আট দিন নিখোঁজ থাকার পরে হাওড়ার ব্যাঁটরার যুবক রাহুল হাজরার (২০) মৃতদেহ মিললেও মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল না। এটি খুন না নিছকই আত্মহত্যা, তা নিয়ে এখনই কিছু বলতে রাজি নয় পুলিশ। কলকাতার উত্তর বন্দর থানার পুলিশ রবিবার বিকেলে বাগবাজার ঘাটের কাছে ওই যুবকের দেহ উদ্ধার করে। সোমবার যুবকের পরিজনেরা কলকাতার কাঁটাপুকুর মর্গে গিয়ে মৃতদেহটি শনাক্ত করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একটি ফোন আসার পরেই রাহুল ও তাঁর এক বন্ধু অরিজিৎ ঘোষ মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে বেশি রাতে রাহুলের মোটরবাইকটি বালি ব্রিজের উপরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনার দিনই যুবকের পরিজনেরা ব্যাঁটরা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরের দিন বালি থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন ওই যুবকের বাবা। তিনি অভিযোগ করেন, এই ঘটনার পিছনে তাঁর ছেলের বন্ধু অরিজিৎ ও এক বান্ধবীর হাত থাকতে পারে। সেই মতো তদন্ত শুরু করে পুলিশ। রাহুলের মোবাইলের কল লিস্ট পরীক্ষার পাশাপাশি তাঁর ওই বন্ধু ও বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ওই তরুণী রাহুল ও অরিজিৎ দু’জনেরই পরিচিত। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ১৬ ফেব্রুয়ারি রাহুলের সঙ্গে বেরোলেও মাঝপথেই তিনি নেমে গিয়েছিলেন বলে পুলিশি জেরায় দাবি করেছেন অরিজিৎ। পাশাপাশি জেরায় রাহুলের ওই বান্ধবী জানান, বেশ কয়েক দিন ধরেই তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন রাহুল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তিনি ফোনে জানান, এই প্রস্তাব তাঁর পক্ষে মানা সম্ভব নয়। এর পরে রাত ৮টা ১০ নাগাদ তাঁকে শেষ ফোন করে রাহুল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কাউকে বিরক্ত করবেন না। তবে তিনি আত্মহত্যাও করবেন না। কিন্তু বাড়িও ফিরে আসবেন না। বাইকটি বালি ব্রিজের উপরে রেখে চলে যাচ্ছেন। পুলিশ জানায়, ওই তরুণী দাবি করেছেন, কথা শেষ হওয়ার পরেই মোবাইলটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো আওয়াজ হয় এবং তার পর থেকেই ফোনটি সুইচ অফ হয়ে যায়। ওই বান্ধবীর থেকেই রাহুলের পরিজনেরা জানতে পেরেছিলেন মোটরবাইকটি বালিতে রয়েছে।
রাহুলের কললিস্ট পরীক্ষা করে পুলিশ জেনেছে ওই রাতে ৮টা ১০-এর আগেও বহু বার রাহুলের সঙ্গে তাঁর বান্ধবীর কথা হয়। এ দিন ওই তরুণী বলেন, “রাহুলের সঙ্গে স্কুল জীবন থেকেই বন্ধুত্ব। ছ’মাস ধরে ও আমাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিল। মানতে না চাইলে রাহুল রাগারাগি করত।”
পুলিশ তদন্তে জেনেছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার রেস্তোরাঁয় অরিজিৎ, রাহুল এবং ওই তরুণী খাওয়া দাওয়া করে। সেখানেও রাহুল প্রেমের প্রস্তাব দেয় ওই তরুণীকে। পরের দিন সন্ধ্যায় ওই তরুণী ফোন করে জানায়, রাহুলের প্রস্তাব তার মানা সম্ভব নয়। এর পরেই রাহুল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
এ দিন মৃত যুবকের বাবা তপন হাজরা বলেন, “দু’জনের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল জানি না। তবে ও কী ভাবে মারা গেল, তা বিস্তারিত ভাবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।” হাওড়া পুলিশের এক কর্তা জানান, ইতিমধ্যেই বালি থানায় একটি অপহরণের মামলা রুজু করা হয়েছে। পাশাপাশি, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা যোগ করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।” |