দুপুর ২টো ৪০। লালবাজারের কন্ট্রোলরুমে হেল্পলাইনের ফোন ধরলেন এক কনস্টেবল। ওপারে এক কলেজছাত্রী। জানাচ্ছেন, ডানলপমুখী চলন্ত মিনিবাসে সহযাত্রী যুবক শ্লীলতাহানি করছে তাঁর।
পুলিশের কাছে ওই তরুণীর অভিযোগ, বহুক্ষণ ধরেই তাঁকে উত্ত্যক্ত করছিল সহযাত্রী যুবক। তবু বাসের অন্য যাত্রীরা কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। শেষমেশ তিনি নিজেই ফোন করেন কলকাতা পুলিশের হেল্পলাইনে। কোথায়, কোন রুটের বাসে আছেন, তা-ও জানিয়ে দেন। তবে তরুণীর দাবি, কন্ট্রোলরুমে ফোন করার মিনিট পনেরো-কুড়ি পরে বাসটি সিঁথি মোড়ের কাছে পৌঁছলে তিনি দেখেন ওই যুবক নেমে যাচ্ছে। পিছন পিছন নেমে গিয়ে চেঁচামেচি শুরু করেন তিনি। তাঁর চিৎকারে আশপাশে জড়ো হওয়া লোকজন এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মীরা ঘিরে হাতেনাতে ধরে ওই যুবককে। পুলিশের দাবি, হেল্পলাইনে ওই তরুণীর ফোন পেয়ে কন্ট্রোলরুমের পুলিশ ওই এলাকার বিভিন্ন থানায় বিষয়টি জানায়। সে কারণেই সিঁথির মোড়ে পুলিশ ছিল। এবং তারাই তৎপরতার সঙ্গে ওই যুবককে ধরে ফেলে। শ্লীলতাহানির অভিযোগে কাশীপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে ওই যুবককে।
পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম লালচাঁদ অগ্রবাল (৪৩)। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ওই যুবক পেশায় ব্যবসায়ী। বছরখানেক আগে বাসের মধ্যে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল এক যুবককে। গত মাস দুয়েকের মধ্যে পোস্তা ও বড়বাজার এলাকায় একই ভাবে চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেফতার করে টহলদার পুলিশ। তার পরে এ দিনের ঘটনা।
পুলিশ জানায়, ওই ছাত্রী লিলুয়ার একটি কলেজে বি-টেক পড়েন। বরাহনগরের বাসিন্দা ওই ছাত্রী পুলিশকে জানান, এ দিন দুপুরে হেদুয়া থেকে বরাহনগরগামী একটি মিনিবাসে ওঠেন তিনি। শ্যামবাজার মোড় থেকে ওই বাসে ওঠে লালচাঁদ। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, বাগবাজার পেরোনোর পর থেকেই ওই যুবক তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। তাঁর শ্লীলতাহানিও করে সে। তিনি প্রতিবাদ করলেও বাসের অন্য যাত্রীরা সাহায্যে এগিয়ে আসেননি বলে ওই ছাত্রীর দাবি। উপায় না দেখে তিনি নিজেই ফোন করেন হেল্পলাইনে।
লালবাজার সূত্রের খবর, বিপন্ন মহিলাদের সাহায্য করতে কলকাতা পুলিশের যে হেল্পলাইন নম্বর (১০৯০), তাতে ফোন করেন ওই তরুণী। ফোন ধরেন কনস্টেবল সঞ্জয় লোহার। সহযাত্রী যুবকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করে কোন রুটের বাসে তিনি যাচ্ছেন, তা-ও জানান তিনি। পুলিশের দাবি, ওই ছাত্রীর ফোন পেয়ে কন্ট্রোলরুমের অফিসারেরা টালা, চিৎপুর, কাশীপুর, সিঁথি থানায় ফোন করে বাসটিকে থামাতে বলেন। ওয়্যারলেসে খবর পাঠানো হয়ে রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, ট্রাফিক সার্জেন্টদেরও। বিটি রোড জুড়ে খোঁজ শুরু হয় ওই মিনিবাসটির। এর পরেই সিঁথির মোড় থেকে ধরা পড়ে ওই যুবক।
পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জেরায় লালচাঁদ জানিয়েছে, ওই তরুণীকে সে উত্ত্যক্ত করেনি। তাঁর শ্লীলতাহানিও করেনি। পুলিশ অবশ্য জানায়, ওই ছাত্রীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। |