তিনটি আসন কমছে বামের, কংগ্রেস দু’য়েই
ক মাসে আরও এগোল তৃণমূল!
জানুয়ারির শেষে এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের করা প্রথম জনমত সমীক্ষা বলেছিল, তখনই লোকসভা ভোট হলে এ রাজ্যের শাসক দল ২৬টি আসন পেতে পারে। রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক ধারা মেনে তৃণমূল এক নম্বরে থাকলেও দলের অন্দরে তৃণমূল নেতারা যতগুলি আসন পাওয়ার আশা করছেন, তার থেকে অনেকটাই কম ছিল সেই সমীক্ষার হিসেব। কিন্তু শনিবার প্রকাশিত দ্বিতীয় দফার সমীক্ষা দূরত্বটা বেশ খানিকটা কমিয়ে দিল। তাতে দেখা যাচ্ছে এখনই ভোট হলে তৃণমূল পেতে পারে ২৯টি আসন। বাড়তি তিনটি আসনই আসবে বামেদের ঘর ভেঙে।
এটা ঠিক যে জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস সব সময় মেলে না। তবে এই স্বীকারোক্তির পাশাপাশি এটাও নথিভুক্ত করে রাখা যাক যে, ২০১১-র বিধানসভা ভোটের বুথ-ফেরত সমীক্ষায় এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের পূর্বাভাস ছিল, কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পাবে ২২৫টি আসন। বাস্তবে তারা পেয়েছিল ২২৭টি। তা ছাড়া, এই মুহূর্তে ভোটদাতাদের মনোভাব কী, তার আঁচ পেতে জনমত সমীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা মোটামুটি ভাবে স্বীকৃত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমীক্ষার হিসেব বদলে যেতে পারে। কারণ, এখনও ভোটের দিন ঘোষণা হয়নি। জানা যায়নি কে কোন কেন্দ্রে লড়বেন। তার চেয়েও বড় কথা হল, কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হবে কি না, তা নিয়ে শেষ কথা বলার সময়ও এখনও আসেনি। এই সমীক্ষা করা হয়েছে জোট হবে না ধরে নিয়েই। রাজ্যের ১০টি লোকসভা কেন্দ্রের ২৩০৪ জন ভোটদাতা অংশ নিয়েছেন সমীক্ষায়।
এবিপি আনন্দের প্রথম সমীক্ষাটি করা হয়েছিল ২০১৩-র ২৮ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারির মধ্যে। দ্বিতীয় সমীক্ষা করা হয়েছে ৪ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। দুই সমীক্ষার মাঝের সময়টুকুর মধ্যে তিন তিনটে ব্রিগেড সমাবেশ দেখেছে রাজ্য। তৃণমূল, বিজেপি এবং বাম তিন পক্ষই সেই সমাবেশ থেকে কার্যত লোকসভার যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। বস্তুত, লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে রাজনীতির জল কোন দিকে গড়াতে পারে, তার একটা আন্দাজও পেয়ে গিয়েছেন রাজ্যবাসী। ফলে তার প্রভাব সমীক্ষায় পড়েছে, এমনটা মনে করা অসঙ্গত নয়।
৩০ জানুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশ থেকে কংগ্রেস-বিজেপি, দুই দলকেই আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী বা রাহুল গাঁধী কারও নাম করেননি। অনেকের মতে, এই কৌশলে আসলে জোটের পথই খোলা রেখেছেন মমতা। সেটা ভোটের আগেও হতে পারে, কিংবা পরে। তৃণমূল নেতারা অবশ্য এখন প্রকাশ্যে একলা চলার কথাই বলছেন। তাঁদের দাবি, একলা চলেই এগোবে তৃণমূল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের কথায়, “পঞ্চায়েত ভোট বা পুরভোটে ফলাফলের যা গতিপ্রকৃতি ছিল তা বজায় রেখেই রাজ্যে তৃণমূল আরও ভাল ফল করবে।” বস্তুত, নিজস্ব হিসেবে রাজ্যে ৩৫টি আসন পাওয়ার আশা করছেন তৃণমূল নেতারা।
