সমাজকর্মী অণ্ণা হজারে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা আক্রমণের কৌশল নিল সিপিএম। এ রাজ্যে সারদা-সহ দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে অণ্ণার অবস্থান কী, দলের কর্মীদের সেই প্রশ্ন নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সতর্ক করলেন, ব্রিগেড সমাবেশে ভিড় দেখেই রাতারাতি পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে বলে ধরে না নিতে। বামেদের পাশ থেকে যাঁরা সরেছেন, তাঁদের কাছে পৌঁছতে ব্রিগেড থেকে অর্জিত সাহসকে কাজে লাগাতে বলেছেন বুদ্ধবাবু।
উপলক্ষ, ‘চিত্তব্রত মজুমদার স্মারক বক্তৃতা’। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দলের কর্মীদের কর্তব্যের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়াই ছিল বৃহস্পতিবার সিপিএমের হাওড়া জেলা দফতরে ওই বক্তৃতার উদ্দেশ্য। সিপিএম সূত্রের খবর, জেলা ও জোনাল স্তরের কর্মীদের নিয়ে ওই রুদ্ধদ্বার বক্তৃতায় দলের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু বলেছেন, “অণ্ণা কি জানেন, যাঁর হাত ধরেছেন, তাঁর রাজ্যে কী চলছে?” সারদা-কাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর মন্তব্য, “চিট ফান্ডের জন্য, চিট ফান্ডের মাধ্যমে সরকার চলছে, এটা অণ্ণার জানা দরকার!” অণ্ণা কেন সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীকে দেবেন না, সেই প্রশ্নও তোলেন বুদ্ধ।
বস্তুত, একই হাতিয়ার ব্যবহার করে অণ্ণাকে বিদ্ধ করতে চেয়েছে কংগ্রেসও। দলের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের ট্যুইট, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের গায়ে চিট ফান্ডের কালো দাগ লেগে রয়েছে! নিরপেক্ষ তদন্তেও তাঁর আপত্তি। এর পরেও মমতার দলকে অণ্ণা সমর্থন করতে রাজি হওয়ায় মানুষ বিস্মিত!” কংগ্রেসের জাতীয় প্রচার কমিটির সদস্য মানস ভুঁইয়ার প্রশ্ন, “অণ্ণা হজারে কি গাঁধী মূর্তির পাদদেশে এসে সারদা-কাণ্ডের প্রতিবাদে অবস্থানে বসবেন? যে ঘটনায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, এখনও পর্যন্ত ৫৯ জন আত্মহত্যা করেছেন, সেই কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত করানোর জন্য তাঁর মমতা বহেনকে বোঝাবেন?”
অণ্ণা ছাড়াও বিজেপি-র সাম্প্রদায়িকতা এবং নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত মডেলের মোকাবিলায় এ দিন দলের কর্মীদের তথ্য হাতে নিয়ে প্রচারে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বুদ্ধবাবু। লোকসভা ভোটের কাজে এখন থেকেই নেমে পড়ার কথাও বলেছেন। ব্রিগেডে বিপুল বিড়ের সমাবেশের পরে বাম কর্মী-সমর্থকদের একাংশের আক্ষেপ ছিল, বড় মঞ্চ থাকলেও সেখান থেকে তেমন জোরালো বার্তা পাওয়া গেল না! বুদ্ধবাবু এ দিন বুঝিয়েছেন, ভয়-ভীতি, বাধা ডিঙিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের ময়দানে হাজির হওয়াই ব্রিগেডের বার্তা। বুদ্ধবাবুর বার্তা, পঞ্চায়েত বা পুরভোটের কায়দায় লোকসভা ভোট শাসক দলকে করতে দেওয়া যাবে না। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মানুষকে পাশে পাওয়ার যে চেষ্টা, তাতে গতি আনবে ব্রিগেডের সাফল্য।
তবে লোকসভা ভোটের আগে দলের কাছে অস্বস্তিকর লক্ষ্মণ শেঠ-পর্ব নিয়ে কর্মীদের সামনে মুখ খোলেননি বুদ্ধবাবু। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের আগের দিন লক্ষ্মণ-প্রশ্নে মতামত এড়াতে চেয়েছেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য। |