লক্ষ্মণ দলের সম্পদ, বলছেন কানু
ক্ষ্মণ-কাণ্ডে আলিমুদ্দিন যতই তৎপর হোক না কেন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের একটা বড় অংশ যে প্রাক্তন সাংসদের পক্ষেই আছেন, তা আরও স্পষ্ট হল বৃহস্পতিবার। এ দিন জেলা সম্পাদক তথা লক্ষ্মণ শিবিরের ঘনিষ্ট কানু সাহু তাঁকে ‘দলের সম্পদ’ বলে আখ্যা দিলেন। দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, দলবিরোধী কাজ-সহ একাধিক অভিযোগে লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চলাকালীন ওই মন্তব্য সেই ‘পাশে থাকারই’ প্রমাণ বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
একদা পশ্চিম মেদিনীপুরের ছোট আঙারিয়া মামলায় অভিযুক্ত গড়বেতার দুই সিপিএম নেতা তপন ঘোষ, সুকুর আলিকে একই ভাবে দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার ‘দলের সম্পদ’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। সে দিনের ঘটনার সঙ্গে বৃহস্পতিবারের তফাৎ অনেকটাই। কেননা, জেলা সম্পাদকের ওই মন্তব্যে বিস্তর রাজনৈতিক বিতর্ক হলেও অন্তত জেলা সিপিএমের কোনও স্পষ্ট আড়াআড়ি বিভাজন তখন সামনে আসেনি। পূর্ব মেদিনীপুরে লক্ষ্মণ

লক্ষ্মণ শেঠ।
—ফাইল চিত্র।
বিরোধী শিবিরের নেতা বলে পরিচিত ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান ওই মন্তব্যকে গুরুত্বই দিতে চাননি। তিনি বলেন, “লক্ষ্মণ শেঠকে নিয়ে কানুবাবু যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।”
বস্তুত, লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে দলের রাজ্য কমিটির তদন্ত নিয়ে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরাই কার্যত দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ তমলুকের নিমতৌড়িতে সিপিএমের জেলা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, দলীয় অফিসের প্রবেশ পথের বারন্দায় একটি চেয়ার নিয়ে বসে আছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান। পাশে দলের ক’য়েকজন সর্বক্ষণের কর্মী। অন্য দিকে, কার্যালয়ের ভিতরে নিচতলার একটি ঘরে চেয়ারে বসে জেলা সম্পাদক কানু সাহু। একই কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে গত মঙ্গলবারের হেনস্থা প্রসঙ্গে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রাখেন তাঁরা। তদন্ত কমিশন প্রসঙ্গে কানুবাবু বলেন, “লক্ষ্মণবাবুর উদ্যোগে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (আইকেয়ার) যখন হয়, তখন বিষয়টি তিনি জেলা সম্পাদকমণ্ডলী ও রাজ্য কমিটিকে জানিয়েছিলেন। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছে। এটা তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও কাজটা ভাল।” তাঁর কথায়, “ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আমার জানা নেই। রাজ্য কমিটি তদন্ত কমিশন গড়েছে। তাঁরা এসে জানালে জানতে পারব।”
অন্য দিকে, প্রশান্তবাবু বলেন, “রাজ্য কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী জেলায় তদন্ত কমিটি গড়ার জন্য আগামী ২৬ অথবা ২৭ ফেব্রুয়ারি দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডাকা হবে। এ বিষয়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য রবীন দেব ও দীপক সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দিন চুড়ান্ত করা হবে।” কিন্তু জেলা সম্পাদক কানু সাহু অবশ্য বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “মঙ্গলবারের ঘটনায় আগামী ২৭ ফেরুয়ারি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডাকা হয়েছে। আমি ওই বৈঠক ডেকেছি।” প্রসঙ্গত, বুধবারই তমলুকে জেলাশাসকের অফিসের সামনে সিটু’র নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের এক অবস্থান মঞ্চে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় সাহু বলেছিলেন, “লক্ষ্মণবাবু আগামী দিনেও আপনাদের পাশে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।”
সব মিলিয়ে লক্ষ্মণ-কাণ্ডে বেআব্রু হয়ে গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএম।
পরিস্থিতি দেখে প্রতিপক্ষকে বিঁধতে ছাড়ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিনই তমলুকের নিমতৌড়িতে তৃণমূলের এক সমাবেশে তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেন, “লক্ষ্মণবাবুর সঙ্গে বুদ্ধদেববাবুর লড়াই শুরু হয়েছে। লক্ষ্মণ শেঠের মত দুর্বৃত্তদের দলে নিয়েছিল সিপিএম। তাঁরা এখন রবীন দেব-সহ অন্য সিপিএম নেতাদের পেটাচ্ছে।” তাঁর কটাক্ষ, “এলাকার মানুষকে বলব আপানারা আরজি পার্টি গড়ুন, পুলিশকে বলব ক্যাম্প করুন। যাতে ওঁদের মারপিটে সাধারণ মানুষের মাথা না ফাটে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.