নিকাশি সাফাইয়ের কাজ নিয়ে অভিযোগ তোলায় পুরসভার এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়রকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে রাজ্য পুর দতরের সচিব এবং মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ওই আধিকারিক ঠিক কাজ করেননি। না বলে ছুটি নিয়েছেন। তাঁর মানসিকতা, ব্যবহারের জন্য কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করেই মেয়র পারিষদ-সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অন্যায় ভাবে অভিযোগ জানাচ্ছেন। তাই তাঁকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে আমরা মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়রিং ডিরেক্টরেটেও চিঠি পাঠিয়েছি।”
বর্তমানে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি সই করার পর ওই সংক্রান্ত বিল পাশ হয়ে যায় বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “ওই বাস্তুকার কয়েকটি বিষয়ে তাঁকে জানিয়েছেন। তিনি বিস্তারিত খোঁজ নেবেন।” ঘটনার সূত্রপাত শহুরে রোজগার যোজনায় নিকাশি সাফাই নিয়ে। গত অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে ওই কাজের জন্য ১০ লক্ষ টাকা বিল হলে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র। ১১ ডিসেম্বর তা নিয়ে বৈঠক ডাকা হলে সেখানে তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে টাকা খরচে অনিয়ম হয়েছে। যে খরচ দেখানো হচ্ছে সেই অনুসারে কাজ হয়নি। বৈঠকে সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ এবং কাউন্সিলরদের একাংশ ওই বাস্তুকারের বিরোধিতা করেন। এক বরো অফিসার পুর কমিশনারের সামনেই তাঁকে অসম্মান করেন বলে অভিযোগ। এর পরেই তিনি বিষয়টি মেয়র, পুরসভার বিরোধী দলনেতা, পুরসভার তৃণমূলের পরিষদীয় দলনেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং পুর কমিশনারকে জানান। তাতে তিনি সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এর পরে মেয়র তাঁকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট-ও দিতে বলেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য ১৭ ডিসেম্বর থেকে তিনি ছুটি নেন। তার মধ্যেই চিঠি পাঠিয়ে ১৯ ডিসেম্বর জানিয়ে দেন ওই কাজ করানোর বিষয়টি তাঁকে সময় মতো জানানো হয়নি। কবে ওয়ার্ক অর্ডার পাশ হয়েছে, কবে থেকে কাজ শুরু হয়েছে তিনি জানেন না। সে কারণে তাঁর পক্ষে কাজ চলার সময় নজরদারিও সম্ভব হয়নি।
গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ছুটিতে ছিলেন। পরে কাজে যোগ দিয়ে ফের ১৮ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি নেন। এর পর কাজে যোগ দেন। পুরসভাই একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই কাজের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১০ জন করে লোক নিয়োগ করে কাজ করানো হয়। ৪৭ টি ওয়ার্ডে মধ্যে ৮ টি বাদে বাকি ওয়ার্ডগুলিতে লোক নেওয়া হয়। সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ কাজল চন্দ বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের লোক নিয়োগ করে কাজ করতে নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ। কাজলবাবু বলেন, “পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে ওই প্রকল্পে প্রায় ১ কোটি টাকা খরচের বিষয়টি অনুমোদন হয়। ওই বাস্তুকার নিজেই কাজের নোটশিটে-র একাংশে সই করেছেন।” অথচ বিলে তিনি সই করতে চাইছেন না বলে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।
পুরসভার পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক বলেন, “বিভিন্ন কাজের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই আধিকারিক ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা চেয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।” তৃণমূল কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বলেন, “ওই বাস্তুকার কোনও অন্যায় করেছেন বলে মনে করি না। কাজ শুরু সময় তাঁকে জানানো না হলে তিনি কেন বিলে সই করবেন? পুর কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা বিস্তারিত জানতে চাইব।” পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া জানিয়েছেন, ওই এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়রের বিষয় নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছেন। শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে বলে তিনি আশাবাদী। |