রুপোলি পর্দায় শেকল-ভাঙা প্রতিবাদী নায়কের দেখা মিলবে না রাজনীতির ময়দানে। রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার এবিপি আনন্দ চ্যানেলে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকারেই এ কথা স্পষ্ট করে দিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “আমার লিডার মমতাদি। তাঁকে টো-টো (হুবহু) ফলো করব। আমি বেড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার লোক নই।”
সংসদীয় রাজনীতিতে আনকোরা হলেও দলের পক্ষে স্পর্শকাতর কোনও বিষয়ে ‘তারকা’ মিঠুনের প্রতিক্রিয়া যে সংবাদ মাধ্যমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, সে সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেছেন তৃণমূলের একাংশ। এবং সে ক্ষেত্রে মিঠুন কী বলবেন বা বলবেন না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। মিঠুন এ দিন ঠিক এই ব্যাপারেই সরাসরি নিজের মত প্রকাশ করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, শিলাদিত্য চৌধুরী বা অনুব্রত মণ্ডলের মতো অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ নিয়ে কখনও তাঁর মতামত চাওয়া হলেও তিনি আগ বাড়িয়ে কোনও জঙ্গিপনার ধার ধারবেন না। “এ সব বিষয়ে আমি কখনওই আমার মতামত (স্ট্যান্ড) সামনে আনব না।” প্রতিশ্রুতি অভিনেতা-সাংসদের। কেন আনবেন না? |
বলিউডে সফল বাঙালি নায়ক তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে তিনি যে কার্যত প্রশ্নহীন আনুগত্যের পক্ষপাতী, তা বুঝিয়ে ওঁর মন্তব্য, “আমি শৃঙ্খলাবদ্ধ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। মানতে হলে ডিসিপ্লিন পুরোপুরি মানো।” তাঁর কথায়, “আমি পোর্টফোলিও মেনে চলায় বিশ্বাসী। নেত্রী নিজে না-বললে সামনে আসব না। মমতাদি আমায় দলের স্পোক্সপার্সন (মুখপাত্র) বানানোর আগে কখনওই টিএমসি নিয়ে কথা বলব না।” এমনকী, তৃণমূলের অভ্যন্তরে ‘নেত্রীসর্বস্ব’ কাঠামোর অভিযোগ নিয়েও যে তাঁর কোনও অস্বস্তি নেই, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন মিঠুন। “আমি জানি, বলা হয়, একটাই পোস্ট, বাকিরা ল্যাম্পপোস্ট। কিন্তু আমিও মনে করি, অধিক ব্রাহ্মণে গাজন নষ্ট। মমতাদি যদি একা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা হলে ক্ষতি কী?” পাল্টা প্রশ্ন তাঁর।
অতীতে বাম-ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের ছায়া অবশ্য মিঠুনকে এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এবং এ দিন এ প্রসঙ্গে যাবতীয় কটাক্ষ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, “আমি আসলে মানুষপন্থী ছিলাম, আছিও। সুভাষদা (চক্রবর্তী) আমার দাদা, আমি তাঁর লোক ছিলাম। জ্যোতি (বসু) আঙ্কলকে এখনও সম্মান করি, উনিও ভালবাসতেন। আমি ওঁর লোক ছিলাম। কোনও দলের সদস্য হইনি।” অতীতে প্রকাশ্য সাক্ষাৎকারে মিঠুন বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনায় জ্যোতি বসুই যে তাঁর পছন্দের। এ দিন রাজনীতিবিদ জ্যোতিবাবুর অকুণ্ঠ প্রশংসা করেও মিঠুন বলেন, “মমতাদি কিন্তু সিএম হিসেবে শেষ কথা (আলটিমেট)। এখন এই ডাকাবুকোপনাই (অ্যাগ্রেসন) বাংলার দরকার।”
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও ব্যর্থ বলতে রাজি নন রাজ্যসভার হবু তৃণমূল সাংসদ। মিঠুনের কথায়, “ওঁকে ব্যর্থ বলব না। উনি চেষ্টা করেছিলেন। হয়তো ওঁর পথটা ঠিক ছিল না।”
আর রাজনীতিতে এলেও ব্যক্তিগত সম্পর্কই যে এখনও তাঁর কাছে শেষ কথা, তা-ও এ দিন বার বার বুঝিয়ে দিয়েছেন মিঠুন। জানিয়েছেন, “ভোটাভুটিতে জিতে রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পরে প্রথম ফোন করেছিলাম রমলা বৌদিকে (প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী)। নতুন জীবনের জন্য ওঁর আশীর্বাদ চাইলাম।” অভিনেতা-জীবনের প্রথম উল্লেখযোগ্য চরিত্রে তাঁকে সুযোগ দিয়েছিলেন যিনি, মৃগয়ার পরিচালক সেই মৃণাল সেনকেও সাংসদ হওয়ার পরে ফোন করে প্রণাম জানিয়েছেন মিঠুন।
পাশাপাশি রাজ্যসভায় তৃণমূলের তারকা-প্রতিনিধি এ দিন এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কী ঘটলে সাংসদ হিসেবে থাকতে তিনি অপারগ হবেন। সেটা কী?
মিঠুন বলেছেন, “যদি কখনও বুঝি মমতার সঙ্গে আমার ভাই-বোনের সম্পর্কে আঁচ পড়েছে, দু’জনের পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালবাসায় ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, তা হলে রেকর্ড করে রাখুন, আমি পরের দিনই সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেব।” |