|
|
|
|
ঘরছাড়া সিপিএম কর্মীর চোখে অ্যাসিড ময়নায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
ঘরছাড়া এক সিপিএম কর্মীকে মারধর করে দু’চোখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটল পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায়। সুভাষ খুটিয়া নামে ওই সিপিএম কর্মী আশঙ্কাজনক অবস্থায় তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর পরিজনেরা পুলিশে লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষের উপর হামলার ঘটনায় মূলত যে তিন জনের নামে অভিযোগ উঠেছে, তারা এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবে পরিচিত। গোপাল সাউ বলে একজনের নাম করছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও। তাঁর বক্তব্য, “গোপাল সাউ-সহ যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। এরা দুষ্কৃতী। দলের কেউ নয়।” স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও একই দাবি করেছেন। সুভাষের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও হাসপাতাল থেকে নিয়মমাফিক ঘটনার কথা পুলিশে জানানো হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।” তবে শনিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। |
|
আক্রান্ত সুভাষ খুটিয়া।—নিজস্ব চিত্র |
ময়না থানার বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের বরুণা গ্রামে বাড়ি সুভাষদের। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় স্থানীয় সিপিএম প্রার্থীর হয়ে প্রচারে দেখা গিয়েছিল বছর ছত্রিশের এই যুবককে। তারপর তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর হয়। এলাকা ছাড়েন সুভাষ। সেই থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে বাকচা পঞ্চায়েতেরই গোবরাদন গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন তিনি। সুভাষের দুই দাদা কেশব এবং শ্রীমন্ত অবশ্য বরুণা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেল ৪টে নাগাদ বাকচার তিওয়ারি মোড় বাজারে এসেছিলেন সুভাষ। তখনই কয়েকজন মোটর বাইকে এসে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তারপর তাঁকে মারধর করে দু’চোখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া হয়। রাতে বরুণা গ্রামের বাড়ির কাছে সুভাষকে ফেলে দিয়ে যায় হামলাকারীরা। সুভাষের দাদা কেশব বলেন, “কারা ভাইকে নিয়ে গিয়ে চোখে অ্যাসিড দিয়েছে জানি না। রাত ১০টা নাগাদ জানতে পারি ও জখম অবস্থায় বাড়ির কাছে পড়ে আছে। ওকে নিয়ে গিয়ে তমলুক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।”
সিপিএমের ময়না জোনাল কমিটির সম্পাদক সত্যেশ্বর মণ্ডলের অভিযোগ, “শুক্রবার রাতে জানতে পারি, সুভাষকে তৃণমূলের ছেলেরা তুলে নিয়ে গিয়েছে। ফোনে থানায় সে কথা জানাই। তবে পুলিশ তখন এলাকায় গিয়ে সুভাষকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিল। পরে জানতে পারি ওর চোখে অ্যাসিড দেওয়া হয়েছে।” তৃণমূলের ময়না ব্লক কার্যকরী সভাপতি সুব্রত মালাকারের বক্তব্য, “শুনেছি শুক্রবার বরুণা গ্রামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলেন সুভাষ। তারপর একটা গোলমাল হয়।”
বাম আমল থেকেই সুভাষদের পরিবার সিপিএম সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তবে ২০০৬ সালে সুভাষের মেজদা ভোলানাথ তৃণমূলে যোগ দেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে বাকচা পঞ্চায়েতে তৃণমূলের উপপ্রধানও হয়েছিলেন ভোলানাথ। তবে ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় তাঁকে সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মণ শেঠের প্রচারে দেখা যায়। এর পরপরই খুন হয়ে যান ভোলানাথ। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে তাঁর দেহ মেলে। ভোলানাথ খুনেও তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন গোপাল সাউ। পরে তিনি জামিন পেয়ে যান। শনিবার তমলুক জেলা হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় শয্যায় শুয়ে আছেন সুভাষ। দু’চোখেই ক্ষত। চোখের চারপাশ অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। |
|
|
|
|
|