোতা করতে পারেন। কংগ্রেস তাই জোটের ক্ষেত্রে তেলঙ্গানার বেশি লোকসভা আসন দাবি করেছে। পরিবর্তে বিধানসভা ভোটে তাঁকে বেশি আসন দেওয়া হবে। তাঁর দল যদি কংগ্রেসে মিশে যায়, সে ক্ষেত্রেও বিধানসভা ভোটে তাঁর পছন্দেরই বেশি প্রার্থী থাকবে।
চন্দ্রশেখরকে এ কথা বললেও কংগ্রেস নেতারা কিন্তু চাইছেন, তেলঙ্গানায় বিধানসভা ভোট হোক লোকসভা নির্বাচনের পরে। সে ক্ষেত্রে চন্দ্রশেখরের খুঁটি বাধা থাকবে তাঁদের কাছে। কিন্তু সেই বিষয়টি চন্দ্রশেখর যে বুঝছেন না, তা নয়। যদিও ঘরোয়া আলোচনায় বলেন আজও চন্দ্রশেখর সাংবাদিকদের বলেন, সমঝোতা সূত্র যা-ই হোক, এ বার ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকবে টিআরএস।
তেলঙ্গানা নিয়ে এই আলোচনার তুলনায় কংগ্রেসের হিন্দি বলয়ের নেতারা অবশ্য আজ অনেক বেশি উত্তেজিত উত্তরপ্রদেশ ভাগের ব্যাপারে জয়রামের মন্তব্য নিয়ে। তাঁদের দাবি, উত্তরপ্রদেশে একলা চলোর পথ ছেড়ে রাহুল গাঁধীও এখন জোটে রাজি। জয়রামের মন্তব্য তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, তেলঙ্গানা যদি ভাগ হয়, তা হলে উত্তরপ্রদেশকেও চার ভাগ করা যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সেই কাজটাই এগিয়ে রেখেছিলেন মায়াবতী। এমনকী, সংসদে অন্ধ্র ভাগ নিয়ে বিতর্কের সময় তিনি সেই বিলকে সমর্থন করে জানিয়েছিলেন, উত্তরপ্রদেশকে ভাগ করতে চান বলেই তিনি তেলঙ্গানার পক্ষে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, জয়রাম তো মায়াবতীর কথাই নতুন করে বলেছেন। কিন্তু তাতে কি চিঁড়ে ভিজবে? কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যও আজ বলেন, “বলতে পারেন এ ব্যাপারে আমরা দলিত নেত্রীকে মিনতি করার স্তরে নেমে এসেছি।” কারণ, এই জোট হলে গোটা দেশে দলিত ভোট কংগ্রেসের দিকে আসতে পারে। এমনকী মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যে কিছু আসনে তা নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু একে তো মায়াবতী প্রাক ভোট জোট গড়া অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। তার ওপর কংগ্রেসের এই উদ্যোগে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মায়াবতীর অন্যতম আস্থাভাজন সতীশ মিশ্র। তাঁর কথায়, “জোট দূরস্থান, কংগ্রেসকে লাঠি দিয়েও ছোঁয়া যাবে না।” তবে পাল্টা চেষ্টা চালিয়ে কংগ্রেস নেতারা মায়াবতীকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার পর উত্তরপ্রদেশে বিএসপি-র সঙ্গে বিজেপি-র পুরনো সমীকরণ ধাক্কা খেয়েছে। দলিতদের পাশাপাশি উচ্চবর্ণের ভোট পেয়ে মায়া এক সময় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু এ বার লোকসভা নির্বাচনে উচ্চবর্ণের ভোট বিজেপি-র দিকে যেতে পারে। এই অবস্থায় কংগ্রেসের সঙ্গে তিনি জোট করলে দলিতের সঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটের সিংহ ভাগ পেতে পারেন। কারণ, উত্তরপ্রদেশের মুসলিমদের সমাজবাদী পার্টির ওপর এখন মোহভঙ্গ হয়েছে। কংগ্রেসের ওই শীর্ষ সারির নেতা আজ বলেন, বিএসপি-র বরফ এখনও গলেনি ঠিকই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে এই চেষ্টা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চালিয়ে যাবে কংগ্রেস। |
|
|
|
|
|