সমতল-পাহাড়ের যোগাযোগ আরও বাড়াতে নতুন ১৩টি বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম। শীঘ্রই জহরলাল নেহরু নগরায়ণ মিশন প্রকল্পে ১৪০টি নতুন বাস পেতে চলেছে নিগম। রাজ্য সরকারের বরাদ্দেও মিলবে ৪০টি বাস। নতুন পাওয়া বাসগুলির মধ্যেই কয়েকটি বাসকে পাহাড়-সমতল পথে চালাবে নিগম। বর্তমানে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং-কার্শিয়াঙে নিগমের ১৫টি বাস চলাচল করে। এ বার জলপাইগুড়ি থেকেও দার্জিলিংগামী বাস চালানো হবে। নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, শীঘ্রই কোচবিহার, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট থেকেও দার্জিলিং যাতায়াত করবে। ইসলামপুর-দার্জিলিং রুটেও বাস চালানোর কথা ভাবছে নিগম।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় নিগমের পরিচালন কমিটির বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দার্জিলিং-কার্শিয়াঙে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে অবশ্য জলপাইগুড়ি ডিপো থেকেই দার্জিলিংগামী বাস ছাড়বে। তার পরে উত্তরবঙ্গের অন্য জেলা শহর এবং মহকুমা থেকেও দার্জিলিঙে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিগমের পরিচালন কমিটি। এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, মূলত দু’টি বিষয় জানানো হয়েছে। প্রথমত, বিভিন্ন জেলা শহর থেকে সরাসরি দার্জিলিং যাওয়ার বাস থাকলে, সেই এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতে সুবিধে হবে। দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙে পর্যটন প্রসারে জোর দিয়েছেন। বিভিন্ন শহর থেকে সরাসরি দার্জিলিং যাওয়ার বিলাসবহুল বাস চললে, এক বা দু’দিনের ছুটিতেও দার্জিলিং এলাকার বাসিন্দাদের গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে। এক আধিকারিকের কথায়, “অনেকেই গাড়ি ভাড়া করে দার্জিলিং যাওয়ার খরচ এড়াতে চান বলে পরিকল্পনা বাতিল করেন। বাসের ভাড়া কম হওয়ায় তাঁরাও সে সুযোগ পাবেন।”
দার্জিলিঙেও নিগমের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে নতুন ডিপো তৈরির সিদ্ধান্তে এ দিন সম্মতি দিয়েছে পরিচালন কমিটি। ইতিমধ্যেই জমির খোঁজে জিটিএ-এর সঙ্গেও নিগমের আধিকারিকদের আলোচনা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে নিগমের চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব উপস্থিত ছিলেন। গৌতমবাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গের সব এলাকা থেকেই যেন দার্জিলিঙে যাওয়ার সরাসরি বাস থাকে, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি থেকে শীঘ্র পাহাড়ের বাস চলবে। সমতল এবং পাহাড়ের যোগাযোগ এবং দার্জিলিঙের পর্যটন প্রসারের সুসংহত উদ্যোগের যে বার্তা মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, তারই ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
এ দিনের বৈঠকে বেহাল রাস্তার প্রসঙ্গও ওঠে। নতুন বাসগুলির বেশির ভাগ শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি-কোচবিহার এই তিন রুটে চালানোর কথা রয়েছে। বেশ কয়েকটি বাস রায়গঞ্জ-মালদহেও চলাচল করবে। ওই পথে জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়ক দুই বেহাল থাকায়, নতুন বাস চললে কয়েকদিন চলার পরেই সেগুলি বিকল হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে সংস্থার এক কর্তা জানান, রাজ্য সড়ক সংস্কারের কাজ কয়েকটি এলাকায় শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে পূর্ত সড়ক দফতর কাজ শুরু করতে টেন্ডার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা নিগমের চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “জাতীয় সড়কের হাল নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ জানিয়েছি। ৩১ ডি জাতীয় সড়কের জমি অধিগ্রহণের সমস্যাও মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক কেন্দ্রীয় সরকার এ বার কী উদ্যোগ নেয়।”
শুধু উত্তরবঙ্গের মধ্যেই নয়, সিকিমেও নতুন বাস চালাবে নিগম। কালিম্পং থেকে সিকিমের গ্যাংটক এবং দার্জিলিং থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত নতুন দু’টি রুটে বাস চালানোর অনুমতি পেয়েছে নিগম। সে রুটেও খুব শিগগিরি বাস চালানো শুরু হবে। যদিও, সেক্ষেত্রে নিগমের ছোট বাসগুলি চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে, নতুন রুটে বাস চালানো, শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে ডিপো সংস্কার, জলপাইগুড়িতে নতুন বাস স্ট্যান্ড তৈরির মতো যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের অনুকুলে নেওয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গেই নিগমের প্রশাসনের আভ্যন্তরীণ সংস্কারের পরিকল্পনাও করা হয়েছে। আগামী অর্থ বর্ষ থেকে নিগমের নতুন বদলি নীতি র্কাযকর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৮১ জন কর্মী-আধিকারিকের পদোন্নতি নিয়ে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। |