সাফাই এড়াতে শৌচাগার বন্ধ দূরপাল্লার লোকালে
রেলবোর্ডের স্পষ্ট নির্দেশ, মেমু বা ডিএমইউ ট্রেনে শৌচাগার রাখা যাবে না। আবার যাত্রীদের অভিজ্ঞতা, শৌচাগার না থাকায় কখনও কখনও স্বল্পদূরত্বের ট্রেনযাত্রাও অসহনীয় হয়ে ওঠে।
কতটা অসহনীয়, বুধবার নিজের দু’টো পা খুইয়ে তার প্রমাণ রেখেছেন ঘাটশিলার বৃদ্ধ হাবুল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিয়ে নীচে নেমে চলন্ত মেমু ট্রেনে ওঠার সময় দুই পা-ই কাটা যায় হাবুলবাবুর। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মেমু কিংম্বা ডিএমইউ গোত্রের দূরপাল্লার লোকাল ট্রেনগুলিতে শৌচাগার ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন যাত্রীরা। যদিও রেলের দাবি, এমন কোনও পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে না। কারণ, শৌচাগার থাকলে সেগুলির সাফাই এবং জল ভরার বিরাট হ্যাপা।
বুধবার ভোরে ঘাটশিলা থেকে টাটা-খড়্গপুর মেমু ট্রেনে চড়েছিলেন হাবুলবাবু। তিনি ট্রেনের শৌচাগার বন্ধ থাকায় খড়্গপুর স্টেশন ঢোকার খানিক আগে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েই সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন থেকে নেমেছিলেন। হঠাৎই ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় তিনি দৌড়ে উঠতে যান। কামরার হাতল ধরে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে কিছুটা গিয়ে ট্রেনের চাকায় ও লাইনের ধারের পাথরে দু’টি পা-ই হারান।
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বৃহস্পতিবার বলেন, “এ দিনই ঘটনার কথা জেনেছি। হাবুলবাবুর চিকিৎসার ভার রেল নেবে। খড়্গপুরের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ওই বৃদ্ধের কাছে যাওয়ার।”
কিন্তু প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে, মেমু (মেনলাইন ইলেকট্রিক্যাল মাল্টিপল ইউনিট) বা ডিএমইউ (ডিজেল মাল্টিপল ইউনিট) ধরনের ট্রেনগুলিতে শৌচাগার কেন থাকবে না?
এ ভাবেই বন্ধ থাকে ট্রেনের শৌচাগার। —ফাইল চিত্র।
রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, বছর ছয়-সাত আগে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের অন্তর্গত পুরুলিয়া-চান্ডিল শাখার টামনা স্টেশনে আসানসোল-টাটা মেমু ট্রেন থেকে শৌচাগারে যাওয়ার জন্য নেমেছিলেন এক তরুণী। ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় দৌড়ে উঠতে গিয়ে স্টেশনেই ট্রেনের তলায় পড়ে মৃত্যু হয়েছিল টাটানগরের বাসিন্দা ওই তরুণীর। আদ্রার বাসিন্দা, বাঁকুড়ার সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া সেই সময় ওই দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে মেমু ট্রেনগুলিতে শৌচাগারের দাবি তুলেছিলেন লোকসভায়। সংসদের রেল বিষয়ক স্থায়ী কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাসুদেববাবুর কথায়, “যে মেমু ট্রেনগুলিতে যাত্রীদের কমপক্ষে দু’ঘণ্টার বেশি যাত্রা করতে হয়, সেই সব ট্রেনে জল-সহ শৌচাগারের ব্যবস্থা করা উচিত রেলমন্ত্রকের।”