তৃণমূলের সমাবেশের ঠিক পরেই ব্রিগেডে এসে মমতাকে আক্রমণ করার বদলে কার্যত জোটবার্তাই দিয়ে গিয়েছেন মোদী। বলেছেন, রাজ্যে তৃণমূল আর দেশে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে পশ্চিমবঙ্গবাসীরই লাভ। সে ক্ষেত্রে তাঁদের দু’হাতে থাকবে দু’টো লাড্ডু। যদিও মোদীর আশা পূরণ করবেন, এমন কোনও ইঙ্গিত রাজ্যবাসী অন্তত সমীক্ষায় দেননি। মোদীর সভার পরে রাজ্যে বিজেপি-র ভোট এক শতাংশ বেড়েছে বটে। মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে দেখতেও চেয়েছেন এ রাজ্যে সমীক্ষায় যোগ দেওয়া মানুষদের ৪০ শতাংশ। বিজেপি-র আসনের ভাঁড়ার কিন্তু সেই শূন্যই। যদিও দলীয় নেতা শমীক ভট্টাচার্যের মতে, সমীক্ষায় উঠে আসা এই দু’টি হিসেব খাপ খায় না। তাঁর কথায়, “এত বিপুল মানুষ মোদীকে চাইবেন, অথচ বিজেপি একটিও আসন পাবে না, এটা হতে পারে না।”
মোদীর সভার পরে ব্রিগেড ভরিয়েছে বামেরা। সমাবেশ দেখে উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, এত জনসমাগম দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনও দেখেননি। কিন্তু ভোটের বাক্সে সেই ভিড়ের প্রতিফলনের কোনও ইঙ্গিত সমীক্ষা থেকে মিলছে না। আগের সমীক্ষা জানিয়েছিল বামেরা রাজ্যে ৩৪ শতাংশ ভোট ও ১৩টি আসন পেতে পারে। দ্বিতীয় সমীক্ষায় দু’টিই কমে হয়েছে ৩২ শতাংশ এবং ১০টি। বামেদের কমা ২ শতাংশ ভোট যোগ হয়েছে তৃণমূলের খাতায়। তাদের ভোট শতাংশের পরিমাণ ৪১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩।
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা শ্যামল চক্রবর্তী অবশ্য এমন সমীক্ষাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর মতে, “এই সরকারের আমলে মানুষ বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত। প্রতিদিন তাঁদের ক্ষোভ বাড়ছে। এই অবস্থায় তৃণমূলের লাভবান হওয়ার বাস্তবসম্মত কোনও কারণ আছে বলে মনে করি না।” যদিও বাম-বিরোধী নেতারা মনে করাচ্ছেন, অতীতে মমতা নিজে একাধিক বার এবং বিধানসভা ভোটের আগে বামেরা জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক টেনেও ভোটের বাক্সে সাফল্য পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, যে ভাবে রাজ্যসভার ভোটে বামেদের ঘর ভেঙেছে তৃণমূল, বিদ্রোহী হয়েছেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বা লক্ষ্মণ শেঠের মতো নেতারা, তাতে সংগঠন এবং ভোটব্যাঙ্কের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বিস্তর।
রাজ্যসভা ভোটে কংগ্রেসেরও ঘর ভেঙেছিল তৃণমূল। কিন্তু তার পরেই বড় মাপের রদবদল ঘটেছে প্রদেশ কংগ্রেস সংগঠনে। মুর্শিদাবাদের লড়াকু নেতা, মমতা-বিরোধী বলে পরিচিত অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ সভাপতি করে এনেছেন রাহুল গাঁধী। আর তার পরেই খানিকটা হলেও চনমনে হয়ে উঠেছেন কংগ্রেস কর্মীরা। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের খাতায় নামও লিখিয়েছেন অনেকে। অধীর যাকে বলেছেন ‘রিভার্স স্যুইং’।
তবে এই পরিবর্তন যখন হয়েছে (১০ ফেব্রুয়ারি), জনমত সমীক্ষা তখন শেষ পর্বে। ফলে তার কোনও প্রভাব রাজ্য রাজনীতিতে পড়েছে কি না, সেটা এখনই বলা যাবে না। সেই সম্ভাবনাটুকু বাদ দিলে কংগ্রেস দাঁড়িয়ে আছে একই জায়গায়। জানুয়ারির সমীক্ষায় কংগ্রেসের ভোট শতাংশ ছিল ৬, আসন ২টি। দ্বিতীয় সমীক্ষাতেও তার কোনও পরিবর্তন হয়নি। কংগ্রেস নেতা অবশ্য আশা করছেন, যত সময় যাবে ততই অধীরকে নেতা করার সুফল পাবেন তাঁরা। বাড়বে ভোটের পরিমাণও। আপাতত অবশ্য দলীয় বিধায়ক তথা প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়ার মত,“এটা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে করা একটা অবাস্তব সমীক্ষা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.