মাদক সেবনেই মৃত্যু পিজি-র ইন্টার্নের
তিরিক্ত মাদক সেবনই যে এসএসকেএম হাসপাতালের এমবিবিএস হস্টেলের ইন্টার্ন সপ্তর্ষি দাসের মৃত্যুর কারণ, সে সম্পর্কে নিশ্চিত তদন্তকারীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ওই জুনিয়র ডাক্তারের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাননি চিকিৎসকেরা। তবে ঠিক কী ধরনের মাদক সেবনের ফলে ওই জুনিয়র ডাক্তারের মৃত্যু হয়েছে, তা জানার জন্য ভিসেরা পরীক্ষা করানো হবে। পাশাপাশি, হস্টেলের যে দু’টি ঘর থেকে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, মাদক-সহ রাংতা উদ্ধার হয়েছে, সেই দু’টি ঘরকে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য সিল করে দিয়েছে পুলিশ। আজ, সোমবার ফরেন্সিক দলের ওই ঘর দু’টি থেকে নমুনা সংগ্রহ করার কথা।
ওই ঘটনায় হস্টেল সুপারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শনিবারের ঘটনার পর থেকে ওই হস্টেল সুপার কোনও যোগাযোগ করেননি। তাঁর ফোনও বন্ধ। এর পরে তাঁকে দায়িত্বে না রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানিয়েছেন, এ দিন রবিবার হওয়ায় সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি। সোমবার হস্টেল কমিটির বৈঠকে হস্টেল সুপারকে ডাকা হয়েছে। সেখানে তাঁর কাছে জবাবদিহি চাওয়া হবে। পাশাপাশি তাঁকে পদ থেকে সরানোর কথাও লিখিতভাবে জানানো হবে।
এ দিকে, রবিবারও জুনিয়র ডাক্তার মহম্মদ শাহবাজ সিদ্দিকির সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তদন্তকারীরা। অচৈতন্য অবস্থায় তিনি পিজি-তেই চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার যে ঘর থেকে জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্ধার করা হয়, সেই ঘরটি পুষ্পেন্দু দাশগুপ্ত নামে অন্য এক ইন্টার্নের। তিনি দিন তিনেক আগে হস্টেলের ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, পুষ্পেন্দুর পাঁচ তলার ৪২৬ নম্বর ঘরের দরজার তালা ভেঙে ওই ঘরে ঢুকেছিলেন দুই জুনিয়র ডাক্তার। বৃহস্পতিবার রাতেও তাঁরা ওই ঘরে ছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি, পুষ্পেন্দু তাঁদের জানিয়েছেন, ঘটনার দু’দিন আগে এক বন্ধু মারফত তিনি জানতে পারেন, সপ্তর্ষি এবং শাহবাজ তাঁর ঘরের ভিতরে ঢুকে তা ব্যবহার করছেন। তবে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানাননি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাত পর্যন্ত ওই ইন্টার্নের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
শনি ও রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে গোয়েন্দাদের দাবি, শুধু পুষ্পেন্দুর ঘরে নয়, সপ্তর্ষিরা দিনের পর দিন নিজেদের ঘরেও মাদক নিতেন। তবে সেই সময়ে সেখানে আর কারা উপস্থিত থাকতেন, তা এখনও জানা যায়নি। শুক্রবার রাতেই তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ওই দু’টি ঘর থেকে প্রচুর ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ, মাদক ও তরল উদ্ধার করেছে। এক তদন্তকারী অফিসার রবিবার জানান, অচৈতন্য শাহবাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হলেই পুরো ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হবে। হস্টেল সুপার কী বলেন সেটার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দিনের পর দিন যে এমন চলছিল, সে ব্যাপারে তিনি নিজে কতটা ওয়াকিবহাল ছিলেন, বা ওয়াকিবহাল থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়েছিলেন কি না, তা জানাও জরুরি বলে মনে করছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, ওই হস্টেল সুপার নিজে বেশির ভাগ সময়েই হস্টেলে থাকতেন না। না থাকার জন্য তাঁর উপরে কোনও রকম চাপ সৃষ্টি করা হত কি না তা-ও দেখা হবে।
কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মা বলেন, “ময়না-তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। যদি দেখা যায়, সেখানে অস্বাভাবিক কিছু রয়েছে, তা হলে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা শুরু হবে।”
কিন্তু এসএসকেএমে মাদক সেবনে ইন্টার্নের মৃত্যুর পরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হস্টেলে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে সরকার কি কোনও পদক্ষেপ করবে? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর জবাব, “বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কর্তৃপক্ষদের এক্তিয়ারভুক্ত। সরকার মাদক বিরোধী প্রচার করতে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.