উচ্ছেদের উত্তরকন্যাতেই আশা দেখছেন আমিনা
স্বামীর মৃত্যুর পরে জাতীয় সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘরে পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন আমিনা বেওয়া। মাস তিনেক আগে সেখান থেকে উচ্ছেদ হন আমিনা। সরকারি আধিকারিকদের থেকে শুনেছিলেন, ঝুপড়ির পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’ তৈরি হয়েছে, সেখানে ঢোকার রাস্তা তৈরির জন্য জমি ‘দখল’ করে থাকা ২২টি পরিবারকে উচ্ছেদ হতে হবে। এখন সেই উত্তরকন্যা-ই হাসি ফুটিয়েছে চল্লিশ ছুঁইছুই আমিনার মুখে।
উত্তরকন্যার সামনেই নতুন ঠেলা ভ্যানে চায়ের দোকান করেছেন আমিনা। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের পরিচালন কমিটির বৈঠক ছিল উত্তরকন্যায়। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রী-সদস্যদের জন্য উত্তরকন্যার সভাঘরে চা পৌঁছেছে আমিনার দোকান থেকেই। একসঙ্গে ৫০ কাপ চায়ের বরাত পেয়ে স্বভাবতই খুশি স্বামীহারা আমিনা। তাঁর কথায়, “মন্ত্রীর জন্য আলাদা করে চিনি ছাড়া চায়ের অর্ডার ছিল। শুনলাম প্রতিদিনই বৈঠক হবে। বৈঠক না হলেও, যাঁরা অফিসে আসেন, তাঁরাও চা খান। দামি বিস্কুট, চানাচুর, সিগারেটও রেখেছি। রোজগারও ভাল হচ্ছে।”
যে মন্ত্রীর কাপে আমিনার তৈরি চা ঢালা হয়েছে, তিনি নিগমের চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ঘটনাটি শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “চা টা বেশ ভালই হয়েছিল। তবে আমি আগে এটা জানতাম না। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কাউকে বুলডোজার চালিয়ে যেন উচ্ছেদ করা না হয়। আলাপ আলোচনা আর পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করেই সকলকে সরানো হয়েছিল। ওই পরিবারের সকলের কর্মসংস্থানের বিষয়েও পদক্ষেপ করা হবে।”
নিজের চায়ের দোকানে কাজে মগ্ন আমিনা। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
তিন বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে কামরাঙ্গাগুড়ি এলাকায় বাড়ির কাছেই একটি চায়ের দোকান করতেন আমিনা ওরফে মামনি। উচ্ছেদের সময় বাড়ি এবং দোকান দুই-ই গিয়েছে। গত সপ্তাহেই লাগোয়া সাহুডাঙিতে জমির পাট্টা পেয়েছেন। সেখানে বাড়িও তৈরি করেছেন। প্রায় ১৮ হাজার টাকা ধার করে ঠেলায় চায়ের দোকানটি বানিয়েছেন। উত্তরকন্যা ভবনের রঙের সঙ্গেই সামঞ্জস্য রেখে ঠেলায় নীল রং করিয়েছেন। গত সপ্তাহ থেকেই নতুন দোকান নিয়ে নিয়মিত উত্তরকন্যার সামনে বসছেন আমিনা।
সন্ধ্যের পরে ভ্যানের দোকানটিকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে যান। সকালে উঠে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে চলে আসেন দোকানে। ছোট ছেলেটি অবশ্য দিনভরই সঙ্গে থাকে। বছরখানেক আগে এলাকারই একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চার বছরের হাসানুরকে ভর্তি করেছিলেন। উচ্ছেদ-সহ নানা টানাপোড়েনে ভর্তির ফি জোগাড় করতে না পারায়, গত তিন মাস ধরেই ছেলেকে আর স্কুলে পাঠাননি বলে তিনি জানান।
এ দিন দুপুরে, ঠেলার চায়ের দোকানে রাখা দু’টি কৌটায় দু’ধরনের চা পাতা দেখালেন আমিনা। একটিতে সাধারণ সিটিসি চা অন্যটিতে দার্জিলিং পাতা মেশানো চা। বির্বণ হতে শুরু করা হলুদ রঙের সিল্কের শাড়ি পরা আমিনা জানালেন, “আগে দোকানে বেশি কাপ চা বিক্রি হত না। এখন প্রতিদিনই ত্রিশ থেকে চল্লিশ কাপ চা বিক্রি হয়। আজকের মতো সভা থাকলে তো কথাই নেই। ভিআইপি চায়ের দামও বেশি।”
খদ্দের সামলানোর সঙ্গে দোকানের পাশে খেলতে থাকা ছোট ছেলেকেও সামলাতে হয়। বললেন, “ছোট ছেলের স্কুলের ফি দিতে পারিনি। শুনলাম কয়েকদিন পর থেকে উত্তরকন্যায় প্রতিদিন আরও লোকজন আসবে। দেখা যাক, আশায় আছি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.