বারান্দায় এসে পড়েছিল গাছের ডাল। নজর এড়ায়নি তাপসের। বাড়ির সদস্যরা বাইরে যেতেই ডাল বেয়ে বারান্দায় উঠে পড়েছিল সে। বারান্দার দরজাও ছিল খোলা। ল্যাপটপ, মোবাইল, টাকা হাতিয়ে সোজা চম্পট। কমপক্ষে বারোটি বাড়িতে এ ভাবেই চুরি করেছিল তাপস সর্দার। পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে, প্রতি বারেই গাছের ডাল, পাইপ বেয়ে বারান্দায় উঠত। তাপসকে গ্রেফতার করে মিলেছে একাধিক মোবাইল, ল্যাপটপ।
সোমবার সল্টলেক (উত্তর) থানায় এক অনুষ্ঠানে ওই চুরি যাওয়া সামগ্রী-সহ একাধিক চোরাই মাল ফেরত দিলেন বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা। কিন্তু পুলিশকর্তাদের অভিযোগ, বাসিন্দাদের একাংশ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন নন। অনুষ্ঠানেই অবশ্য অভিযোগ স্বীকার করে নেন বাসিন্দাদের একাংশ।
গত পুজোয় সপ্তমীর দুপুরে সল্টলেকের বিচিত্রা আবাসনের এক ফ্ল্যাটে ঢুকে চুরি করছিল চুরি-চক্রের দুই পাণ্ডা। গৃহকর্তা অরুণোদয় ভট্টাচার্য ও তাঁর মেয়ে বাড়ি ফিরলে তাঁদের আহত করে পালায় দুষ্কৃতীরা। সেই চক্রকেও ধরেছে পুলিশ। চক্রটি একাধিক রাজ্যে বিভিন্ন অপরাধ ঘটিয়েছে। এ দিন সেই চুরি যাওয়া সামগ্রীর একাংশ মেলে। |
সল্টলেকের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ জানান, চুরি বা অন্য অপরাধ হলেই সব দায় পুলিশের উপরে বর্তায়। নজরদারি-সহ নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশই দেখবে। তিনি আরও বলেন, “অপরাধ আটকাতে একযোগে কাজ করতে হবে। বাসিন্দারা সচেতন হলে অপরাধ-প্রতিরোধ সহজ হবে।”
পুলিশকর্তাদের অভিযোগ, কমিশনারেটের ৯টি থানার আওতায় সল্টলেক, নিউ টাউন-সহ একাধিক এলাকায় ব্লক কমিটি বা বাসিন্দাদের অ্যাসোসিয়েশনগুলি নিরাপত্তা নিয়ে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ করছে না। নিয়মিত বৈঠক করা, বা পুলিশকে নিয়ে নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনার মতো ব্যবস্থা হচ্ছে না। যদিও আগে সল্টলেকের বাসিন্দারা নিরাপত্তা, নজরদারি নিয়ে পুলিশের ভূমিকার একাধিক বার সমালোচনা এবং নিয়মিত বৈঠকের দাবি করেছিলেন।
পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, বৈঠক হচ্ছে না তা নয়, কিন্তু বহু ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েশনগুলির একাংশ উৎসাহ দেখাচ্ছে না। স্রেফ দায়ভার না চাপিয়ে একযোগে কাজ করলে অপরাধ দ্রুত নিয়ন্ত্রিত হবে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে পুলিশকর্তারা সচেতনতার নিয়ে একাধিক পরামর্শও দেন বাসিন্দাদের। তাঁদের বক্তব্য, ব্লক বা আবাসনগুলিতে কখনও সেলসম্যান, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি প্রভৃতি নানা পরিচয়ে দুষ্কৃতীরা নজরদারি চালাচ্ছে। তাই প্রবেশ পথে বহিরাগতদের নাম, ঠিকানা নথিভুক্ত করা, বা সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হলে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “ব্লক কমিটিগুলিকে দায়িত্ব নিতে হবে। পুলিশের পরামর্শ মানতে হবে। তবে অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন নন। স্রেফ পুলিশের কাধে দায়ভার না চাপিয়ে বরং হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। আশা করি, বাসিন্দাদের অধিকাংশ এ মত সমর্থন করবেন। আমরাও এ নিয়ে পথে নামব।” অবশ্য সল্টলেকের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেই সিসিটিভি বসিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাতে উপকারও হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।
যদিও একাধিক ব্লকের বাসিন্দাদের কথায়, নিরাপত্তারক্ষী রাখার ক্ষেত্রে সকলে একমত হতে পারছেন না। আর্থিক সমস্যাও রয়েছে। পরিচারিকা থেকে গাড়িচালকদের পুলিশি ভেরিফিকেশনের কথা উঠলেই তাঁরা কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। ফলে বাস্তব সমস্যা রয়েই গিয়েছে। তবে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করতে হলে পুলিশের পরামর্শ মানতেই হবে।
|
পুলিশি সতর্কবার্তা |
• বাসিন্দাদের অ্যাসোসিয়েশনগুলির নিয়মিত বৈঠক ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা।
• নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ ও তাদের কাজে নিয়মিত নজরদারি।
• বহিরাগত সম্পর্কে তথ্য লিপিবদ্ধ করা।
• বাড়ির দরজায় পিন-হোল ক্যামেরা।
•
বারান্দার দরজা বন্ধ করা ও আশপাশে গাছের ডাল ছেঁটে ফেলা।
• ব্লক বা পাড়ার প্রবেশপথে সিসিটিভির ব্যবস্থা করা।
• পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর মোবাইলে স্পিড ডায়ালে রাখা।
• ব্লক বা পাড়ায় পরিচারক, গাড়িচালক-সহ বিভিন্ন কর্মীদের পরিচয়পত্রের পুলিশি যাচাই করা। |
|