মেমু ট্রেনগুলিতে শৌচাগার না থাকায় ভোগান্তির অভিজ্ঞতা হয়েছে বহু যাত্রীরই। মেদিনীপুর শহরের সিপাহিবাজারের বাসিন্দা, দুর্গাপুরের বিএড কলেজের ছাত্রী পুজা রায় বলেন, “আমি মেদিনীপুর থেকে বাঁকুড়া হয়ে দুর্গাপুর যাই। মেদিনীপুর থেকে ১১টা ৪০ মিনিটের আদ্রাগামী মেমু ট্রেনে উঠি। ট্রেনটিতে শৌচাগার না থাকায় প্রচণ্ড সমস্যা হয়।” খড়্গপুরের বাসিন্দা সুরেশ যাদব, যিনি রোজ ব্যবসার কাজে টাটানগর যান, বলছেন, “মেমু ট্রেনগুলিতে শৌচাগার না থাকায় খুব সমস্যা হয়। তাই আমি ঝুঁকি না নিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ইস্পাত এক্সপ্রেসে যাই।”
রেল সূত্রের খবর, ’৯০-এর দশকে মেমু পরিষেবা চালু হয়। এই ট্রেনগুলিতে এক কামরা থেকে পরের কামরায় যাতায়াত করতে পারা যায়। শৌচাগারও রয়েছে, যা ইএমইউ ট্রেনে নেই। ডিএমইউ-তেও শৌচাগার ছিল।
তাহলে ওই শৌচাগারগুলি বন্ধ করে দেওয়া হল কেন?
রেলের এক কর্তা বলেন, “ট্রেনগুলিকে যে-সব প্রান্তিক স্টেশনে পাঠানো হচ্ছিল, সেখানে শৌচাগার পরিষ্কার করা বা কামরায় জল ভরার মতো পরিকাঠামো নেই। আর শৌচাগার পরিষ্কার না হলে দুর্গন্ধে যাত্রীদের পক্ষে কামরায় বসে থাকাই দায় হয়ে উঠছিল। এর পরেই রেল বোর্ড নির্দেশ দিয়ে ১৪০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের মেমু বা ডিএমইউ ট্রেনে শৌচাগার বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।” ২০০৮-’০৯ সাল থেকে মেমুর শৌচাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিছু দূরপাল্লার মেমুতে শৌচাগার থেকে যায়। অভিজ্ঞতায় রেলকর্তারা দেখেন, ওই শৌচাগার দখল করে বেআইনি মাল তোলা হচ্ছে। তখন শৌচাগারের দরজাও ঝালাই করে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক যে অভিজ্ঞতা বুধবার টাটানগর-খড়্গপুর মেমু ট্রেনে হয়েছিল হাবুল গঙ্গোপাধ্যায়ের।
রেল বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বের বেশি লোকাল ট্রেন গেলেই প্রতি দু’ঘণ্টায় একটি স্টেশনে ২০ মিনিট ট্রেন থামানো হবে। যাতে যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে নেমে জল সংগ্রহ বা শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু, ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বের আগেই কোনও যাত্রীর যে শৌচাগারের প্রয়োজন হবে না, এমনটা কে বলতে পারে? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি রেলকর্তারা। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী অবশ্য এ দিন বলেছেন, “রেলবোর্ডকে বলা হয়েছে, মেমুতে শৌচাগার কেন বন্ধ রয়েছে, এখনই তা খুলে দেওয়া সম্ভব কি না, সব কিছু অবিলম্বে পর্যালোচনা করতে। কারণ যাত্রীদের পরিষেবা দেওয়াটাই আমাদের মূল কর্তব্য।”

(তথ্য: অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, দেবমাল্য বাগচি)

আহত রেলযাত্রীর অবস্থা স্থিতিশীল
টাটা-খড়্গপুর মেমু ট্রেনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হাবুল গঙ্গোপাধ্যায়কে ভর্তি করানো হল হাওড়ার ফুলেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। হাবুলবাবুর স্ত্রী বেলাদেবী বলেন, “আমি রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর কাছে গিয়ে সব কথা বলব। যদি ট্রেনের মধ্যে বাথরুম থাকত, তা হলে ওই ঘটনা ঘটত না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.